বুধবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৮

মাসিক মানবাধিকার‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন, ডিসেম্বর - ২০১৭

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

মানবাধিকার হচ্ছে মানুষের এমন একটি সহজাত অধিকার, যা কোন মানব সন্তান জন্মলাভের সাথে সাথেই অর্জন করে। মানুষের জীবন ধারণ ও যাবতীয় বিকাশের জন্য যে অধিকার অবশ্যই প্রয়োজন তাই মানবাধিকার। মূলত এটি অবিচ্ছেদ্য ও অখণ্ডনীয় অধিকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্র তার নাগরিককে সব ধরণের অধিকার ও স্বাধীনতা প্রদানে বাধ্য। মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘ সর্বপ্রথম ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র প্রদান করে যা সারাবিশ্বে অধিকারবঞ্চিত শোষিত মানুষের এক রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।

সার্বজনীন ঘোষণার বিভিন্ন অনুচ্ছেদে মানুষের সব ধরণের অধিকারকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্পর্কিত চুক্তি ও ঘোষণা সমূহের আলোকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারকে স্বীকৃতি দিলেও এখানে এখনো মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। হত্যা, গুম-গুপ্তহত্যা, ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নারী ও শিশু নির্যাতন, সীমান্ত হত্যা, সংখ্যালঘু ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপর নির্যাতন ইত্যাদি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রকে জনগণের অধিকার সমুন্নত রাখার আহবান জানাচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিভাগ কর্তৃক দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে মাসিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে মানবাধিকারের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।

ডিসেম্বর মাসে সারা দেশে ১৩৭ জন লোক হত্যার শিকার হয়েছে। এ মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ০৪ জন মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। ১৭ টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ১৮ জন নিহত হয়| ৫৬ টি সহিংস হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৭ জন, আহত হয়েছে ১৪ জন। এছাড়াও ০৩ টি গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয়েছে ০৩ জন এবং আহত হয়েছে ০২ জন।

এ মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুম হয়েছে ০২ জন। অপহরণ হয়েছে ১১৭ জন, অপহরণের পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৩১ জনকে এবং হত্যার পর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৩২ জনের। ‎রাজনৈতিক সহিংসতার‬‬‬‬‬‬‬‬ ১৬ টি ঘটনায় নিহত হয়েছে ০৪ জন, আহত হয়েছে ১৭২ জন এবং গুলিবিদ্ধ হয়েছে ০২ জন। বিভিন্ন অভিযানের নামে ১৪ টি গ্রেফতারের ঘটনায় সাধারণ জনগণ, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীসহ ১৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ‘বিএসএফ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬’ কর্তৃক ১০ টি হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছে ০৭ জন।

নারী নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনে নিহত হয়েছে ০৬ জন নারী এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ০৭ জন নারী, পারিবারিক কলহে নিহত হয়েছে ৩৩ জন এবং আহত হয়েছে ০৪ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৮ জন নারী, ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে ০৪ জনকে এবং যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছে ০৭ জন শিশু ও নারী। এছাড়াও ৩০ টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ‎গণধর্ষণের‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ শিকার হয়েছে ০৮ জন নারী। শিশু নির্যাতনের ১৫ টি ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৩ জন এবং আহত হয়েছে ০২ জন।

সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় নির্যাতনের ০৪ টি ঘটনায় আহত হয়েছে ০৫ জন সাংবাদিক । এছাড়া ‎সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ উপর ০৪টি হামলার ঘটনা ঘটে।

ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র সংগঠনসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য বিস্তার ও দলীয় কোন্দলকে কেন্দ্র করে শিক্ষাঙ্গণে সহিংসতার‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ ০৭ টি ঘটনায় আহত হয়েছে ০৭ জন, নিহত হয়েছেন ০২ জন । এ মাসে বিভিন্ন স্থান থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ১০৮ টি লাশ উদ্ধার করেছে যার মধ্যে
০৮ টি লাশ অজ্ঞাত।

ছাত্রশি্বির কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিভাগ মনে করে, মানুষের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার ভূলুন্ঠিত হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, সংবিধান স্বীকৃত হলেও সরকার জনগণের অধিকার সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে জনগণ নিজেদেরকে নাগরিক ভাবতে ও অংশগ্রহণ করতে না পারলে সেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র গড়ে উঠে না। এজন্য সাম্য, ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রণয়ন অতীব গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে কোন দিনই মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, প্রশাসনের হেফাজতে নির্যাতন, সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশী হত্যা ও নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে হামলা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশেষ করে দেশের সাম্প্রতিক সময়ে আইন শৃঙ্খলা-বাহিনী কর্তৃক কথিত জঙ্গি দমনের অভিযানে আতঙ্কে ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে পড়েছে।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৃহত্তম জাতীয় ঐক্য তৈরির মাধ্যমে জনগনের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাবে। তাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি সন্ত্রাসী ও জঙ্গী হামলা রোধ ও জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার দাবি জানাচ্ছি। দেশের সকল সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও দেশি-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।

কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিভাগ
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

সংশ্লিষ্ট