বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কেন্দ্রীয় সভাপতি, সেক্রেটারি জেনারেলসহ নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা এবং গণগ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের গণতন্ত্র রক্ষা ও অবিচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠা মুক্তিকামী জনতাকে দমন করতে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সারাদেশে গণগ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলার ফ্যাসিবাদী পথ বেছে নিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করতে অবৈধ সরকার চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। যা গত কয়েকদিন যাবত চলছে।

গত ১২ই সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় শফিউল আলম তার ছোট ভাই ও ছোট ভাইয়ের বন্ধুকে নিয়ে হজ্জ ফেরত মা ও বড় ভাইকে রিসিভ করতে শাহজালাল আন্তর্জাাতিক বিমান বন্দরে যান। মা ও বড় ভাইকে নিয়ে বাসার উদ্যোশ্যে গাড়ীতে উঠলে সাদা পোষাকধারী পুলিশ সদস্যরা মায়ের ভাইয়ের সামনে থেকেই শাফিউল আলমকে তার ছোট ভাই ও ছোট ভাইয়ের বন্ধু সহ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তার বাসা থেকে মো. শফিউল্লাহ ও মো. মাআজ নামে আরো দুই শিবির কর্মীকে প্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে হাজির না করে গুম করে রাখে।

মামলায় পুলিশ উল্লেখ করেছে ৫ জনকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আরো ১৬ দিন আগেই। এ বিষয়ে পরিবার ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রদান ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। প্রায় সব গণমাধ্যমে গ্রেপ্তারের পর গুমের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হয়েছে। আজ ১৬ দিন পর তাদের নামে মিথ্যা বিষ্ফোরক মামলা দিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। একই সাথে পুলিশ এই বানোয়াট মামলার সাথে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ নেতৃবৃন্দকে জড়িয়েছে। যা পুলিশের দায়িত্বহীনতার আরেকটি ঘৃন্য নজির।

এমনিতেই গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করে ১৬দিন গুম রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার চরম লঙ্ঘন। তারওপর সরকারের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সভাপতি, সেক্রেটারি জেনারেল,কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও ঢাকা মহানগরীর নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ যে কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন ও প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ দিয়েছে। মূলত ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করতেই শিবির নেতাকর্মীদের বেআইনি ভাবে ১৬দিন গুম করে রেখেছে পুলিশ। এর আগেও পুলিশ বহুবার এমন জঘন্য নাটক সাজিয়েছে। প্রতিবার গণধিক্কার পেলেও পুলিশ এই অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে।

জনগণ পুলিশের এমন দায়িত্বহীন ও সেবাদাস চরিত্রের সাথে আগে থেকেই পরিচিত। আইনের রক্ষকের পোষাক পড়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করায় পুলিশের প্রতি জনগণের নূন্যতম শ্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাসটুকুও উঠে গেছে। যা দেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিবে। আমরা পুলিশের এই নিচু মানষিকতা, দায়িত্বহীনতা ও আইনের পোষাকে বেআইনি অপকর্মের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অন্যদিকে সারাদেশে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের উপর নির্বিচারে গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে পুলিশ।

আজও কোন কারণ ছাড়াই ছাত্রশিবির সিলেট মহানগরী সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিবসহ প্রায় ১৭জন নেতাকর্মীকে অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫জন নেতাকর্মীকে। এভাবে প্রতিদিনই অন্যায় ভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পরিকল্পিত ভাবে সারাদেশে জামায়াত-শিবির ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর ধরপাকড় চালাচ্ছে সরকার। নির্বিচার গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ছাত্রদের শিক্ষা জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে। বেআইনি ও অমানবিক গ্রেপ্তার নির্যাতন চালিয়ে অবৈধ সরকার নিজেদেও দেওলিয়াত্বের বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার নামে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। গ্রেপ্তারের পরপরই আইনের তোয়াক্কা না করে নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন নিপীড়ণ চালাচ্ছে। জাতীয় সংকটকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ আওয়ামীলীগ যে আজ কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে তা তাদের কর্মকান্ডেই পরিস্কার হয়ে গেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার নির্যাতন আর মিথ্যা মামলা দিয়ে অবৈধ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। অবিলম্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল নেতাকর্মীর নামে দেয়া সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বিচার গণগ্রেপ্তার বন্ধ ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় ফ্যাসিবাদী সরকারের এই স্বৈরাচারি আচরণ দেশে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। আর সব কিছুর জন্য সরকার ও প্রশাসনকেই দায়ী থাকতে হবে।

নেতৃবৃন্দ গণগ্রেপ্তার ও গণহয়রানি বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।