শহীদ সাফায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া

০১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯ - ১৭ জানুয়ারি ২০০৬ | ১২৫

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

বগাচতর এলাকার বিখ্যাত ভূঁইয়া বংশের নূরুজ্জামান ভূঁইয়ার ছেলে আবুল কাশেম ভূঁইয়ার ঘর আলোকিত করে শাফায়াত উল্লাহ নামের প্রদীপটি জ্বলতে শুরু করে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম তারিখ থেকে। শাফায়াতের প্রপিতামহ মরহুম দরবেশ আলী ভূঁইয়া এখনো সীতাকুণ্ডে এক নামে পরিচিত। জন্মের আড়াই বছরের মাথায় শাফায়াতের মা বিলকিস বানুর মৃত্যু হলে প্রতিবেশি নাছিমা আক্তার তাকে দেখতে যান। এ সময় শাফায়াতকে কোলে শাফায়াত কোনোক্রমেই তার কোল থেকে নামতে চাইছিলেন না। তখন বৃদ্ধ পিতা একমাত্র পুত্র শাফায়াতকে বড় করার দায়িত্ব ধনাঢ্য নাছিমা আক্তারের হাতে ন্যস্ত করেন। তিনি মাতৃস্নেহে তাকে বড় করে তোলেন। ছোট বেলা থেকে মূলত তিনিই শাফায়াতের ‘মা’ হিসেবে তার নিকট ও এলাকাবাসীর নিকট পরিচিত হন। অত্যন্ত বিনয়ী ও নম্র স্বভাবের শাফায়াত ছিলেন বিচক্ষণ ও মেধাবী। শৈশব হতে তার রোল নং দুই ছিল। কৃতিত্বের সাথে বড় দারোগার হাট সিরাজুল উলুম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা হতে ২০০৪ সালে দাখিল পাস করার পর সীতাকুণ্ড আলিয়া মাদ্রাসায় আলিমে ভর্তি হন তিনি। শাহাদাতকালে শাফায়াত আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি শহীদ শাফায়াত রচনা লিখতেন, গল্প, কবিতা প্রভৃতিতে তার দক্ষ হাতের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছিলেন বেশ কিছু সম্মাননা ও পুরস্কার।

শাহাদাতের ঘটনা
নুনাছড়া এলাকার আওয়ামী ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন মদ, জুয়াসহ বিভিন্ন প্রকার অনৈতিক কার্যকলাপ করে আসছিল। এলাকাবাসী কেউ তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদা- সোচ্চার শিবির কর্মীরা সেদিন সন্ধ্যায় একটি অপকর্ম সহ্য করতে না পেরে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে প্রতিবাদে এগিয়ে এলে অন্যায়ে লিপ্ত সন্ত্রাসীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে তিন জন শিবিরকর্মী নুনাছড়া রাস্তার মাথায় চা-খেতে গেলে অপকর্মের হোতা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাদের আটকে রেখে মারধর করে। ঘটনা জানাজানির একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনসহ শিবিরকর্মীরা বাঁচাতে এগিয়ে এলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন শিবির নেতা শাফায়াত উল্লাহকে। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ১৭ জানুয়ারি ভোর পৌনে পাঁচটায় শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন সবার প্রিয় শাফায়াত উল্লাহ।

আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশী প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতিক্রিয়া
তার প্রতিবেশি মিসবাহুল আলম রাসেল বলেন, সে অত্যন্ত নম্র, বিনীয় ও সাহসী ছিল। এলাকার সবাইর বিপদের আপদে সে সবার আগে ছুটে যেত।

সমসমায়িক দায়িত্বশলিদের প্রতিক্রিয়া
শহীদ শাফায়াত উল্লাহর তৎকালীন দায়িত্বশীল ও বর্তমান জেলা সভাপতি নুর. মোহাম্মদ বলেন, শহীদ শাফায়াত উল্লাহ দ্বীনের খাঁটি গোলাম ছিল ভবিষ্যতে বড় দায়িত্বশীল হওয়ার স্বপ্ন ছিল। দায়িত্বশীলদের সাথে অত্যন্ত ভদ্র-আচরণ ও বিনয়ী আচরণ করতে। ইসলাম বিরোধী শক্তির জন্য এক বড় আতঙ্ক ছিল। তার মুত্যুতে এ লাকার দায়িত্বশীল শূন্যতা সৃষ্টি হয়।

আম্মার প্রতিক্রিয়া
শহীদ শাফায়াত পরিবারে একমাত্র সন্তান। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি প্রায় পাগলপারা, শাফায়াত অত্যন্ত সুঠাম দেহের অধিকারী ছিল। তার গায়ের রং ছিল ফর্সা। হাজার ও ছেলের মাঝে এই রকম একটা ছেলে খঁজে পাওয়া কঠিন। বাড়ির গাছের বিভিন্ন ফলমুল (আম, কলা, লিচু ইত্যাদি) সে পেড়ে খেত। ঘরের রান্ন বাড়া করে সে খেত। আজ বাড়ির ফলমুল ঘরে খাবার নিয়ে তার মা সব সময় কান্না করেন। সাফায়েত ভাইয়ের আম্মা বলেন আমার মনে হয় আমার ছেলে কোথা থেকে আবার আসবে। তা দিয়ে মানুষ চলাচলের সময় তাকিয়ে থাকেন মনে হয় শাফায়াত আসবে আমার ঘর আলোকিত করে। তবে সঙ্গীদের জন্য তারে মায়ের পরামর্শ হল সতর্কতার সাথে সংগঠনের কাজ করবে। আমার মতো যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। কারো প্রতি দোষারুপ না করে তিনি আল্লাহর কাছে এর বিচার চান।

এক নজরে শহীদ শাফায়াত উল্লাহ ভূঁইয়া
শহীদ- শাফায়াত উল্লাহ ভূঁইয়া
পিতা : এনায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া
মাতা : বিলকিস বানু (নাছিমা আক্তার, পালক মাতা)
ঠিকানা : এনায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া বাড়ি, বারৈয়াঢালা, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।
ভাই বোনদের সংখ্যা : ১ ভাই ১ বোন
জন্ম তারিখ : ০১-০২-১৯৮৯ ইং
একাডেমিক যোগ্যতা : আলিম পরীক্ষার্থী
সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : সীতাকুণ্ড কামিল মাদরাসা
সাংগঠনিক মান : সাথী (বড় দারোগা হাট আবাসিক শাখার সভাপতি)
যাদের আঘাতে শহীদ : স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের গুণ্ডাবাহিনী
আহত হওয়ার তারিখ : ০৬-০১-২০০৬ (নুনাছড়া)
কবর যেখানে : পারিবারিক করবস্থান
যে শাখার শহীদ : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা
শহীদের শখ : কৌতুক ও অভিনয় করা।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ সাফায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া

পিতা

এনায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া

মাতা

বিলকিস বানু (নাছিমা আক্তার, পালক মাতা)

জন্ম তারিখ

ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৮৯

ভাই বোন

১ম

স্থায়ী ঠিকানা

এনায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া বাড়ি, বারৈয়াঢালা, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

সীতাকুণ্ড কামিল মাদরাসা, আলিম পরীক্ষার্থী

শাহাদাতের স্থান

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল


শহীদ সাফায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া

ছবি অ্যালবাম: শহীদ সাফায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া


শহীদ সাফায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া

ছবি অ্যালবাম: শহীদ সাফায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া