রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

যুগান্তরে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

দৈনিক যুগান্তরে ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ও জামায়াত জড়িত!’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারী জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, জঙ্গিবাদের মত একটি জাতিয় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে যুগান্তরের এই নীতিহীন ভূমিকা লজ্জাজনক। মূলত গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই প্রতিবেদক ছাত্রশিবিরকে টার্গেট করে পরিকল্পিত ভাবে মিথ্যাচার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নব্য জেএমবি’র কমান্ডাররা শিবিরের ক্যাডার ছিল, গুলশানে হামলার কমান্ডার মারজান, রায়হান, জঙ্গি মাহফুজ শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু তারা যে ছাত্রশিবিরের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তার কোন গ্রহণ যোগ্য তথ্য দিতে পারেননি প্রতিবেদক। মারজান ছাত্রশিবিরের কেউ না তা উল্লেখ করে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে একাধিকবার বিবৃতি দেয়া হয়েছে। একই সাথে রায়হান, মাহফুজ বা জঙ্গিবাদের সাথেও ছাত্রশিবিরের কোন সম্পর্ক নেই। বরং আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতার ভগ্নিপতি জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান থেকে শুরু করে গুলশান হামলায় অংশ নেয়া আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতার ছেলেসহ প্রতিটি জঙ্গিবাদী ঘটনার সাথে আ.লীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ হয়েছে। অন্যদিকে মাদারীপুরে জঙ্গি সন্দেহে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়া ফয়জুল্লাহ ফাহিমসহ একাধিক জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর থলের বিড়াল বেরিয়ে যাওয়ার ভয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা, গুলশান হামলায় সশস্ত্র ভাবে অংশ নেয়া জঙ্গিকে ছাড় দেয়াসহ বিভিন্ন ভাবে জঙ্গিবাদের সাথে আওয়ামী রাজনীতির সম্পৃক্ততার বিষয়টি দেশবাসীর সামনে পরিস্কার হয়ে গেছে।

সম্প্রতি সরকারের তথাকথিত সাঁড়াশি অভিযানের সময় গত ১২ই জুন ২০০৫ সালে ৬৩ জেলায় একযোগে বোমাহামলার আসামী নড়াইল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গাজী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে নিশ্চিত করেন, নড়াইল সদর থানার ওসি সুভাস বিশ্বাস। ময়মনসিংহে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মূল হোতা ছিল যুবলীগ নেতা। ব্লগার নিলয় হত্যাকারী হিসেবে নাম এসেছে মহাজোট সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর ভাতিজা নাহিনের। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলাকারী রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে। আইএস এর ভিডিওতে আবারও বাংলাদেশে হামলার হুমকিদাতা সাফি আওয়ামী লীগের নেতা তথাকথিত জনতার মঞ্চের অন্যতম নায়ক সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ও নির্বাচন কমিশনার সফিউর রহমানের ছেলে। শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দানে হামলাকারী হিসেবে নাম এসেছে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুলের। সিঙ্গাপুরে জঙ্গিবাদী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি কায়েস চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতা নূরুল ইসলামের পুত্র। রাজশাহীতে জঙ্গি কানেকশনের অভিযোগে অভিযুক্ত মুনতাসিরুল ইসলাম অনিন্দ্য রাজশাহী মহানগরীর সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগের নেতা খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো ভাই। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানাখ্যাত বাড়ির মালিক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার উদ্দিন। এছাড়া সম্প্রতি ময়মনসিংহে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃত ছয় জনের মধ্যে আল আমিন ধোবাউড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা। এই সব ঘটনার দ্বারাই এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আওয়ামী লীগই দেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারের বড় প্লাটফর্ম। কিন্তু প্রতিবেদক এমন সত্য বিষয় গুলোকে চাতুরতার সাথে এড়িয়ে গিয়ে কাল্পনিক সুত্রের বরাত দিয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নিজের মনগড়া বক্তব্য চালিয়ে দিয়েছেন। যা নীতিহীন সাংবাদিকতার নিৃকষ্ট দৃষ্টান্ত। সাংবাদিকতার পবিত্র পেশাকে অপব্যবহার করার এই প্রচেষ্টাকে আমরা ঘৃনার সাথে প্রত্যাখ্যান করছি। সরকার বরাবরই জঙ্গিবাদ নিয়ে অপরাজনীতি করেছে। আর এই বানোয়াট প্রতিবেদনের সাথে সেই অপরাজনীতির যোগসূত্র রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

নেতৃবৃন্দ বলেন, জঙ্গিবাদের মত বিষয়ের সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এর আগেও যুগান্তরের মত কিছু গণমাধ্যম অপপ্রচার চালিয়েছে। কিন্তু এর সাথে ছাত্রশিবিরের কোন সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে আমরা বহুবার চ্যালেঞ্জ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সেই চ্যালেঞ্জের সঠিক জবাব দিতে পারেনি। আমরা এই প্রতিবেদকে বলতে চাই, উল্লেখিত ব্যক্তিরা কিভাবে ছাত্রশিবিরের সাথে জড়িত তার গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ পেশ করুন। ভারসাম্যহীন রাজনৈতিকদের মত মুখস্ত বুলি আওড়ানো প্রকৃত সাংবাদিকদের কাজ নয়। আমরা আগেও বলেছি এবং আবারো দৃঢ়তার সাথে বলছি, ছাত্রশিবিরের দীর্ঘ পথ চলায় জঙ্গিবাদের সাথে কোন সম্পর্ক কেউ কোন দিন দেখাতে পারেনি এবং পারবেওনা। কেননা ছাত্রশিবির জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করেনা। জঙ্গিবাদকে ছাত্রশিবির অগ্রহণযোগ্য পন্থা মনে করে। আর জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ে অপরাজনীতির সহযোগিদের দেশবাসী ঘৃনা করে।

নেতৃবৃন্দ এ ধরণের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।

সংশ্লিষ্ট