বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে ছাত্রশিবিরের শুভেচ্ছা

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, বিজয়ের ৪৬ তম বছর উদযাপন উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে জানাচ্ছি বিজয় দিবসের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজকের এই দিনে শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পেয়েছি। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও জান্নাত কামনা করছি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ থেকে ঠিক ৪৬ বছর পূর্বে এদেশের আপামর জনতা পশ্চিম পাকিস্তনী স্বৈর শাসকদের বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনে বিজয়ের রক্তিম সূর্য, প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। বিজয় দিবস বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় এক উজ্জ্বল ঘটনা। তবে আমাদের এই বিজয় কেবল একটি জাতীয় পতাকা বা স্বাধীন একটি ভূখন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং বৈষম্যহীন ইনসাফপূর্ণ এক বিশ্ব গঠনের প্রেরণা এই বিজয়। মুক্তিযুদ্বের মূলনীতি ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। সুদীর্ঘ ৪৬ বছর একটি জাতির জন্য কম সময় নয়, কিন্তু এই সুদীর্ঘ সময়ে দেশের মানুষ যে জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল সেই বাক স্বাধীনতা, সেই ভোটাধিকার, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, জন নিরাপত্তা আজও প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। প্রতিষ্ঠিত হয়নি মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের শাসকরা এখনো পর্যন্ত জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে নি। ব্যক্তি স্বার্থ ও দলীয় মতের উর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করা নেতার শাসন এখনো অধরাই রয়ে গেল। ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্রসংগঠনগুলোর দৌরাত্ম ও প্রশ্ন ফাঁস শিক্ষাখাতে কাঙ্খিত অর্জনকে বাধাগ্রস্থ করছে। দেশজুড়ে মাদকের ছড়াছড়ি তরুণ সমাজকে অন্ধাকার জগতে ঠেলে দিচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা, সর্বোপরি একটি সোনার বাংলা অর্জনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষে দেশ প্রেমিক জনতা যে সংগ্রাম করেছিল, সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। আমরা বিশ্বাস করি মত পার্থক্য, আদর্শের ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের উন্নতির স্বার্থে সবাইকে একযোগে কাজ করা কোন বিকল্প নেই। আর তা না করতে পারলে আরও ৪৬ বছর পরেও আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবো না। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন জ্ঞানচর্চার পরিবর্তে মিনিক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছিল, জাতির ভবিষ্যত কান্ডারি ছাত্রসমাজ যখন নেশার মরণছোবলে আক্রান্ত হয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে ছিল ঠিক সেই সময়ে ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে সুখী-সমৃদ্ধশালী এক আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়তে ১৯৭৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। আমরা দৃঢ় মনে বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণ ছাত্রসমাজই সমৃদ্ধ দেশ গড়ার মূল কারিগর। যদি আমরা এই ছাত্রসমাজকে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে যে লাল-সবুজের পতাকা আমরা পেয়েছি তার প্রকৃত সুখ আমরা মনুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

নেতৃবৃন্দ বলেন,যে লক্ষ্যে বহু ত্যাগের বিনিময়ে বিজয় অর্জিত হয়েছে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রশিবির নৈতিকতা ও মানবিক মূলবোধ সম্পন্ন একদল যোগ্য মানুষ জাতিকে উপহার দেওয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনৈক্য ভুলে গিয়ে স্বাধীনতা রক্ষার ইস্পাত কঠিন মন্ত্রে উজ্জীবিত ছাত্রশিবিরের এই তরুণ প্রজন্মই পারে সকল বাধা ও প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে কাঙ্খিত বাংলাদেশ অর্জন করতে। বিজয়ের এই দিবসে ছাত্রশিবির এই প্রত্যয় ছড়িয়ে দিতে চায় বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিশেষ করে ছাত্র সমাজের মাঝে। তাই আসুন দল, মত এবং ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে বাংলাদেশের সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি। ছাত্রশিবির অতিতে যেমন সুস্থ্য ধারার রাজনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে আপনাদের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে-ইনশাআল্লাহ। আসুন আমরা আওয়াজ তুলি ‘বিজয়ের সুফল চাই, বিভেদ নয় ঐক্য চাই’।

সংশ্লিষ্ট