সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, রক্ত সাগর পেরিয়ে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু ৪৫ বছর পরও প্রকৃত অর্থে জাতি বিজয়ের সুফল ভোগ করতে পারেনি। স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা আজো স্বপ্নই রয়ে গেছে। আজ প্রমাণ হয়েছে নৈতিকতা সমন্বয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন দেশ প্রেমিক নেতৃত্ব ছাড়া জাতির কাঙ্খিত কল্যাণ সম্ভব নয়। তাই মহান বিজয়কে অর্থবহ করতে ছাত্রশিবিরের প্রতিটি কর্মীকে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপি কর্মসূচি ঘোষনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোবারক হোসেনের পরিচালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারী জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম, মানবাধিকার সম্পাদক শাহ মাহফুজুল হক, দাওয়াতী কার্যক্রম সম্পাদক আনিছুর রহমান বিশ্বাস।

শিবির সভাপতি বলেন, সমসাময়িক কালে যেসব দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তার বেশির ভাগই আজ সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের। বরং এখানে উল্টো চিত্র দেখতে হচ্ছে জাতিকে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা বীরোচিত ভূমিকা রেখেছেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের বিশাল অংশ আজ অবহেলিত। তাদের উত্তরসুরিদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ রাষ্ট্রীয় শক্তি চেতনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যস্ত। মহান বিজয়ের চেতনা হওয়ার কথা ছিল এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে স্বার্থ হাসিলের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতির গৌরবের মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণতি করা হয়েছে। যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সেই মুক্তিযুদ্ধকেই ব্যবহার করেই জাতিকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। যারা আজ মুক্তিযুদ্ধের একচ্ছত্র দাবীদার তাদের দ্বারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুন্ঠিত হয়েছে বার বার। কিন্তু ছাত্রশিবির তার প্রত্যয় ভুলে যায়নি। বিজয়কে অর্থবহ করতে এবং একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরীর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে দেশ-বিদেশের চলমান ষড়যন্ত্রে নিত্য নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। সম্প্রতি দেশে জঙ্গি হামলা, সরকার দলীয় নেতাদের মদদে বি.বাড়ীয়সহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর নির্বিচারে হামলা এবং বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। যে জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের মানুষ স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছে তা আজো অর্জিত হয়নি। জনগণের মৌলিক অধিকার আজ কয়েমী স্বার্থবাদীদের ইচ্ছার কাছে জিম্মি।

তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বৈষম্য দূর, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক মুক্তি ও ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের জন্য রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আদর্শহীন রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে স্বাধীনতার এত বছর পরও তা অর্জিত হয়নি। এই রাজনৈতিক শুন্যতাকে ইসলামী মূল্যবোধের আদর্শ দিয়ে পূরণ করতে হবে। নৈতিকতা ভিত্তিক আদর্শীক নেতৃত্ব তৈরীর লক্ষ্য নিয়েই ছাত্রশিবির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রচেষ্টা আরও তীব্র করতে হবে। বিজয়ের অর্জনকে অর্থবহ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে।

উল্লেখ্য, ৪৫ তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১. বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভা ২. শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় কোরআনখানী ও দোআ মাহফিল, ৩. বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধণা, ৪. মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের মাঝে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান, ৫. দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ৬. ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প, ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ও স্বেচ্ছায় রক্তদান, ৭.অনাথ ও পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ, ৮.কুইজ, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ৯. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দেয়ালিকা প্রকাশ