শহীদ মীর আনসার উল্লাহ

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৪ আগস্ট ১৯৮৯ | ৩২

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

মীর আনসার উল্লাহ, সেক্যুলারের ধারক ছাত্রলীগের গুলিতে নির্মমভাবে জীবন দেয়া এক নির্ভীক মুজাহিদের নাম। ১৯৮৯ সালের ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় আল্লাহর ঘর মসজিদের পাশেই সন্ত্রাসীরা জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল ষোল বছরের এই নিষ্পাপ শিবিরকর্মীর। শহীদ আনসার উল্লাহ ফটিকছড়ি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নেয়ার অপরাধের জন্যেই খোদাদ্রোহী বর্বর শক্তি তাঁকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে। আর পূর্ণ বিকশিত হয়ে সুবাস ছড়ানোর আগেই ঝরে গেল একটি তাজা গোলাপ।

ব্যক্তিগত পরিচয়
ইসলামী আন্দোলনের নিষ্ঠাবান কর্মী মীর আনসার উল্লাহ ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার ভূজপুর থানাধীন কাজীরহাট গ্রামের বাসিন্দা মীর মাহমুদ আহম্মদের সন্তান। তাঁর মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। ৬ ভাই ও ৩ বোন আর বাবা-মা নিয়ে তাঁদের সুখী পরিবার ছিল। আনসার উল্লাহ ছিলেন ভাই-বোনদের মধ্যে চতুর্থ। ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মীর আনসার উল্লাহ ফটিকছড়ি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়ন করছিলেন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাঁর সেই স্বপ্নকে পূরণ হতে দেয়নি। ফুটতে দেয়নি একটি স্বপ্ন গোলাপ। কলিতেই তাঁকে নিষ্প্রাণ করে দিয়েছে। শাহাদাতের সময় মীর আনসার উল্লাহ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন।

শাহাদাতের ঘটনা
১৯৮৯ সালের ১৪ আগস্ট। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টায় ফটিকছড়ির কাজীরহাট বাজার মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন মীর আনসার উল্লাহ। নামাজ শেষে বন্ধু করিমের সঙ্গে চা পান করে বাড়ি ফিরছিলেন। পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযাীয় ওঁৎ পেতে থাকা রক্তপিপাসু সন্ত্রাসী শাহজাহান, হেলাল, অহিদ, তসলীম প্রমুখ দুর্বৃত্তরা পথিমধ্যে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে প্রথমে বোমা ও পরে উপর্যুপরি গুলি চালাতে থাকে আনসার উল্লাহর ওপর। সন্ত্রাসীদের গুলিতে মুহূর্তেই তাঁর বুকের ডানপাশ ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন ইসলামী আন্দোলনের নির্ভীক সৈনিক মীর আনসার উল্লাহ। 

শহীদের জানাজা
ঘটনার পরদিন ১৫ আগস্ট শুক্রবার বিকেল ৫টায় লালদীঘি ময়দানে শহীদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর কফিন সহকারে জনতার শোক মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং পরে ফটিকছড়ির ভূজপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

প্রতিবাদের ঝড়
আনসার উল্লাহ হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। শুধু ১৯৮৯ সালে আনসার উল্লাহসহ ১১ জন শিবিরকর্মী শাহাদাত বরণ করেন।

আমানতদারির নজির
সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি আঘাতে মুমূর্ষাবস্থায় যখন শহীদের বড় ভাই ফয়জুল্লাহ তাঁকে চিকিৎসার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলেন তখন তিনি ভাইকে ডেকে বললেন, ‘ভাই! আমি আর বাঁচবো না। ডাক্তার দেখাতে হবে না। আমার কাছে এক সওদাগর দু’টি টাকা পাবে, টাকাগুলো তাকে দিয়ে দিও।’ এর কিছুক্ষণ পরই আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন প্রিয় বান্দা মীর আনসার উল্লাহ।

ভাইহারা বোনের আহাজারি
শহীদ আনসার উল্লাহর মেজ বোন কুলসুমা খাতুন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ভাইকে কলেজে ভর্তি করিয়েছিলাম। ভাইকে ঘিরে আমাদের কতইনা স্বপ্ন ছিল! কিন্তু ইসলামের শত্রুরা আমাদের সে স্বপ্নকে পূরণ হতে দেয়নি। অনেক দিন সে বাড়ি না আসায় চিঠি দিয়ে তাঁকে বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু আমার ভাইকে সন্ত্রাসীরা সেদিনই শহীদ করে দেয়। যদি জানতাম আমার ভাইকে এভাবে চিরতরে হারাতে হবে, তাহলে তাঁকে বাড়ি আসতে বলতাম না।’

একনজরে শহীদ মীর আনসার উল্লাহ
নাম : মীর আনসার উল্লাহ
মাতার নাম : সুফিয়া খাতুন
পিতার নাম : মীর মাহমুদ আহম্মদ
ভাই-বোন : ৬ ভাই, ৩ বোন
অবস্থান : ভাইদের মধ্যে চতুর্থ
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম ও ডাকঘর- কাজীরহাট, থানা- ভূজপুর, উপজেলা- ফটিকছড়ি, জেলা- চট্টগ্রাম
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ফটিকছড়ি কলেজ, একাদশ শ্রেণী, বিজ্ঞান বিভাগ
সাংগঠনিক মান : কর্মী
শাহাদাতের স্থান : কাজিরহাট মসজিদের পাশে
আঘাতের স্থান : বুকের ডান পাশে
শাহাদাতের তারিখ : ১৯৮৯ সালের ১৪ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মীর আনসার উল্লাহ

পিতা

মীর মাহমুদ আহম্মদ

মাতা

সুফিয়া খাতুন

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৬ ভাই ৩ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

কাজিরহাট, ভূজপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

এইচ এস সি, ১ম বর্ষ, ফটিকছড়ি কলেজ

শাহাদাতের স্থান

কাজিরহাট মসজিদের পাশে