বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে সকল ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে সকল ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ শরফুদ্দিন ও সেক্রেটারি আহসান আব্দুল্লাহ বলেন, গত ১৫ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির উদ্যোগে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা সভায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে আমন্ত্রন জানালেও দু:খজনক ভাবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ দেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরকে আমন্ত্রণ জানাননি। যা অগণতান্ত্রিক, চরম দায়িত্বহীনতা ও একপেশে হঠকারী সিদ্ধান্ত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে এবং ছাত্রসমাজের ভোটে ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ বিভিন্ন পদে বিপুল ভোটে বিজয়লাভ করেছে। ১৯৭৯ সালে তাহের-কাদের পরিষদ, ১৯৮০ও ১৯৮২ সালে এনাম-কাদের পরিষদ, ১৯৮৯ সালে শামসুল-আমিন পরিষদ ও ১৯৯০ সালে আমিন-মুজিব পরিষদ নিয়ে ডাকসুর প্রতিটি নির্বাচনে ছাত্রশিবির অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন পদে বিজয় লাভ করে। ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ডাকসুর নির্বাচনে ছাত্রশিবির ঘোষিত আমিন-মুজিব পরিষদ বিপুল ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। অতীতের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতেও ডাকসুর নির্বাচনে ছাত্রশিবির অংশগ্রহন করবে এবং ছাত্রসমাজের সমর্থনে বিজয় লাভ করবে বলে আমরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ডাকসু নির্বাচন ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮১সালে চাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির মনোনিত জসিম-গাফফার পরিষদ অংশগ্রহণ করে। ভিপি পদে তৎকালিন ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি জসিম উদ্দিনসহ অধিকাংশ পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীগণ বিজয় লাভ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জোহা হলে ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে ১৯৮৮ সালে আব্দুল লতিফ ও রফিকুল ইসলাম খান এবং ১৯৮৯ সালে মতিউর রহমান আকন্দ ও নুরুল ইসলাম বুলবুল নির্বাচিত হন। এছাড়াও খুলনা কমার্স কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে পূর্ণ প্যানেলে বিজয় লাভ করে। ছাত্রশিবির ঢাকা মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, খুলনা বিএল কলেজ, নারায়নগঞ্জ তোলারাম কলেজ, নরসিংদী সরকারী কলেজ, টঙ্গী সরকারী কলেজ ও বরিশাল বিএম কলেজসহ বাংলাদেশের গুরুত্ব পূর্ণ প্রতিষ্ঠান গুলোতে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে জয়লাভ করেছে। এদেশের ছাত্রসংসদ নির্বাচনের সাথে ছাত্রশিবিরের নাম ওতপ্রোতভাবে ভাবে জড়িত। দেশের ছাত্রসমাজের বিশাল অংশের প্রতিনিধিত্ব করছে ছাত্রশিবির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের নিয়মতান্ত্রিক ও গঠনমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্রসমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ছাত্রশিবির অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ছাত্র সমাজের স্বার্থ রক্ষার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রশিবির অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। জাতির প্রত্যাশা পূরণে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রশিবির। এ সকল গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে ছাত্রশিবির ইতমধ্যে ছাত্রসমাজের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ঢাবি কর্তৃপক্ষ বহু নাম সর্বস্ব ছাত্র সংগঠনকে সভায় আহবান করলেও ছাত্রশিবিরকে উপেক্ষা করেছেন। যা ঢাবি ও ডাকসুর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ শুরু থেকেই ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। তথাকথিত পরিবেশ পরিষদের দোহাই দিয়ে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সাথে মতবিনিময় বৈঠকে ছাত্রশিবিরসহ অধিকাংশ ছাত্রসংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ ঢাবি’র এক্ট অনুযায়ী তথাকথিত পরিবেশ পরিষদের কোন আইনি ভিত্তি নেই। ছাত্রসমাজের আন্দোলন ও আদালতের নির্দেশে বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনে লোক দেখানো ঘোষণা দিয়ে আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন না করতে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। নির্বাচনের আগেই ঢাবি কর্তৃপক্ষের এমন বিপরীতমূখী, অদূরদর্শী ও পক্ষপাতমূলক আচরণের ফলে ডাকসু নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে ছাত্রসমাজের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ডাকসু নির্বাচন বহু প্রত্যাশিত। এ নির্বাচন নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ড ছাত্রসমাজ মেনে নিবেনা। সুতরাং ডাকসু’র মত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ র্নিবাচনের আগে অবশ্যই ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করি প্রত্যাশিত ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ দলমত ও হীনমন্যতার উর্দ্ধে উঠে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন। একই সাথে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে সকল ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে ডাকসুর নির্বাচনের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।