বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সকল ছাত্র সংগঠনের অংশ গ্রহণে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ১৬ টি ছাত্র সংগঠনের বিবৃতি

সকল ছাত্র সংগঠনের অংশ গ্রহণে ডাকসু নির্বাচনের দাবী জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে ১৬ টি ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্র নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে ডাকসু নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডাকসু বা ছাত্র সংসদ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে ডাকসু নির্বাচনের ঐতিহ্যে কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির উদ্যোগে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা সভায় কিছু ছাত্র সংগঠনকে আমন্ত্রন জানালেও দু:খজনক ভাবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ছাত্র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এবং ডাকসু নির্বাচনের দাবীতে সোচ্চার মূলধারার অনেক ছাত্র সংগঠনকে আমন্ত্রন জানায়নি। ঢাবি প্রশাসনের এই একপেশে ও দায়িত্বহীন আচরণে ছাত্রসমাজ হতবাক ও বিক্ষুদ্ধ। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষের এ নির্বাচনী প্রক্রিয়া অগণতান্ত্রিক ও ডাকসুর নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক। ঢাবি কর্তৃপক্ষ মূলধারার অনেক ছাত্রসংগঠনকে অবহিত করা তাদের দায়িত্ব মনে করেনি। আরো আশ্চর্যজনক বিষয় হলো বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশে কোন ইসলামী ছাত্র সংগঠনকে আমন্ত্রন জানানো হয়নি। যা এদেশের কৃষ্টি, সভ্যতা, তাহযীব তামাদ্দুনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং সংখ্যাঘরিষ্ট মানুষের চিন্তা চেতনায় আঘাতের শামিল। অথচ এসব ছাত্র সংগঠন প্রতিটি ক্যাম্পাসে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করছে, ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে সভা সেমিনার করছে। এসব ছাত্র সংগঠন গুলো ছাত্রসমাজের বেশির ভাগ অংশের প্রতিনিধিত্ব করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে সংগঠনগুলোর নিয়মতান্ত্রিক ও গঠনমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্রসমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এ সকল সংগঠনের নেতাকর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ছাত্র সমাজের স্বার্থ রক্ষার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এসব সংগঠনের নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এতগুলো ছাত্র সংগঠনকে পরিকল্পিত ভাবে উপেক্ষা করা ঢাবি ও ডাকসুর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র সংগঠন গুলোকে উপেক্ষা করে তথাকথিত পরিবেশ পরিষদের দোহাই দেয়া হচ্ছে, যে পরিষদের কোন আইনি ভিত্তিই নেই। অন্যদিকে আদালতের নির্দেশনা ও ছাত্রসমাজের দাবী অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও আবার একই সময়ে নির্বাচন নিয়ে আদালতের নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে আপিল করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ডাকসুর মত একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগেই ঢাবি কর্তৃপক্ষের এমন দ্বিমূখী, অদূরদর্শী ও পক্ষপাতমূলক আচরণের ফলে নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষের মনে রাখা উচিৎ, ডাকসু নির্বাচন বহু প্রত্যাশিত ও বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাবি কোন নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর ক্যাম্পাস নয়।

সকল শ্রেণী পেশার মানুষের প্রত্যাশার অন্যতম স্থান এ ক্যাম্পাস। এখানে সকল ছাত্র সংগঠনের সমান ভাবে রাজনীতি ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। ডাকসুর সার্বিক কার্যক্রমে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে সকল ছাত্র সংগঠনের। কিন্তু সে সুযোগ থেকে কোন ছাত্রসংগঠনকে বঞ্চিত করলে তা হবে সংবিধান বিরোধী। এ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ড অব্যাহত রাখলে ছাত্রসমাজ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠবে। হঠকারী সিদ্ধান্ত দিয়ে কখনোই প্রত্যাশিত ও সুষ্ঠু ডাকসু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুতরাং ডাকসু’র মত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ র্নিবাচনের আগে অবশ্যই ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সকল ছাত্রসংগঠন গুলোকে সমান অধিকার দিয়ে ডাকসুর সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আমরা আশা করি প্রত্যাশিত ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ দায়িত্ববোধ ও নিজেদের মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখাবেন। দলীয় মনোভাব ও হীনমন্যতার উর্দ্ধে উঠে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন। একই সাথে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে সকল ছাত্র সংগঠনের অংশ গ্রহণে ডাকসু নির্বাচনের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

বিবৃতি প্রদানকারী ছাত্র নেতৃবৃন্দ হচ্ছেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইলিয়াস আহমেদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর) সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস (একাংশ) সভাপতি মোঃ আতাউল্লাহ আল হোসাইনী, ছাত্র জমিয়ত সভাপতি তোফায়েল গাজ্জালি, ইসলামী ছাত্রসমাজ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ইসলামী ছাত্রসমাজ (একাংশ) সভাপতি মোঃ নুরুজ্জামান, ইসলামী ছাত্র খেলাফত সভাপতি খোরশেদ আলম, জাগপা ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রুবেল, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ সভাপতি সাইফুর রহমান, ছাত্র কল্যাণ পার্টি সভাপতি শেখ তামিম, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন (ইরান) সভাপতি সালমান খান বাদশা, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন (মেহেদী) সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান সুরুজ, ন্যাশনাল ছাত্র পার্টি সভাপতি সোহেল রানা, মুসলিম ছাত্র লীগ সভাপতি এস এইচ, খান আসাদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি সৈয়দ মো. মহসিন, জাতীয় ছাত্র পার্টি সভাপতি সোহেল রানা।