শহীদ আবু সাঈদ মুহাম্মদ সায়েম

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮৮ | ২৬

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানার দেওডোমা গ্রামে এক নিঃস্ব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ। তাঁর বাবার নাম আবদুস সামাদ। পরিবারে দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

শিক্ষাজীবন
দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর রংপুর কারমাইকেল কলেজে বিএ ভর্তি হন তিনি। শাহাদাতকালে তিনি এই কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

সাংগঠনিক পরিচয়
আবু সাঈদ মোহাম্মদ সায়েম ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। ইসলামী ছাত্রশিবিরের এই নিষ্ঠাবান কর্মী সংগঠনের জন্য সব সময় পেরেশান থাকতেন কিভাবে সংগঠনকে এগিয়ে নেয়া যায়।

শাহাদাতের প্রেক্ষাপট
রংপুর শহর শাখার উদ্যোগে তখন লাইব্রেরি সপ্তাহ চলছিল। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শিবিরকর্মীরা কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্যের বই লাইব্রেরিতে দেয়ার জন্য মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছিলেন। শহীদ সায়েমও লাইব্রেরি সপ্তাহের কাজ করছিলেন। ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের জন্য একটি পাঠাগার গড়তে হবে- এই পেরেশানি নিয়ে কাজ করছিলেন শহীদ। ১৯৮৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকালে সামান্য খাওয়া-দাওয়া করে বই সংগ্রহে বেরিয়ে পড়লেন সায়েম ভাই। সারাদিন কাজ করে বিকেলে স্থানীয় জাহাজ কোম্পানির মোড় হতে কয়েকজন সঙ্গীসহ বাসায় ফিরছিলেন। সারাদিন ময়দানে কাজ করে ক্লান্ত। বলাকা সাইকেল স্টোরের সামনে পৌঁছামাত্রই পার্শ্ববর্তী আওয়ামী লীগ অফিস থেকে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী ভাইদের ওপর। সন্ত্রাসীরা দা, ছুরি, কুড়াল, রড, হকিস্টিক, কিরিচ ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে শিবিরকর্মীদের।

তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল কারমাইকেল কলেজের কৃতী ছাত্র, উদীয়মান ছাত্রনেতা মোহাম্মদ সায়েম। রক্তলোলুপ ছাত্রলীগের হায়েনারা শহীদের দুটি হাতই ভেঙে দেয়। উপর্যুপরি আঘাতে মস্তক চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়। রক্তে লাল হয়ে যায় রাস্তার কালো পিচ, অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান তিনি রাস্তার পাশেই। পরে স্থানীয় ছাত্র-জনতা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের শয্যায় মরণাপন্ন অবস্থায় কাটে সারারাত। কিন্তু আর সংজ্ঞা ফেরেনি তাঁর। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন তিনি, চলে গেলেন নিজের পরম প্রভুর সান্নিধ্যে।

মায়ের প্রতিক্রিয়া
‘সায়েম ছোটবেলা থেকে আর্থিক কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছে, ও নিজের খরচ নিজে বহন করার চেষ্টা করত। আর আমাকে বলত, ‘মা তুমি নানার বাড়ি থেকে কিছু টাকা এনে একটু কষ্ট করে চল, কিছু দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে আমার চাকরির চিঠি আসবে, তারপর আমি সকলের কষ্ট দূর করবো।’ চিঠি এলো ঠিকই কিন্তু ততদিনে আমার সায়েম আল্লাহর দরবারে পৌঁছে গেছে।’

একনজরে শহীদ আবু সাঈদ মোহাম্মদ সায়েম
নাম : আবু সাঈদ মোহাম্মদ সায়েম
পিতার নাম : আবদুস সামাদ
স্থায়ী ঠিকানা : দেওডোমা, আদিতমারী, লালমনিরহাট
ভাই-বোন : দুই ভাই, এক বোন
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান : সবার বড়
পরিবারের মোট সদস্য : ৪ জন
সাংগঠনিক মান : কর্মী
জীবনের লক্ষ্য : পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের মাঝে ইসলামের আদর্শ পৌঁছানো
আহত হওয়ার স্থান : রংপুর শহর, বলাকা সাইকেল স্টোরের সামনে (স্থানীয় জাহাজ কোম্পানি মোড় হতে একটু দক্ষিণে)
আঘাতের ধরন : রড, হকিস্টিক, ছোরা, কুড়াল ও কিরিচ
যাদের আঘাতে শহীদ : আওয়ামী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
শাহাদাতের তারিখ : ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৮; ভোর ৫টা ৩০ মিনিট
শাহাদাতের স্থান : রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আবু সাঈদ মুহাম্মদ সায়েম

পিতা

আবদুস সামাদ

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

দুই ভাই, এক বোন , তিনি সবার বড়

স্থায়ী ঠিকানা

লালমনিরহাটের আদিতমারি থানার দেওডোবা

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

বি.এ (পাস) ১ম বর্ষ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ

শাহাদাতের স্থান

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল