মঙ্গলবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মুহাম্মাদ ইয়াছিন আরাফাত

৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সভাপতির শুভেচ্ছা বক্তব্য

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

শুভেচ্ছা বক্তব্য

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসসালাতু আসসালামু আলা রাসূলিহিল আমিন। ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমায়িন। শুকরিয়া সেই মহান রবের দরবারে যিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় দীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে আমাদের সম্পৃক্ত রেখেছেন এবং পাহাড়সম প্রতিকূলতার পরও এই সংগঠনকে তার সঠিক লক্ষ্যপানে অবিচল রেখেছেন। দরুদ ও সালাম প্রেরণ করছি মানবতার মহান শিক্ষক হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর ওপর, যার প্রদর্শিত পথ ধরেই আমরা এগিয়ে চলেছি। শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করছি ছাত্রশিবিরের ২৩৪ জন তরুণের জন্য যাদের রক্তে উর্বর হয়েছে বাংলার সবুজ জমিন। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনবদ্য সংযোজন। এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা, মেধাবী ছাত্রদের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ৪১ বছর পুর্ণ করছে দেশের সর্ববৃহৎ এই ছাত্রসংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই লগ্নে সম্মানিত দেশবাসী, প্রিয় ছাত্রসমাজ এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সুধী শুভাকাক্সক্ষী সকলকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।

প্রেক্ষাপট ছাড়া যেমন ইতিহাস তৈরি হয় না তেমনি প্রয়োজন ছাড়া সংগঠনেরও জন্ম হয় না। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠা ছিল সময়ের এক অনিবার্য দাবি। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশকে অনিবার্য করে তোলে। নীতিহীন ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসে যখন শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, ছাত্রসমাজ যখন আলোর পরিবর্তে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছিল, পরিকল্পিত বিপথগামী করা হচ্ছিল যুব সমাজকে, ইসলামী মূল্যবোধ-তাহজিব ও তমদ্দুনকে উৎখাত করতে খোদাদ্রোহী শক্তি বিস্তার করছিল বিষাক্ত থাবা ঠিক তখনি জন্ম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রশিবির ছাত্ররাজনীতিতে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করে। গতানুগতিক ছাত্ররাজনীতির বাইরে গিয়ে ছাত্রশিবির ছাত্রদের মেধা ও মননের বিকাশে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে নৈতিক ও গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে অল্প সময়ের ব্যবধানেই দেশের তরুণ ছাত্রদের প্রিয় কাফেলায় পরিণত হয় ছাত্রশিবির। এ ছিল যেনো ঘনঘোর অন্ধকারে হঠাৎ আলোর ঝলকানি।

ছাত্রশিবির আল্লাহর পথে সাধারন ছাত্রসমাজকে উদারভাবে আহবান করে আসছে। গড়েছে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মজবুত ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ এক সংগঠন। ছাত্রদেরকে জ্ঞান, চরিত্র ও মানবীয় গুণে সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করতে চেষ্টা করছে সর্বক্ষণ। ছাত্রদের অধিকার রক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনে সহযোগিতা এই সংগঠনের অন্যতম কাজ। যাবতীয় শোষণ, নিপীড়ন ও গোলামি থেকে মুক্তির প্রয়াস ছাত্রশিবিরকে দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠনে পরিণত করেছে। ছাত্রদের সুপ্ত প্রতিভা সন্ধানের জন্য শিবির প্রতি বছর তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতা, মেধা যাচাই পরিক্ষা, ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম, বিজ্ঞানমেলা, সাধারন জ্ঞানের আসর, বৃত্তি পরিক্ষা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করে আসছে। এ ছাড়া ছাত্রশিবির আয়োজন করে থাকে আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। এসব আয়োজন উদ্বুদ্ধ করে মেধাবী তরুণদের। বের করে আনে প্রতিভাগুলোকে যারা গড়ে তুলবে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

ছাত্রশিবিরের গঠনমূলক মেধানির্ভর কার্যক্রমে যখন ছাত্রসমাজ দলে দলে এর ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ শুরু করে তখন প্রতিষ্ঠার কিছু সময় পরেই ইসলামবিরোধী শক্তি শুরু করে শত্রুতা। হত্যা, খুন, অপপ্রচারের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের পথচলাকে স্তব্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু আদর্শের লড়াইয়ে পরাজিত অপশক্তি হামলা-মামলা, গুম-খুন নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে নিষিদ্ধ করারও অপপ্রয়াস চালায়। ইসলাম বিদ্বেষী বাতিল শক্তির হামলায় শাহাদাৎ বরণ করেন ছাত্রশিবিরে ২৩৪টি তরুণ তাজা প্রাণ। আহত ও পঙ্গু হয়ে জীবন যাপন করছে ছাত্রশিবিরের হাজার হাজার নেতাকর্মী। কিন্তু এতসব কিছুর পরও ইসলামী ছাত্রশিবির সমৃদ্ধ দেশগঠন ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম থেকে একচুল পরিমাণ পিছপা হয়নি।

ছাত্রশিবির একটি বিপ্লবী কাফেলার নাম। যেখানে অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার দেখেছে সেখানেই গর্জে উঠেছে। দেশে চলমান অনিয়ম ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অক্ষুণ রেখেছে ছাত্রশিবির। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ, জঙ্গি তৎপরতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কর্মকান্ডে বিরুদ্ধেও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন ছাত্রশিবিরকে আরো প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। যখন অধিকাংশ ছাত্রসংগঠন চাঁদাবাজি, হত্যা, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা ও প্রশ্নফাঁসের মতো অপরাধে লিপ্ত তখন ছাত্রশিবির সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রশিবিরের আছে বিশাল ইসলামী সাহিত্য ভান্ডার যা অধ্যয়নের মাধ্যমে তরুণ ছাত্রসমাজের মাঝে নবচেতনা জাগ্রত হচ্ছে দিন দিন।

নীতিহীন ঘুণেধরা এই সমাজব্যবস্থায় ছাত্রশিবির সূচনা করেছে এক ইতিবাচক পরিবর্তনের। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ইসলামের সুমহান আদর্শকে বুকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। আমাদের চোখে আজ আল কুরআন ও রাসূল সা:-এর সুন্নাহর আলোকে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। ছাত্রশিবির সুদীর্ঘ পথ চলায় লাখো পথহারা তরুণকে সমবেত করেছে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে। ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকল ছাত্র, শুভাকাঙ্ক্ষী ও দেশবাসীকে হৃদয়ের গভীর থেকে আবারো জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। সবশেষে দীপ্তকণ্ঠে বলতে চাই,

আঁধার তাড়াতে এসেছি আমরা আমাদের নেই কোন ভয়,
দ্বীন কায়েমের পথে এগিয়ে যাবো সত্যের একদিন হবেই বিজয়।

আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ,
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জিন্দাবাদ।

মুহাম্মাদ ইয়াছিন আরাফাত
কেন্দ্রীয় সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

সংশ্লিষ্ট