শহীদ হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াহিয়া

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ২২ অক্টোবর ১৯৮৯ | ৩৫

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। যতদিন আকাশ-জমিনের অস্তিত্ব থাকবে, ততদিন থাকবে এ দ্বন্দ্ব। শয়তানের বাধা উপেক্ষা করেই সত্যের পতাকাবাহী একদল লোক আজীবন মানুষকে আল্লাহর শাশ্বত পথে ডাকবেই। সন্ত্রাসবাদী ছাত্রলীগের ঘাতকবাহিনীর আরেক নিষ্ঠুর শিকার শহীদ হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াহিয়া। ১৯৮৯ সালের ২২ অক্টোবর খুনিচক্র ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী হাফেজ ইয়াহিয়াকে ঠাণ্ডা মাতায় গুলি করে হত্যা করে।

মুহাম্মদ ইয়াহিয়া একজন হাফেজে কুরআন। নাজিরহাট আহমদীয়া মাদ্রাসা থেকে আলীম পাস করে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি সাহিত্য (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন। আসা ছিল উচ্চতর শিক্ষা শেষ করে সমাজ উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু মানবতার চির দুশমন খুনিচক্র তাঁকে নির্মমভাবে খুন করে। ইসলামের পথে চলার অপরাধেই তাঁকে অকালে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে এক সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় শিবিরকর্মী হিসেবে হাফেজ ইয়াহিয়া শাহাদাত বরণ করেন। এর আগে ১৭ অক্টোবর খোরশেদ ও লিটনকে খুনিচক্র ব্রাশফায়ারে খুন করে।

২২ অক্টোবর ১৯৮৯ সালের দুপুর ১টার দিকে রক্তের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা হায়েনারা কাটারাইফেল, স্টেনগান, বন্দুক ইত্যাদি আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নাজিরহাটের মন্দাকিনী এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক মোজাফ্ফর চৌধুরীর বাড়িতে হামলা চালায়। মোজাফ্ফর চৌধুরীর পুত্র শাহেদ চৌধুরী ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী হওয়ার কারণেই মূলত খুনিচক্র তাদের বাড়িতে এই সন্ত্রাসী আক্রমণ চালায়। এই হামলার সময় মোজাফ্ফর চৌধুরীর বৃদ্ধা স্ত্রী, পুত্রবধূসহ কয়েকজনকে কিরিচের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত ও গণলুটপাট করে মানবতাবিধ্বংসীরা। ঘাতকবাহিনী লুটপাটের পর ফেরার পথে সামনে হাফেজ ইয়াহিয়াকে পেয়ে কোনো প্রকার চিন্তাভাবনা ছাড়াই সরাসরি গুলি করে। কালো অস্ত্রের বুলেটে হাফেজ ইয়াহিয়ার বক্ষ ঝাঁঝরা হয়ে যায়।

মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ইয়াহিয়া অসহ্য যন্ত্রণায় হাত-পা ঝাঁকি দিচ্ছিলেন। প্রাণ সংহারের এই নির্মম মুহূর্তে হাত ও পায়ের গোড়ালি কিরিচের আঘাতে বিচ্ছিন্ন এবং লাশ মন্দাকিনী নদীতে ফেলে দেয় পাষণ্ডরা। মন্দাকিনী নদীর স্রোতে হাফেজ ইয়াহিয়ার লাশ প্রায় অর্ধ কিলোমিটার ভেসে যাওয়ার পর স্থানীয় জনগণ তাঁকে উদ্ধার করে। ২৩ অক্টোবর বিকেলে লালদীঘি ময়দানে হাজার হাজার শোকাতুর ছাত্র-জনতা কুরআনের হাফেজ এই শহীদের জানাজার নামাজে অংশ নেন। জানাজা শেষে শহীদের লাশ নিয়ে বিশাল মিছিলে জনতা তিন শিবিরনেতা হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানায়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহীদের লাশ হাটহাজারীর আলীপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তাঁর পিতা হাফেজ জামাল হোসেন ও মাতা ফিরোজা বেগমের কবরের পাশেই তাঁদের স্নেহের দুলাল ইয়াহিয়া চিরশায়িত।

একনজরে শহীদ হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াহিয়া
নাম : হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াহিয়া
পিতার নাম : হাফেজ মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন
মাতার নাম : ফিরোজা বেগম
ভাই-বোন : ৩ ভাই, ৫ বোন
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান : সবার ছোট
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- আলীপুর, ডাক ও থানা- হাটহাজারী, জেলা- চট্টগ্রাম
শিক্ষাগত যোগ্যতা : শাহাদাতকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি (সম্মান) প্রথম বর্ষে অধ্যয়ন করছিলেন
শাহাদাতের স্থান : নাজিরহাট, মন্দাকিনী
শাহাদাতের তারিখ : ১৯৮৯ সালের ২২ অক্টোবর
সাংগঠনিক মান : সাথী
আঘাতের স্থান : মুখে বন্দুকের গুলি এবং হাত-পায়ের রগ কর্তন

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াহিয়া

পিতা

হাফেয মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন

মাতা

ফিরোজা বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৩ ভাই, ৫ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

আলীপুর, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

আরবি, ১ম বর্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শাহাদাতের স্থান

নাজিরহাট, মন্দাকিনী, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম