শহীদ রাশিদুল হক

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১১ মে ১৯৮৫ | ৭

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

১৯৮৫ সালে ভারতের কলকাতা হাইকোর্টে কুরআন বাজেয়াপ্ত করার জন্য মামলা দায়ের হয়। এতে সারা বিশ্ব প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। ভারতের মুসলিমবিদ্বেষী এই ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ১১ মে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এমনি এক মিছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিছিলে কুরআনবিদ্বেষী খুনি ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলিতে আটজন শাহদাতবরণ করেন। এর মধ্যে পাঁচজনই ছিলো ছাত্র।

পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে এ যাবৎ অসংখ্য মানুষ দুনিয়ার জীবন শেষে আখিরাতে প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে যাঁরা আখিরাতের জবাবদিহীর ব্যাপারে সচেতন ছিলেন, তাঁরা দুনিয়াকে ফুলশয্যা হিসেবে গ্রহণ করেননি। বরং এমন কিছু নজির রেখে গেছেন যা পরবর্তী মানুষের জন্য অনুসরণীয় হয়ে আছে। তেমনই এক নজির হচ্ছেন শহীদ রাশিদুল হক। ১১ মে, ১৯৮৫ সালে কুরআনের সম্মান রক্ষার্থে নিজের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে গেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটিতে।

জন্ম ও বংশ পরিচয়
শহীদ রাশিদুল হকের পৈতৃক নিবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নামোশঙ্করবাটিতে। সেখানে তিনি ১৯৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম রফিকুন্নেছা, পিতার নাম মো: তৈমুর রহমান, ভাইবোনের সংখ্যা ৭ জন। ৫ ভাইয়ের মধ্যে তাঁর অবস্থান তৃতীয়।

শিক্ষাজীবন
শহীদ রাশিদুল হক শাহাদাতের সময়ে নামোশঙ্করবাটি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।

সংগঠনে আগমন
শহীদ রাশিদুল হক ছোটকাল থেকে অত্যন্ত বিনয়ী ও মার্জিত স্বভাবের ছিলেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। ইসলামী মাহফিল ও জলসায় তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। নামোশঙ্করবাটি উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হন। শাহাদাতকালীন সময়ে তিনি সংগঠনের কর্মী ছিলেন।

শহীদ হওয়ার ইচ্ছা
শহীদ রাশিদুল হক সর্বদা হওয়ার শহীদ ইচ্ছা পোষণ করতেন। একবার তিনি তাঁর মাকে বললেন, মা আমার জন্য দোয়া কর। আমার যেন সাধারণ মৃত্যু না হয়। আল্লাহ যেন আমাকে শহীদি মৃত্যু দেন। শহীদ হওয়ার দিন তিনি তাঁর মাকে বললেন, ভারতে কুরআন বাজেয়াপ্ত করার প্রতিবাদে হুজুররা সমাবেশ ডেকেছেন, সেখানে যাব। মায়ের জোর অনুরোধেই শুধু হালকা খাবার খেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সেদিন।

যেভাবে শহীদ হলেন
পুলিশের ছোড়া গুলি এসে রাশিদুল হকের তলপেট বিদ্ধ করে। সাথে সাথে রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন রাশিদুল হক। শহীদ হলেন তিনি। সেই সাথে তরুণ ছাত্র, কৃষক, দিনমজুরসহ মোট ৮ জন লোক শাহাদাত বরণ করেন।

জানাজা ও দাফন
শহীদ রাশিদুল হকের নামাজে জানাজা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাঁকে নামোশঙ্করবাটি গ্রামে নিজ বাড়ির কাছে দাফন করা হয়।

জীবনচিত্র
ব্যক্তিজীবনে শহীদ রাশিদুল হক বন্ধুবৎসল ছিলেন। হৃদয়ের উদারতা আর কণ্ঠের সুমিষ্টতা দিয়ে নিমিষেই যে কাউকেই আপন করে নিতে পারতেন। তাঁর শরীরের গঠন লম্বা-চওড়া, সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন তিনি। পোশাকের ব্যাপারে কোনো জাঁকজমক, বিলাসিতা তাঁর মধ্যে ছিল না।

এক নজরে শহীদ রাশিদুল হক
নাম : রাশিদুল হক
মাতার নাম : রফিকুন্নেছা
পিতার নাম : মো: তৈমুর রহমান
জন্ম : ১৯৬৯ সাল
সাংগঠনিক মান : কর্মী
সর্বশেষ পড়াশোনা : দশম শ্রেণী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : নামোশঙ্করহাট উচ্চবিদ্যালয়
আহত হওয়ার স্থান : ঈদগাহের পশ্চিম দিকে
শহীদ হওয়ার স্থান : রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
আঘাতের ধরন : পুলিশের গুলি
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১১ মে, ১৯৮৫
স্থায়ী ঠিকানা : নামোশঙ্করবাটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
ভাই-বোন : ৫ ভাই, ২ বোন
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান : তৃতীয়
যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশ 

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ রাশিদুল হক

পিতা

মোঃ তৈমুর রহমান

মাতা

রফিকুন্নেছা

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৫ ভাই, ২ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

নামোশঙ্করবাটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

১০ম শ্রেণী, নামোশঙ্করবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে

শাহাদাতের স্থান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ


শহীদ রাশিদুল হক

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রাশিদুল হক


শহীদ রাশিদুল হক

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রাশিদুল হক