মঙ্গলবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ইসলামী সমাজ কায়েমের মাধ্যমেই শহীদ মীর কাসেম আলীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে-শিবির সভাপতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, মীর কাসেম আলী একটি জীবন, একটি ইতিহাস। বাতিল শক্তি তাকে হত্যা করতে পেরেছে কিন্তু তার আদর্শ ছিনিয়ে নিতে পারেনি। বাংলার জমিনে লাখো তরুণ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ইসলামী সমাজ কায়েমের মাধ্যমেই শহীদ মীর কাসেম আলীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে শহীদ মীর কাসেম আলীর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রশিবির আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হেসাইনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, দাওয়াহ সম্পাদক শাহ মাহ্ফুজুল হক, সাহিত্য সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

শিবির সভাপতি বলেন, যারা জাহেলিয়াতের পাহাড়সম বাধা মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে আগামী দিনে দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও খোদাভীরু নাগরিক উপহার দেয়ার লক্ষ্যে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তাদের মধ্যে শহীদ মীর কাসেম আলী অন্যতম। তিনি শুধু আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি বরং কিভাবে সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব ও নাগরিকের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরানো যায় তার বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। ব্যাংক-বীমাসহ বহু মসজিদ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন ইসলামী ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিকট স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন। এ দেশের দরিদ্র মানুষেরা তার কথা আজীবন স্মরণ করবে। ব্যতিক্রম ধর্মী মিডিয়া প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুস্থ, রুচিশীল ও নিজস্ব সংস্কৃতির লালন, বিকাশ এবং প্রসারে তিনি এদেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রম দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু জাতির চরম দূর্ভাগ্য যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রহসনের ট্রাইবুনালের সাজানো বিচারে জাতির এ অমূল্য সম্পদ মীর কাসেম আলীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে। এ পরিকল্পিত হত্যাকান্ড কোন বিবেকবান মানুষ মেনে নেয়নি। কারণ বিচার প্রক্রিয়া পুরোটাই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৭ সালে জন্ম নেয়া সাক্ষী আর মিথ্যাচারকে পুঁজি করে এ মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল। সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে যে সব ডকুমেন্ট পেশ করেছে তাতে কোথাও তার নাম ছিল না। তার বিরুদ্ধে করা প্রতিটি অভিযোগের ঘটনার বিবরণে ভিন্নতা ও তথ্যে অসংলগ্নতা ছিল স্পষ্ট। যা তার আইনজীবিরা সুস্পষ্ট ভাবে আদালতে তথ্য প্রমাণসহ পেশ করেছেন। তারপরও বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে একজন নিরপরাধ মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ড বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানতম ইসলামী দলের নেতা ও একজন সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করায় দেশপ্রেমিক ও ইসলাম প্রিয় জনতা চরম ভাবে ক্ষুদ্ধ হয়েছে। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কারণেই সরকার তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সরকার যে উদ্দেশ্যে মীর কাসেম আলীকে হত্যা করেছে সে উদ্দেশ্যে কোন দিনই পূরণ হবেনা। আইন-আদালত চিরদিন ফ্যাসিবাদীদের অবৈধ দখলে থাকবে না। যে মাটিতে নিরপরাধ শহীদ মীর কাসেম আলীর রক্ত ঝরানো হয়েছে সেই মাটিতেই সময়ের ব্যবধানে বিচারের নামে হত্যাকারীদের বিচার হবে ইনশা’আল্লাহ। আমরা বিশ্বাস করি, শহীদ মীর কাসেম আলী তার সর্বোচ্চ সফলতায় পৌছে গেছেন। কিন্তু অবৈধ সরকার নিজেদের অসভ্য ও নিকৃষ্টদের কাতারে স্থান করে নিয়েছে। শহীদ মীর কাসেম আলীর স্বপ্নের ইসলামী সমাজ কায়েমে লাখো তরুণ জুলুম নির্যাতনকে তুচ্ছ করে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে লক্ষ্য পানে এগিয়ে চলেছে। শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন না করে এ তরুণরা ক্ষান্ত হবে না।

তিনি বলেন, আদর্শহীন অপশক্তি এদেশে ইসলামী আন্দোলনের উত্থান ঠেকাতে, ইসলাম প্রিয় ছাত্রজনতার মনোবল ভেঙ্গে দিতে মীর কাসেম আলীসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। কিন্তু আমরা আবারো দৃঢ়তার সাথে ঘোষনা করছি, সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও শহীদ মীর কাসেম আলীর রেখে যাওয়া দ্বীন বিজয়ের কাজকে সম্পূর্ণ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। শহীদ মীর কাসেম আলীর প্রতি ফোঁটা রক্ত এ দেশের ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে গতি দিয়েছে। যা চুড়ান্ত বিজয়ে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।