শনিবার, ০৪ আগস্ট ২০১৮

দাবী না মেনে উল্টো ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে সরকার চরম বাড়াবাড়ি করছে-শিবির সভাপতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবীর আন্দোলন গণদাবীতে পরিণত হয়েছে। দাবী মানার আশ্বাস দিয়েও চলমান ছাত্র আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সরকার অপপ্রচার ও হামলা করছে। দাবী মানার ঘোষণার বিপরীত চিত্র দেখছে জনগণ। দাবী না মেনে উল্টো ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে সরকার চরম বাড়াবাড়ি করছে। 

তিনি আজ বিকেলে রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির আয়োজিত পলিটেকনিক দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কলেজ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলামের পরিচালনায় দায়িত্বশীল সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, শিক্ষা সম্পাদক রাশেদুল ইসলামসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শিবির সভাপতি বলেন, শুধু নৌ মন্ত্রী নয় সরকারও সব সময় বেপরোয়া চালক শ্রমিকদের মদদ যুগিয়েছে। ফলে প্রতিদিনই সড়কে লাশের মিছিল দেখতে হচ্ছে জাতিকে। সড়ক মহাসড়ক নিয়ন্ত্রনহীনতা ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এমনকি পুলিশ, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, এমপির গাড়ী পর্যন্ত লাইসেন্স বিহীন ভাবে চলছে। যা একটি সভ্য দেশে কল্পনাও করা যায় না। এই অনিয়মের ভয়াবহ ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারন ছাত্রজনতাকে। সড়কে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল চললেও সরকারের ব্যর্থতা ও তামাশা জাতিকে ক্ষুদ্ধ করেছে। যার বহি:প্রকাশ ঘটেছে চলমান ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। তবুও সরকার এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পাশ কাটানোর জন্য নানা রকম ভয়ঙ্কর ফন্দি এটেছে। আন্দোলনে শিবির-ছাত্রদল দেখা গেছে বলে প্রচার কওে একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, আসাদগেট, ফেনী, সুনামগঞ্জ, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে। আজ ধানমন্ডি জিগাতলায় পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতৃস্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে বহু শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশবাসী দেখেছে। অথচ সরকারের মন্ত্রী এমপিরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে জানিয়ে ছিলেন। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা না করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত পুলিশ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে প্রমাণ হয় দাবী মানার ঘোষণা সরকারের ভাওতাবাজি ও প্রতারণা। সরকার যৌক্তিক দাবী উপেক্ষা করে হটকারী সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা শুধু রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলনই করছে না একই সাথে সড়কে যানবাহন চলাচল কিভাবে সুশৃঙ্খল, সুন্দর ও নিরাপদ করতে হয় তা জাতিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সরকারের উচিৎ ব্যর্থতা স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের থেকে শিক্ষা নেয়া। আজকের শিক্ষার্থীরাই যে আগামী সুন্দর ও নিরাপদ বাংলাদেশের কারিগর তা তারা প্রমাণ করেছে। তাদের দাবী গুলো বাস্তবায়ন হলে শুধু বর্তমান সড়ক পরিস্থিতিরই উন্নতি হবে না বরং আগামীর নিরাপদ বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু তাদের দাবী নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করে সংকট ঘনিভূত করা হচ্ছে। সরকার পূর্বেকার মত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ ও পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে ছাত্রদের দমানোর যে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বুমেরাং হবে। ছাত্ররা তাদের ক্লাস ও পড়াশুনার মূল্যবান সময় রাজপথে কাটিয়ে দিচ্ছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারে। সুতরাং অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের দাবী বাস্তবায়ন করে তাদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। অযথা সময় ক্ষেপন আর হামলা অব্যাহত রাখলে শিক্ষার্থীরা আরো বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।