বুধবার, ০৫ এপ্রিল ২০১৭

ইসলামী রাজনীতি বন্ধের ব্যর্থ প্রচেষ্টা!

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচার করতে অনেক বীর মুজাহিদ আগমন করেছিলেন। যারা মানুষকে পৌত্তলিকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে এক আল্লাহর দাসত্ব পালনের জন্য আহবান জানান। তাদের পবিত্রতম আদর্শকে বুকে ধারণ করে এ অঞ্চলে মুসলমানদের প্রাধান্য বিস্তার লাভ করে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও মক্তবের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত হন। তারা সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় ব্রত হন। হাজী শরীয়তুল্লাহ, মীর নিসার আলী তিতুমীর ব্রিটিশ বেনিয়াদের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। অপসংস্কৃতি আর অন্ধ সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন হজরত শাহজালাল, শাহ পরান, খানজাহান আলী (রহ) প্রমুখ। স্বাধীন বাংলা গঠনের পর এতদঞ্চলের মানুষের চিন্তা-চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র করে মীর জাফর গোষ্ঠী নবাব সিরাজ উদ্দৌলাহকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ব্রিটিশ বেনিয়াদের পদলেহনকারী মীরজাফরকেও ব্রিটিশরা বিশ্বাস করল না। এবার স্বাধীন বাংলার শাসক হলেন দেশপ্রেমিক মীর কাশিম। তিনিও ব্রিটিশদের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করায় যুদ্ধে প্রাণ হারাতে হয়।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হলো, পাকিস্তানের জন্ম হলো। ভাষার অধিকারসহ মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে হলো এখানকার মানুষদেরকে ১৯৫২ ও ১৯৭১ সালে। জন্ম লাভ করল স্বাধীন বাংলাদেশ। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের ভাবধারায় সেকুলার সংবিধান প্রণয়ন করলেও এদেশের জনসাধারণ সেকুলার রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে ছিল না। এর ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা-বিশ্বাস সংস্থাপন হলো। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম হবার কারণে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে স্বীকৃতি দেয়া হলো। এ সরকার (আওয়ামী মহাজোট) আসার পর থেকে গায়ের জ্বালা বেড়ে যায়। তারা সংবিধানে লেখা আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়টি বাতিল করে। দেশের আলেম ওলামারা সরকারের এহেন পদক্ষেপের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলামের প্রাধান্যের মাধ্যমে এখানে কখনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়ে যায়নি। এখানে যার যার ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা বিদ্যমান। বরং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাদের দলীয় লোকদের হাতেই অন্য ধর্মাবলম্বী জনসাধারণের সম্পদ লুণ্ঠন, মন্দির ও আশ্রমে হামলা হয়। নাস্তিক্যবাদী শাহারিয়ার কবীর ও মুনতাসির মামুনরা সংবিধানের ওপর বিসমিল্লাহ লেখা থাকুক তাও সহ্য করতে পারছে না। তারা দেশে ধর্মভিত্তিক দল থাকুক তাও পছন্দ করছে না। মুসলমানদের মুখে সালাম বিনিময়, আল্লাহু আকবার, ইন্নালিল্লাহ, আল্লাহ-হাফেজসহ রাসূল (সা) এর শিখানো কল্যাণকর প্রার্থনাসমূহও তারা সহ্য করতে পারছে না। এ কারণে শাহ আলম নুর এর দেশ টিভিসহ বেশ কিছু টিভিতে নাটক সিরিয়ালে ইসলামকে কটাক্ষ করা হচ্ছে। দাড়ি টুপি ওয়ালাদেরকে ভিলেন চরিত্রের পার্টে অভিনয় করানো হচ্ছে। অন্য টিভি চ্যানেলগুলো সালাম দিয়ে তাদের সংবাদ উপস্থাপন করলেও এ সকল টিভিগুলো সবাইকে শুভেচ্ছা দিয়ে শুরু করে। ধর্মনিরপেক্ষ হতে হতে শেষ পর্যন্ত ছেলেমেয়ের নামের ভেতর ইসলামী ভাবধারার পরিবর্তে অনৈসলামিক নামগুলো স্থান পাচ্ছে। চিন্তা-চেতনায় ধরেছে বিকৃতি। এর বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই।’

ধর্মহীন করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ধর্ম শিক্ষা বাতিল করা হচ্ছে। এদেশের বিজ্ঞ আলেমদের ব্যাপারে এসকল পাঠ্যপুস্তকে অসত্য বিষোদগার করা হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষার নামে মাত্র খোলস পড়িয়ে প্রকৃত দ্বীনি শিক্ষাকেও কাটছাঁট করা হচ্ছে। এভাবে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত ধারণা থেকে ধীরে ধীরে মুসলমানদেরকে দূরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভারতের মতো একটি বৃহত্তর রাষ্ট্রে অনেকগুলো ধর্মভিত্তিক দল আছে। কিন্তু সেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠছে না; এখানে মুসলমান নামক শয়তানরা ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠাচ্ছে। যারা ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে সবর অবস্থানে তারা ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার দলগুলো যখন ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ, নৌকার মালিক তুই আল্লাহ’ বলে ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে যেভাবে মুসলমানদেরকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান তখন তারা নীরব থাকেন। মূলত বিশেষ কোন গোষ্ঠীকে ঘায়েল করাই হচ্ছে উনাদের মূল লক্ষ্য। তারা ধরে নিয়েছে যে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় আসলে তাদের ভ-ামি জাতির সামনে ফাঁস হয়ে যাবে। তারা এমন সাঙ্ঘাতিক যে নিজের অস্তিত্ব ও বিশ্বাস করে না- নিজের সৃষ্টি বানর হতে, স্রষ্টা বলতে কোন অস্তিত্ব এ জগতে নেই; ভাল মন্দ জাজ করার মত পরকালে কেউ নেই। সুতরাং, ‘দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও দাও ফুর্তি কর’। দুনিয়ার সৃষ্টি হঠাৎ কোন দুর্ঘটনার ফসল। কেউ বুঝে বিরোধিতা করে কেউ বা অজ্ঞতাবশত।

ইসলামের পায়বন্দী যারা করেন তারা যখন ন্যায়নীতির কথা বলেন তখন সমস্যাটা শুরু। তখন জমিনে বিশৃঙ্খলা করাই তাদের কাজ। সরকারের কর্তাব্যক্তিগণ অল্পসংখ্যক ছিন্নমূল বুদ্ধিজীবীকে পৃষ্ঠপোষকতা করে নিজেদেরকে তথাকথিত প্রগতির ধারক বানিয়ে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার বীজ মজবুতভাবে বপন করতে চায়। আসলে এসব ব্যর্থ প্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ ইসলাম এদেশের মানুষের হৃদয়ের গভীরে গ্রথিত। মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনিতে মুসলমানরা জেগে ওঠে, লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে মুসলমানরা শিক্ষা নিচ্ছে- দ্বীনি তালিম, স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির কর্তব্য, পরোপকারিতা ও দেশপ্রেম। ইসলাম ও মানবতার বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোন ষড়যন্ত্র এ অঞ্চলের মানুষ সহ্য করেনি। কিন্তু ষড়যন্ত্রের কবলে ফেলে মুসলমানদের ভেতর দ্বিধা, সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছে নিরন্তর গতিতে। ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসীদেরকে কোন সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ঘরের ভেতরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করলে বলা হয় গোপন মিটিং হচ্ছে। কুরআন হাদিসসহ ইসলামী বই পেলে বলা হচ্ছে জিহাদী বই পাওয়া গেছে। অস্ত্রপাতি সামনে সাজিয়ে রেখে বলা হচ্ছে জঙ্গি।

কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা হলো, দোষারোপ করা হলো ইসলামপন্থীদের। অথচ ভিকটিম বৌদ্ধরা বলেছেন আমরা জানি কারা এ ঘটনা করেছে, আমাদের সামনে অপরাধীরা ঘুরাফেরা করছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। মূলত মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এদেশের এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার মাধ্যমে বিশ্বসম্প্রদায়ের নিকট মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিহ্নত করে ইসলামের সুমহান আদর্শের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এটি একটি পরিকল্পনার অংশ মাত্র।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে গেলে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে বিশ্বজিৎ নামে এক টেইলার্স কর্মীকে নিশৃংসভাবে অভিনব কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করল সেকুলার আর প্রগতির ধারক ছাত্রলীগ কর্মীরা। সারা বিশ্ব মিডিয়ার মাধ্যমে এহেন জঘন্য হত্যাকা- প্রত্যক্ষ করেছে। মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে খুনিরা ছাত্রলীগ কর্মী। কিন্তু সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীর, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ চৌধুরীসহ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী খুনিদের আত্মীয়-স্বজনের জামায়াত সংশ্লিষ্টতার দায়ে খুনিদেরকে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি দলের লোক হিসেবে ব্যাখ্যা করতেও লজ্জাবোধ করেননি। মূল বিষয় হলো ইসলামের প্রতি মানুষের খারাপ ধারণা তৈরি করা।

সেকুলার ধারার কর্ণধার জাফর ইকবাল কিছুদিন আগে প্রথম আলো পত্রিকায় তরুণ সমাজকে নসিহত করে প্রবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তারুণ্যের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এ বয়সে ফুর্তি করবে, নাচবে, গাইবে ইত্যাদি। কেন ছাত্ররাশিবির করে, অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে কুরআন-হাদিস পড়ে, নামাজ- রোজা করে? তরুণদের মধ্যে ইসলামের চর্চা এই বুদ্ধিজীবীর নিকট অসহ্য। বিভিন্ন তথ্যমতেও দেখা গেছে তিনি নিজেও ছাত্রীদের সাথে অশ্লীলভাবে নিত্যরত, এমনকি তার মেয়েকেও বিভিন্ন যুবকের সাথে অসামাজিকভাবে জীবন-যাপন করতে দেখা গেছে। তার মানে তিনি যেভাবে জীবন-যাপন করেন, সমাজব্যবস্থাটাকেও সেভাবে পরিবর্তন করতে তিনি একনিষ্ঠভাবে বদ্ধপরিকর।ওনাকে বলতে ইচ্ছে করে আপনাদের কুরুচিপূর্ণ অন্তঃর্ঘাত মূলক প্রলোভন বারবার জাতির আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে উন্নীত করেছে। এখন মুক্তি চায় মানুষ। দিকভ্রান্ত যুবকরাও আপনাদের চমকপ্রদ পুঁতিগন্ধময় জৌলসের ভ্রান্তির জট পরিষ্কারভাবে উন্তোচন করতে শুরু করেছে।

কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী ভ্রান্তভাবে মুসলমান, ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও শাহাদাত নিয়ে ভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মুসলমানদের মগজ ধোলাই করতে চান। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যখন বাতিলের আঘাতে মৃত্যুবরণ করে তাদেরকে নাকি শহীদ বলা যাবে না। তারা বলে শাহাদাতের কথা বলে যুবকদেরকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত হওয়া মানে হচ্ছে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার আফসোস হয় এসকল বুদ্ধিজীবীর নামে শয়তানের প্রেতাত্মাদের জন্য, যারা শাহাদাত কি, ইসলাম ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে না জেনে ব্যাখ্যা দিতে চায়, তাদের অবস্থা হচ্ছে এমন যে- যারা ডাক্তারি না জেনে ডাক্তারি করতে চায় তাদের মতো। কুরআন-হাদিস না বুঝে, কুরআন-হাদিস সম্পর্কে অপব্যাখ্যা দিতেও তারা সিদ্ধহস্ত। যে ব্যক্তি যে সম্পর্কে জানে না সে বিষয়ে সে ব্যক্তির চুপ থাকাই ভালো। একবার খোদ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের লালদিঘিতে গিয়ে বলেন যে বুখারী শরীফে আছে ‘লাকুম দ্বি-নুকুম ওয়ালিয়্যাদ্বীন’। এ বক্তব্যে বোঝা গেছে ওনার জ্ঞানের পারঙ্গমতা।

২৩ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক সমাবেশে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সরকারের প্রতি আবদার করে বললেন সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিয়ে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য! কত বড় দুঃসাহস!! আমি এ সকল কুলাঙ্গারদের ফাঁসি চাই। আওয়ামী লীগ সরকার তাদেরকে হরতাল করতে সহযোগিতা করে সমান অপরাধ করেছে। কারণ তারা এ দেশের মানুষের চিন্তা-চেতনা বিরোধী মতের সমর্থন দিয়েছে। ডিসেম্বরের ১৮ তারিখে হরতালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাসদ, সিপিবি ও গণতান্ত্রিক বামমোর্চা। হরতালের ইস্যু হলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। রাজধানীর বেশ কতেক জায়গায় হরতালের সমর্থনে পিকআপ ভ্যানে মাইকিং করে হরতালের প্রচার করা হয়। বিষয়টা খুবই হাস্যকর। এক দিকে সরকারের আওয়ামী নেতৃত্বধীন মহাজোটের শরিক বাসদ ও সিপিবি আর হরতালের প্রচার করতে গিয়ে নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো বাধা। এতে করে আর কাউকে বুঝতে অসুবিধা হলো না সরকারের পক্ষ থেকে বাসদ, সিপিবি রাম-বামরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবিতে হরতাল ডেকেছে। হরতাল করতে গেলে, এর পূর্বে প্রচার করতে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসে না সম্ভবত বাংলাদেশে এই প্রথম। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস এ ধরনের অযৌক্তিক আর অবাস্তব দাবি বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে গাড়ি না নামানোর ব্যাপারে যানবাহন মালিকদের প্রতি প্রসাশনের কড়া নির্দেশ ছিল। সে দিন বিআরটিসি বাসসহ সরকারি গাড়িসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ক্লাস-পরীক্ষা কৌশলে বন্ধ রেখে জাতি রাম-বামদের সাথে আছে তারা সেটি প্রমাণ করতে চেয়েছে। বিসিএস পরীক্ষা হরতালের ঘোষণা দেয়ার পরই পিছিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে কি বলা চলে না যে সরকারই হরতাল আয়োজন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার নাটক করছে?

রাম-বাম হরতাল আহবানকারীরা রাজপথে নির্বিঘ্নে গানের আসর বসায়। পুলিশ এ সকল আসর আর হরতাল সফল করতে ব্যারিকেড দিয়ে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায়। হরতালের চিত্রগুলোতে দেখা যায় যে পুলিশের সামনে পিকেটাররা রিকসা চলতে বাধা দিচ্ছে। রিকসাচালক হাত জোর করে পুলিশের সাহায্য চাইলেন, কিন্তুু হাস্যকর ভঙ্গিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে পুলিশ। আসলে ওনাদের মিশন রাইটিস্টদের দমন আর ল্যাপটিস্টদের তোষণ করা। রাম-বামদের এমন উদ্যতপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদে এ দেশের আলেম ওলামারা ২০ ডিসেম্বর হরতাল আহবান করেন। দেশের মানুষ প্রশাসনের বাধা সত্ত্বেও ঈমানের দাবি থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করে।

দিন কয়েক আগে মগবাজারে কিছু ছাত্রীকে পুলিশ আটক করে। অভিযোগ ওঠে ছাত্রীদেরকে মহিলা পুলিশ আটক না করে পুরুষ পুলিশ আটক করে। অন্তঃসত্ত্বা এক ছাত্রীকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে উঠানোর অভিযোগও ওঠে। মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন অনেক মা-বোনের ইজ্জত-আবরুর বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সরকারকে এখনকি আর ইজ্জত-আবরু রক্ষা করতে হবে না? এটি কি সরকারের দায়িত্ব নয়? আটককৃত ছাত্রীদের সম্পর্কে পুলিশের বক্তব্য হলো তারা নাশকতার পরিকল্পনা করছে। নাশকতায় উদ্ধারকৃত গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম হলো ইসলামী বই ও কম্পিউটার। বোরখা পরা আর দ্বীন ইসলামের কথা বলা ও চলা বর্তমান সময়ে নাশকতা! অথচ রাম-বামপন্থী সংগঠনের ছাত্রীদেরকে তাদের নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য সাপ্লাইয়ের অভিযোগ পত্রপত্রিকায় বারবার প্রকাশিত হয়েছে। জাতির ভবিষ্যৎদেরকে যারা বিপথে ঠেলে দিচ্ছে তাদের ব্যাপারে সরকারের মাথাব্যথা আছে? এসব আপত্তিকর জট জাতির সামনে খুলতে শুরু করেছে। মানুষের কাছে এসব আর্টিফিসিয়ালিটি সময়ের ব্যবধানে আরো পরিষ্কার হবে। এসব রঙ ঢঙ মাকাল ফল বৈ আর কি হতে পারে? দেশে ইসলামী রাজনীতি বন্ধ করলে সঙ্ঘাত বাড়বে। আর এমন হটকারী সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেবে না মুসলমানেরা। রাম-বামদের রাজনীতি করার ইচ্ছে থাকলে এ সকল অবাস্তব দাবি থেকে ফিরে আসতে হবে। নচেৎ মুসলমানদের রোষানলে পড়ে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পরে। আর যারা তাদেরকে সমর্থন করবে তাদেরকেও জাতি প্রত্যাখ্যান করবে।

লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির 

সংশ্লিষ্ট