শহীদ আফাজ উদ্দিন চৌধুরী

১৮ ডিসেম্বর ১৯৭০ - ১২ মে ১৯৮৯ | ৩০

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

সুস্বাস্থ্যের অধিকারী যে ছেলেটি ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল; তরুণ-সমাজের কাছে যে ছিল আদর্শ; সেই ছেলেটিই এক সময় বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের পালিত ফ্যাসিস্ট চক্রের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। আর এজন্যই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল ঠাণ্ডা মাথায়, সুপরিকল্পিতভাবে। সেই মহান সৌভাগ্যের অধিকারী তরুণ প্রাণ হলেন চট্টগ্রামের নাজিরহাটের চৌধুরী পরিবারের সন্তান শহীদ আফাজ উদ্দিন চৌধুরী।

পারিবারিক পরিচয়
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাট গ্রামের বাশার চৌধুরীর সন্তান ছিলেন শহীদ। জন্মের আড়াই বছর পর স্নেহময়ী মাতাকে হারান। শাহাদাতকালে পিতা বয়সের ভারে ছিলেন ন্যুব্জ, শহীদের দুই বড় ভাই নুরুল আমীন ও জাহাঙ্গীর বিদেশে ছিলেন। জ্যেষ্ঠ ভাই রুহুল আমীন চৌধুরী ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা।

শিক্ষাজীবন
শাহাদাতকালে নাজিরহাট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি।

অনন্য গুণে ভাস্বর আফাজ যে কারণে শহীদ হলেন
মেধাবী ছাত্র শহীদ আফাজ ছিলেন স্থানীয় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক। ফুটবল, ব্যাডমিন্টনসহ সব খেলায় তাঁর জুড়ি ছিল বিরল। শহীদ আফাজ উদ্দিনের হত্যাকাণ্ডটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। ইসলামী ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রায় ভীত হয়ে রুশ-ভারতের এ দেশীয় এজেন্টরা শিবিরের স্থানীয় নেতাদের হত্যার ঘৃণ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনাটি পাকাপোক্ত করা হয় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে, নাজিরহাটস্থ আবাহনী ক্লাবে। শহীদ আফাজ উদ্দিনের শ্রদ্ধেয় বড় ভাই রুহুল আমিনের কাছ থেকে সন্ত্রাসীরা চাঁদা নিয়ে যায় এর আগে। সে টাকা দিয়ে বুলেট কিনে আফাজকে হত্যা করে নজিরহাটে উল্লাস করে।

শাহাদাতের ঘটনা
১২ মে, ১৯৮৯ সালের ঘটনা। দিনটি ছিল শুক্রবার। ঈদুল ফিতরের মাত্র একদিন পর ঈদের খুশির রেশ তখনো কাটেনি। আফাজ উদ্দিন চৌধুরী বাড়ির নিকটস্থ মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে স্থানীয় গণি মার্কেটে একটি দোকানের সামনে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। মাগরিবের নামাজের ১৫/২০ মিনিট পর কুখ্যাত ফ্যাসিস্ট ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী শাহজাহান, হেলাল, শ্যামল ও শাহনেওয়াজসহ ৮/১০ জন যুবক মোটরসাইকেলযোগে এসে অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ল শিবিরকর্মী আফাজ উদ্দিনের ওপর। দুর্বৃত্তদের কয়েকজন আফাজকে লক্ষ্য করে সাব-মেশিনগান (এসএমজি) ও স্টেনগানের ব্রাশফায়ার করলে আফাজের বক্ষ ঝাঁঝরা হয়ে যায়। খুনিচক্র তাদের রক্তের লালসা চরিতার্থ করার পর নিজ আশ্রয়স্থলে চলে গেল। কয়েক মিনিটের মধ্যে আফাজের নিষ্পাপ দেহটি নিঃসাড় হয়ে পড়ল। শাহাদাতের মর্যাদা নিয়ে মহান বন্ধুর কাছে হাজির হলেন সবার প্রিয় আফাজ উদ্দিন।

শহীদ আফাজ উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন নাজিরহাটের আপামর ছাত্র-জনতার হৃদয়ের স্পন্দন। তাঁর বুকে বুলেট বিদ্ধ করে সন্ত্রাসীরা হিংসার যে লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে দিয়েছে; তা খুনিদের ঘুম নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত আর থামবে না। শহীদ আফাজ উদ্দিন চৌধুরীর সাথীরা আজ লড়তে শিখেছে। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, অস্তিত্বের লড়াই, যা চলবে আরও ক্ষিপ্রগতিতে।

শহীদের স্মরণীয় বাণী
“ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সাহসী ও ত্যাগী হতেই হবে, এ জন্য যেকোনো ত্যাগ কিংবা শাহাদাতবরণ করতে হলেও আমি পিছু হটব না।”

একনজরে শহীদ আফাজ উদ্দিন চৌধুরী
নাম : আফাজ উদ্দিন চৌধুরী
মাতার নাম : রাবেয়া খাতুন
বাবার নাম : আলহাজ্ব আবুল বাশার চৌধুরী
জন্মতারিখ : ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭০
ভাই-বোন : ৭ ভাই-বোন (৫ ভাই, ২ বোন আপন), আপন ভাই-বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ
পরিবারের মোট সদস্য : ৯ জন, জীবিত ৭ জন
স্থায়ী ঠিকানা : মোহাম্মদ চৌধুরীবাড়ি (শহীদ আফাজ মঞ্জিল), পোস্ট- মুসবিয়া, পূর্ব মন্দাকিনী, নাজিরহাট, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
সাংগঠনিক মান : সাথী (চট্টগ্রাম জেলা পূর্ব)
সর্বশেষ পড়াশোনা : এইচএসসি (দ্বিতীয় বর্ষ), নাজিরহাট কলেজ
শাহাদাতের স্থান : নাজিরহাটের গণি মার্কেট
আঘাতের ধরন : সাব-মেশিনগান ও স্টেনগানের গুলি
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী শাহজাহান, হেলাল, শ্যামল ও শাহনেওয়াজসহ ৮/১০ জন
শাহাদাতের তারিখ : শুক্রবার, ১২ মে, ১৯৮৯

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আফাজ উদ্দিন চৌধুরী

পিতা

আলহাজ্ব আবুল বাশার চৌধুরী

মাতা

রাবেয়া খাতুন

জন্ম তারিখ

ডিসেম্বর ১৮, ১৯৭০

ভাই বোন

৫ ভাই ২ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

শহীদ আফাজ মঞ্জিল, মোঃ চৌধুরী বাড়ি, মুসাবিয়া, পূর্ব মান্দাকিনী, নাজিরহাট, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

এইচ এস সি, ২য় বর্ষ, নাজিরহাট কলেজ

শাহাদাতের স্থান

নাজিরহাটের গণি মার্কেট