বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০১৬

সরকার পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রশিবিরকে জঙ্গিবাদের সাথে জড়ানোর চেষ্টা করছে

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান বলেছেন, দেশ থেকে জঙ্গিবাদকে নির্মূলের বদলে তা নিয়ে অপরাজনীতি করে যাচ্ছে সরকার। জনগণকে বিভ্রান্ত এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে সরকার পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রশিবিরকে জঙ্গিবাদের সাথে জড়ানোর চেষ্টা করছে।

তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের ষান্মাসিক সেক্রেটারীয়েট বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সেক্রেটারী জেনারেল ইয়াছিন আরাফাতের পরিচালনায় এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারীয়েট সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শিবির সভাপতি বলেন, জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে, জাতীয় নিরাপত্তার মত স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে আওয়ামী সরকার ঘৃন্য রাজনীতি শুরু করেছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে সামান্য কটুক্তি করলে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানে গ্রেপ্তার করা হয় সেখানে জঙ্গি দমনে সরকারের রহস্যময় ব্যর্থতা জাতির কাছে এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই সবাইকে বিভ্রান্ত করতে ছাত্রশিবিরকে টার্গেট করেছে সরকার। কিন্তু ইতিমধ্যে সরকার, পুলিশ ও কিছু গণমাধ্যমের ষড়যন্ত্র জনগণের সামনে ধরা পড়ে গেছে। পাবনায় ফাদার লুক হত্যা চেষ্টা মামলায় নিরপরাধ শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন ও তাদেরকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালায় পুলিশ। কিন্তু স্বয়ং ফাদার লুক তার হত্যা চেষ্টার সাথে শিবির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে। সম্প্রতি মাদারীপুরে জনগণের হাতে নাতে ধরা পড়া একমাত্র জঙ্গি ফাহিমকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শিবির কর্মী উল্লেখ করে জাতির সামনে মিথ্যাচার করে। কিন্তু ফাহিমকে মাদারীপুর পুলিশ সুপার সারওয়ার হোসেন হিজবুত তাহরীর কর্মী বলে উল্লেখ করে জাতির সামনে প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচারকে প্রমাণ করে দিয়েছেন। পুলিশ বলেছিল ঝিনাইদহে জঙ্গি নেই। অথচ এখন এটা প্রমাণ হয়েছে যে ঝিনাইদহে জঙ্গি নিবরাসসহ অন্যান্য জঙ্গিদের আস্তানা ছিল এবং তারাই সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে বলে দেশের সচেতন মহল মনে করে। অথচ ঝিনাইদহে এই অজুহাতে একে একে ছাত্রশিবিরের মেধাবী ছাত্র নেতাদেরকে গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার ও নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চালানো হয়েছে। যারা মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাদের রাতের আধাঁরে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। একই ভাবে জুলুম নির্যাতন চলছে দেশের অন্যান্য স্থানেও। আর সরকার ও পুলিশের যৌথ অমানবিক কাজকে আড়াল করতে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে সিন্ডিকেট অপপ্রচার করে যাচ্ছে কিছু গণমাধ্যম।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের সাথে কোন দলকে জড়াতে হলে আ.লীগকেই জড়াতে হবে। কেনান জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল আ.লীগের আমলে। শায়খ আব্দুর রহমানসহ জঙ্গিদের শীর্ষ নেতারা আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতার নিকট আত্বীয়। অন্যদিকে সম্প্রতি গুলশানে হামলাকারী অন্যতম জঙ্গি ইমতিয়াজ ঢাকা মহানগর আ.লীগ নেতার ছেলে। কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানা “জাহাজ বিলডিং” এর মালিক ৮ নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেখানে ৯ জঙ্গির একজনও আ.লীগ নেতার ছেলে। সম্প্রতি সরকারের তথাকথিত সাঁড়াশি অভিযানের সময়ও ৬৩ জেলায় একযোগে বোমাহামলার আসামী নড়াইল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গাজী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ব্যপারে নিশ্চিত করেন, নড়াইল সদর থানার ওসি সুভাস বিশ্বাস। এর পরও আমরা এই ভয়াবহ সমস্যাকে রাজনৈতিক রুপ দিতে আগ্রহী নই।

তিনি আরো বলেন, সরকারের বুঝা উচিৎ, জঙ্গিবাদ কোন দল বা ব্যক্তির সমস্যা নয় বরং তা জাতীয় নিরাপত্তার সমস্যা। এসময় দলমত ভূলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এ সমস্যা মোকাবেলা করা উচিৎ। জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে রাজনৈতিক তামাশা দেশ-বিদেশের কেউ গ্রহণ করেনি। দেশের মানুষ সরকারের এই অপরাজনীতিকে ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করছে। ইটালীর গণমাধ্যমের উদ্বৃতি দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনেও চলমান জঙ্গী উত্থানের জন্য দোষারোপের রাজনীতিকেই দায়ী করা হয়েছে। আমরা বলব, ছাত্রশিবিরকে নিয়ে এই ষড়যন্ত্র সফল হবেনা। কেননা ছাত্রশিবির এদেশে হঠাৎ গজিয়ে উঠা কোন সংগঠন নয়। ছাত্রশিবিরের সকল কার্যক্রম ছাত্রজনতাকে সাথে নিয়ে সম্পাদিত হয়। ছাত্রশিবির তার দ্বীর্ঘ পথ চলায় সর্ব অবস্থায় ধৈর্য ও শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে চলেছে। উগ্রবাদের সাথে সামান্যতম সম্পৃক্ততা কেউ কোন দিন দেখেনি। যার স্বাক্ষী এদেশের আপামর ছাত্রজনতা। সুতরাং ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এই সমস্যার সমাধান হবেনা। বরং এর ফলে আসল জঙ্গিদের উৎসাহিত করা হবে। আমরা সেক্রেটারীয়েট বৈঠক থেকে সরকারকে আহবান রেখে বলতে চাই, দেশের প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষ আজ শঙ্কিত। এ দেশ কোন দলের নয় বরং সবার। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই সমস্যা সমাধান করুন।

সংশ্লিষ্ট