রবিবার, ৩০ জুলাই ২০১৭

পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

’নব্য জেএমবি’র নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকেরা’ উল্লেখ করে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের মিথ্যাচার এবং ভিত্তিহীন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গি সংগঠনের সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে ডিবি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম যে দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমরা বিস্মিত। এটা নিকৃষ্ট মিথ্যাচার। তিনি বলেছেন শিবিরের সাবেকরা নব্য জেএমবি’র নেতৃত্ব দিচ্ছে আর প্রমাণ হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যা মামলার আসামি শরিফুল ইসলামকে শিবির নেতা বলে উল্লেখ করেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। শরিফুল ইসলাম শিবির নেতা দূরে থাক সমর্থকও নয়। তার সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। অতীতে কখনোই শরিফুল ইসলামের সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে কোন বিবৃতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আসেনি। আজ হঠাৎ করে এই ধরণের বক্তব্য যে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত, তাতে সন্দেহ নাই। মূলত পরিকল্পিতভাবে ছাত্রশিবিরকে জড়াতেই এই মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা। দেশবাসী দেখেছে যে জঙ্গি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী এমপিরা একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে। পুলিশও তাদের মতই পরস্পর বিরোধী ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। জঙ্গিবাদ নিয়ে পুলিশ ও র‌্যাব এর প্রতিযোগিতামূলক ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ড দেশবাসীর মনে নানা প্রশ্ন এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। আর গতকাল ডিবি কর্মকর্তার প্রদত্ত এই বক্তব্য বিভ্রান্তিকে আরো প্রকট করবে। আমরা এই একপেশে পুলিশ কর্মকর্তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশে জঙ্গিপনা শুরু হয়েছিল আ.লীগের আমলে এবং আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের নিকটাত্মীয় ছিল শীর্ষ জঙ্গী নেতারা।

গুলশানে হামলাকারী অন্যতম জঙ্গি রোহান আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে জেএমবি’র দুর্ধর্ষ তিন জঙ্গিকে ছিনতাই করা হয়েছিল ভালুকা থানা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান কামাল ওরফে যুবরাজের নির্দেশে। সরকারের তথাকথিত সাঁড়াশি অভিযানের সময়ও ৬৩ জেলায় একযোগে বোমাহামলার আসামী নড়াইল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গাজী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ব্যপারে নিশ্চিত করেন, নড়াইল সদর থানার ওসি সুভাস বিশ্বাস। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও জঙ্গি ফাহিমকে ছাত্রশিবিরের সাথে জড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছিলেন যা পরে মাদারীপুরের পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের মাধ্যমে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। তাছাড়াও জঙ্গিবাদী বহু ঘটনার সাথে আ.লীগের নেতাকর্মীদের সরাসরি সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু এই পুলিশ কর্মকর্তা কোন দিনই তাদের নাম মুখে আনেন নি। তিনি ডিবি’তে কর্মরত থাকা অবস্থায়ও এমন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যে দেশবাসী মনে করে, কোন পুলিশের দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে নয় রবং আ.লীগের মুখপাত্রের ভূমিকায় থেকেই তিনি এমন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। দেশবাসীর কাছে পরিস্কার যে সরকার নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে মনিরুলের মত কিছু দলীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করছে। মূলত মিথ্যাচার করে বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সরকার ও পুলিশ পরিকল্পিতভাবে উদোর পিন্ডি ভুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চাইছে। যার প্রতিফলন ঘটেছে ডিবি কর্মকর্তার এই বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের মাধ্যমে। আমরা মনে করি, দেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এই বিভ্রান্তিকর বক্তব্য।

আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ছাত্রশিবির সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কোন প্রকার জঙ্গিবাদের সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম কোন সম্পর্ক নাই। কারণ শিবির জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না বরং ঘৃণা করে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, কোন গোষ্ঠির ক্রীড়নক হয়ে দায়িত্ব ভুলে মিথ্যাচার করা পুলিশের পবিত্র দায়িত্বের প্রতি চরম প্রতারণা। জাতি পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকায় দেখতে চায়। এমন দায়িত্বহীন ভূমিকা অব্যাহত রাখলে জনগণের অনাস্থা ছাড়া তারা আর কিছুই অর্জন করতে পারবে না। যা কোনভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

নেতৃবৃন্দ আইন-শৃঙ্খলার পবিত্র দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে মিথ্যাচার না করতে ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।

সংশ্লিষ্ট