শুক্রবার, ১৭ আগস্ট ২০১৮

ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে-শিবির সেক্রেটারি জেনারেল

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেছেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। যা শুধু মুসলমান নয় বরং সকল শ্রেণী পেশা ও ধর্মের মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর হওয়ার মাধ্যমেই ইসলামের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রকাশ পায়। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অমুসলিমদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি আজ গাজীপুরের এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির গাজীপুর মহানগরী আয়োজিত ভিন্ন ধর্মালম্বী ছাত্রদের সাথে মতবিনিময় সভা ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মহানগীর সভাপতি ইঞ্জিঃ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ফখরুল আলম সিফাতের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহানগরী অফিস সম্পাদক জহির উদ্দিন, বায়তুলমাল সম্পাদক সাকির বিন হোসাইন, শিক্ষা সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সহ অনান্য নেতৃবৃন্দ।

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অমুসলিমদের নিরাপত্তা অধিকার ও মর্যাদার বিষয়টি শুধু ধর্মীয় বা তাত্বিক আলোচ্য বিষয় নয়। বরং ইসলামে ইতিহাসে তা বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট নজীর ও নির্দেশনা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর সত্যনিষ্ঠ খালিফাগণের যুগে অমুসলিমরা ঠিক মুসলিমদের মতোই ধর্ম, সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নাগরিক সমঅধিকার ভোগ করত। তাদের জীবন, ধন-সম্পদ, ইজ্জত-আব্রু ও ধর্ম রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর ন্যস্ত ছিল। তারা অমুসলিমানদের স্ব স্ব ধর্ম পালনে স্বাধীনতা এবং স্ব স্ব সংস্কৃতির সেবার অবাধ অধিকার প্রদান করেন। সে যুগের পরও হযরত ‘উমার ইবন ‘আবদুল ‘আযীয (রা.) খালিফা নির্বাচিত হবার পর যখন ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করেন, তখন অমুসলিমদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করেন। ইসলামের ইতিহাসে এমন নজিরের অভাব নেই। কিন্তু মুসলিম শাসকরা যখনই কল্যাণময় ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে দূরে সরে গিয়েছে তখন থেকেই অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। এসব শাসকরা যখন নিজেদের বা মানব রচিত মতবাদ ও আদর্শ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে তখন শুধু অমুসলিম নয় বরং মুসলমানদের অধিকারও হরণ করেছে। তারা ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কল্যাণময় জীবন ব্যবস্থাকে খন্ড বিখন্ড করেছে। আর এ কর্ম মানুষের প্রাপ্য অধিকার থেকে যেমন বঞ্চিত করেছে তেমন মুসলমানদের মর্যাদাকে ভূলণ্ঠিত করেছে। যা এখনো অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, বর্তমানেও মুসলিম রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি অমুসলিমদের ভীতি সঞ্চারের জন্য দায়ী ইসলামী আদর্শ থেকে সরে যাওয়া মুসলিম শাসকরাই। মুসলিম শাসকরা ভ্রান্তমতবাদকে ধারণ করে সিমাহীন দূর্নীতি অবিচার জুলুম নির্যাতন ও অধিকার হরণ করে চলেছে। যার শিকার হচ্ছে সব ধর্মের মানুষই। বর্তমান সরকারের মদদে তার দলের লোকদের দ্বারা যে পরিমান সংখ্যালঘু নির্যাতন ও অধিকার হরণ হয়েছে তা আর কখনোই হয়নি বলে জানিয়েছেন সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বকারী নেতৃবৃন্দই। এরা শুধু অমুসলিমদের অধিকারই হরণ করছে না বরং অমুসলিমদের নানা সমস্যা ও সংকট নিয়ে ঘৃন্য অপরাজনীতিও করছে। অন্যদিকে যারা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা করছে তাদের নিয়ে ভীতিও ছড়াচ্ছে। ক্ষমতার লোভে এরা ইসলামী পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থাকে পরিহার করেছে।

তিনি আরো বলেন, ছাত্রশিবির সম্পর্কেও রাষ্ট্রীয় ভাবে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। অথচ ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে কোন কালে কারো দ্বারা ভিন্ন ধর্মালম্বীদের সামান্য ক্ষতি দূরে থাক কটুক্তিরও কোন নজির নেই। ধর্মের কারণে ছাত্রশিবিরের সাথে কোন ভিন্ন ধর্মী মানুষের সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছে এমন প্রমাণ দিতে পারবে না। বরং বাংলার জমিনে ছাত্রশিবিরই একমাত্র সংগঠন যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে রাত জেগে মন্দির পাহারা দিয়েছে। ছাত্রশিবির প্রতি বছর তার সাধ্যমত অস্বচ্ছল ও অদম্য শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে থাকে যাদের মধ্যে একটি অংশ থাকে অমুসলিমরা। তাছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার সময়ও সকল ধর্মের মানুষ অন্তর্ভূক্ত থাকে। আমরা মনে করি সংখ্যালঘুদের সম্মান, সার্বিক সুযোগ সুবিধা আরো বেশি পাওয়া দরকার। আর এ অধিকার পূর্ণাঙ্গ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে শুধু মাত্র ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেই। আমরা আশা করি, আমাদের অমুসলিম বন্ধুরা কোন অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিতে কান না দিয়ে ছাত্রশিবিরের পথ চলায় সহযোগির ভূমিকা পালন করবেন।