সোমবার, ১৫ জুন ২০১৫

মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

মাহে রমজান উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সভাপতির নসিহত ২০১৫

শহীদি কাফেলার প্রিয় ভাইয়েরা, 

আসসালমু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
মহান আল্লাহর অপার দান মাহে রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অনবদ্য সম্মিলন ঘটেছে এ মাসেই। তাইতো আল্লাহপ্রেমী ঈমানদারদের তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জনের এটাই সর্বোত্তম সুযোগ। সূরা আল বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে সে সুরই বেজে উঠছে যা আন্দোলিত করে হৃদয়তন্ত্রিকে। হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা পূর্ণ তাকওয়া অর্জন করতে পার।

সাওম আমাদেরকে যেমন ক্ষুধায় কাতর, দুঃখী মানুষের প্রতি মমত্ববোধ জাগিয়ে তোলে তেমনি শিক্ষা দেয় ধৈর্য, একনিষ্ঠতা, ত্যাগ, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতি: প্রেরণা জোগায় শোষণ, ক্ষুধা, দরিদ্রতা ও বৈষম্যমুক্ত একটি আদর্শিক সমাজ গড়ার। আর রমজান মাসেই বদর প্রান্তরে ইসলামবিরোধী শক্তির কুপোকাত হওয়ার ইতিহাস উদ্বুদ্ধ করে সকল ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার।

সুপ্রিয় দ্বীনি ভাই
মাহে রমজান ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনবদ্য প্রশিক্ষণের মাস। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার আলোকে কুরআন শিক্ষার মাস হিসেবে মাহে রমজানকে গ্রহণ করা হয়েছে। জ্ঞানার্জন, আত্মগঠন ও আদর্শিক সমাজ বিনির্মাণের দীপ্ত শপথে উজ্জীবিত হয়ে এ মাসে নিম্নোক্ত নসিহতসমূহ পালন করার ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:

* পূর্ণ দ্বীনি অনুভূতির সাথে রমজানের সিয়াম পালন করুন।
* জামায়াতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবিহ সহ নফল ইবাদাত বেশী পরিমাণে আদায় করুন।
* ১ থেকে ১০ রমজান দাওয়াতি অভিযানে ব্যক্তিগতভাবে কমপক্ষে ৫ জন ছাত্রের কাছে আন্দোলনের দাওয়াত পৌছানো ও ২ জন সমর্থক বানানোর চেষ্টা করুন।
* দাওয়াতি অভিযানে অনৈতিকতা, নগ্নতা, অশ্লীলতা ও ইসলামবিরোধী যাবতীয় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলুন।
* এ মাসেই কমপক্ষে পুরো কুরআন একবার অর্থসহ তেলাওয়াত করার চেষ্টা করুন।
* অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ নিম্নোক্ত আয়াতসমূহ অধ্যয়ন করুন এবং মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। (সুরা বাকারা: ১৮৩-১৮৫, ১৫৩-১৫৭, সূরা মূমিনুন: ১-১১, সূরা আল হাক্কাহ: ১৯-২৯)
* সালাত ও সাওম সংক্রান্ত হাদিস অধ্যয়নের পাশাপাশি ‘‘রিয়াদুস সালেহীন’’ প্রথম খন্ড অধ্যয়ন সম্পন্ন করতে চেষ্টা করুন।
* স্ব স্ব মসজিদে নামাজের আগে ও পরে কুরআন-হাদিস ও মাসলা-মাসায়েল থেকে বিভিন্ন অংশ পেশ করার চেষ্টা করুন।
* শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের মত মহিমান্বিত রাতের কল্যাণ প্রাপ্তির আশায় সর্বোচ্চ ইবাদত করার চেষ্টা করুন।
* জুলুম নির্যাতনের মোকাবেলায় জাগতিক চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর সাহয্যের উপযুক্ত হিসেবে নিজেকে তৈরি করুন।
* বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী আলেম ওলামা, মুসলিম নির্যাতন ও হত্যা বন্ধে সোচ্চার হউন।

সুপ্রিয় ভাইয়েরা
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও আত্মসমালোচনার সাথে সাওম পালন করবে আল্লাহ তায়ালা তার বিগত দিনের সকল গুণাহ মাফ করে দেবেন।’’ আবার তিনি বলেছেন, ‘‘ যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল কিন্তু তার জীবনের গুনাহ মাফ করে নিতে পারল না তার জন্য ধ্বংস।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

সুতরাং জীবন বিনির্মাণের সৌভাগ্যের সোপান হিসেবে গ্রহণ করতে হবে মাহে রমাজানকে। নিশ্চিত গুনাহ মাফের মাধ্যম আর তাকওয়ার মাপকাঠিতে বিজয়ী হিসেবে নিজেকে গঠন করতে হবে নাজাতের এ মাসে। আর জীবনের শেষ রমজান যদি এটিই হয় আমাদের কারো জন্য, তাই যেন হয় পরকালীন মুক্তির অন্যতম ওয়াসিলা।

প্রিয় ভাইয়েরা
রোজাদারদের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মিশক আম্বরের চেয়ে প্রিয়। আর জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা আছে যা শুধুমাত্র রোজাদারদের জন্য নির্দিষ্ট। এ মাসে শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলিত, জান্নাতের দরজা খুলে দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজা। এ মাসের একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের একটি ফরজ সমমর্য়াদার, আর একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের ৭০টি ফরজ সমমর্যাদার। শুধু কি তাই? ‘‘ একটা রোজার বিনিময়ে রোজাদারের চেহারাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সত্তর বছরের দূরত্ব।’’ (বুখারী ও মুসলিম) কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি কেন রোজার এই মর্যাদা? কেনইবা এই মাস এত শ্রেষ্ঠ! কারণ একটাই- এ মাসে নাজিল হয়েছে আল কুরআন, যা সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী। আল কুরআনকে ধারণ করেছে বলেই এ মাস এত সম্মানিত। এই কারণে লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।

সুতরাং আমরা যদি ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এই কুরআনকে ধারণ করতে পারি, নিশ্চিয়ই আমাদের মর্যাদা বাড়বে অনেকখানি। সম্ভাবনা বাড়বে সৌভাগ্যবানদের কাতারে শামিল হওয়ার। এটা শুধু নীতি কথাই নয়, আইয়ামে জাহেলিযাতে বর্বর মানুষগুলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সোনার মানুষে পরিণত হয়েছে এই কিতাবের স্নিগ্ধ আলোকচ্ছটায়। আমরাও চাই আ্মাদের বাংলাদেশকে কুরআনের আলোকে গড়তে। তাই কুরআনের আলোকে সমাজ বিনির্মাণের প্রচেষ্টাই হোক মাহে রমজানের মূল ভিশন।

কুরআনের কারণে যারা বন্দী ছিলেন শিআবে আবি তালিবে, শহীদ হয়েছিলেন আমির হামজা, খুবাইব, খাব্বার (রা.) সহ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব নবী ও সাহাবীরা - তাদেরই পথ অনুষরণ করতে গিয়ে আজ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে ফিলিস্তিন , চেচনিয়া, বসনিয়া, কাশ্মির, আরাকানে নির্বিচারে শহীদ করা কুরআনপ্রেমিক কর্মীদেরকে । শুধু তাই নয়, ৯০ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশের করআনের কথা বলতে গিয়ে এ বছর নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে ত্রিশ জন শিবির নেতা-কর্মী সহ দুই শতাধিক যুবক,নারী,শিশু,বৃদ্ধ সহ তৌহিদী জনতাকে। বুলেটের আঘাতে ঝাঝরা করে দেয়া হাজার হাজার প্রতিবাদী নারী-পুরুষের দেহকে। অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে বিনা চিকিৎসায় কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে অসংখ্য কুরআনী-আন্দোলনের নেতাকর্মীকে।

তারা থাকলে হয়তো তাদেরকে পাওয়া যেত ইফতার, সেহেরি, তারাবিহ, ইতেকাফ, তাহাজ্জুদ নামাজ আর দাওয়াতি কাজে ব্যস্ত একজন রোজাদার হিসেবে। শাহাদাতের রক্তভেজা এই জমিনে আজ আমরা যারা কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে চলছি, আমাদের অবশ্যই ত্যাগ, কুরবানি ও তাকওয়ার মানদন্ডে উত্তীর্ণ হয়ে আঞ্জাম দিতে হবে শহীদ ভাইদের রেখে যাওয়া কঠিন দায়িত্ব। দীপ্ত শপথ নিতে হবে কুরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে। প্রস্তুতি নিতে হবে ইসলামের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করার জন্য। আর ব্যক্তিগত জীবনে পরিস্ফুট করতে হবে ধৈর্য, তাকওয়া ও ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের কোন চক্রন্তই কাজে আসবে না। কুরআনের বাণী-‘‘আর যদি তোমরা সবর করো, তাকওয়া অবলম্বন করো তাহলে তাদের কোন চক্রান্তই তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না’’ (সূরা আলে ইমরান: ১২০)

আমরা প্রত্যাশা করছি আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের দেবেন প্রকৃত রোজাদারের মর্যাদা। জান্নাতে রাখবেন শহীদদের সাথে আর আমরা হবো সবর ও তাকওয়া পথের অগ্রপথিক।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কবুল করুন । আমিন।

সংশ্লিষ্ট