শহীদ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ০৭ ডিসেম্বর ১৯৮৯ | ৩৭

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

সন্ত্রাসের বর্বর ছোবল থেকে মুক্ত থাকেনি দেশের প্রধান দ্বীনি প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা’। আলেমে দ্বীন তৈরির এই শ্রেষ্ঠ কারখানায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নামধারী দুষ্কৃতকারীদের নিষ্ঠুর হামলায় ১৯৮৯ সালের ৭ ডিসেম্বর শাহাদাত বরণ করেন কৃতী ছাত্র মোহাম্মদ আবদুল খালেক।

ব্যক্তিগত পরিচিতি
শহীদ মুহাম্মদ আবদুল খালেক ছিলেন পরিবারের ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। শহীদের পিতার নাম মুহাম্মদ আনসার উল্লাহ মিয়া। আর মাতার নাম মোছাম্মৎ জুবেদা খাতুন। ভাইদের মধ্যে অন্যরা ছোটখাট চাকরি বা ব্যবসা করেন। শহীদ মুাহাম্মদ আবদুল খালেক ছিলেন পরিবারের মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষিত। তাঁকে ঘিরে পরিবারের ছিল অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা-আকাক্সক্ষা। কিন্তু সবকিছু ভেঙে চুরমার করে সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিল ঘাতকেরা।

শিক্ষাজীবন
শহীদ মুহাম্মদ আবদুল খালেক আলোনিয়া কুলচুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী সিনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৯৮৪ সালে দাখিল, ১৯৮৬ সালে আলিম ও ১৯৮৮ সালে ফাজিল পাস করেন। এরপর তিনি জ্ঞানের ভাণ্ডার নিজেকে সমৃদ্ধ করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ভর্তি হন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায়। ইসলামী ছাত্রশিবিরের একনিষ্ঠ কর্মী শহীদ মুহাম্মদ আবদুল খালেক শাহাদাতকালে কামিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

শাহাদাতের ঘটনা
১৯৮৯ সালের ৭ ডিসেম্বর। অন্যান্য দিনের মতোই সে দিনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল ছাত্রদল নামধারী দুষ্কৃতকারীরা। তারা সেদিন খুনের উন্মত্ততায় মেতে উঠেছিল। ওই দিন সকাল ১০টায় আবদুল খালেক ছাত্রাবাসে ফি জমা দেয়ার জন্য গিয়েছিলেন। আর কিছুদিন পরেই মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে দ্বীনের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করতেন তিনি। ইচ্ছা ছিল মাদ্রাসা জীবনের শেষ পরীক্ষাটি ছাত্রাবাসে থেকেই শেষ করবেন। কিন্তু ঘাতকের নির্মম ছোবল তাঁর সে ইচ্ছা পূরণ হতে দেয়নি। অকালেই জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে ঘাতকের হিংস্র থাবায়।

ঘাতকদল খুনের নেশায় ওঁৎ পেতে থাকতো প্রায়ই। সেদিন শহীদ খালেক সিট রেন্ট হিসেবে ৪৫৭ টাকা জমা দেয়ার সময় শিক্ষকদের সামনেই কয়েকজন দুষ্কৃতকারী তাঁর ওপর আক্রমণ শুরু করে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে তিনি দৌড়ে মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেন। দুর্বৃত্তরা তাঁকে পেছন থেকে ধাওয়া করে ১/২, উর্দু রোডের একটি বাড়ির সিঁড়িতে ধরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও বর্বর আক্রমণ চালায়। দুর্বৃত্তরা খুনের লালসা মিটিয়ে নির্বিঘ্নে স্থান ত্যাগ করে। লোকজন আবদুল খালেকের রক্তাক্ত নিস্তেজ দেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আর এভাবেই আল্লাহর দ্বীনের অকুতোভয় এক সৈনিক আলেমে দ্বীন মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল খালেক শাহাদাত বরণ করেন।

জানাজা ও দাফন
শহীদ আবদুল খালেকের লাশ পোস্টমর্টেমের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিয়ে আসা হয়। এখানেই শহীদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজের ইমামতি করেন তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। জানাজার ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইউনুস শিকদার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম মুকুল বক্তব্য রাখেন। বক্তারা ইসলামী আদর্শ কায়েমের মাধ্যমে শহীদের খুনের বদলা নেয়ার আহবান জানান।

জানাজার পর শহীদের লাশের কফিন চাঁদপুর নিজ বাড়ির উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। নেয়ার পথে রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসায় দ্বিতীয়বার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে কয়েক হাজার শোকার্ত ছাত্র-জনতা অংশ নেন। সর্বশেষে তাঁর নিজ গ্রাম আলোনিয়ায় তৃতীয়বার জানাজার পর লাশ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। শেষবার ইমামতি করেন আওলাদে রাসূল (সা) মাওলানা সাইয়েদ আনোয়ার হোসাইন তাহের আল মাদানী।

ঘটনার প্রতিক্রিয়া
মাওলানা আবদুল খালেকের শাহাদাতের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজধানীতে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে ছাত্র-জনতা ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

পরবর্তীতে শহীদ আবদুল খালেকের খুনের সাথে জড়িত ২০ জন দুষ্কৃতকারীকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। দুষ্কৃতকারীরা সবাই ছাত্রদলের সশস্ত্র সদস্য। পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করায় তারা পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে নেতৃত্ব দেয়।

একনজরে শহীদ মুহাম্মদ আবদুল খালেক
নাম : মুহাম্মদ আবদুল খালেক
মাতার নাম : মোছাম্মৎ জুবেদা খাতুন
পিতার নাম : মুহাম্মদ আনসার উল্লাহ মিয়া
সাংগঠনিক মান : কর্মী (ঢাকা মহানগরী পূর্ব)
ভাই-বোন : ৫ ভাই, ২ বোন
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান : সর্বকনিষ্ঠ
স্থায়ী ঠিকানা : আলোনিয়া, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর
শাহাদাতকালে অধ্যয়ন : ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা (কামিল, ২য় বর্ষ)
শহীদ হওয়ার স্থান : আলিয়া মাদ্রাসা হল প্রাঙ্গণ, সকাল ১০টা
যাদের আঘাতে শহীদ: ছাত্রদল
শহীদ হওয়ার তারিখ : ৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৯

মায়ের মন্তব্য : ১৩ আগস্ট ১৯৮৯, আলিয়া মাদ্রাসায় সংঘর্ষের পর তাঁর মা বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাস বেড়ে গেছে। সংগঠন ছেড়ে দাও।’ আর শহীদ আবদুল খালেক মাকে সান্ত্বনা দিয়ে দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, ‘আমি মারা গেলে তুমি শহীদের মা হবে।’

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুহাম্মদ আব্দুল খালেক

পিতা

মুহাম্মদ আনছার উল্লাহ মিয়া

মাতা

মোছাম্মৎ জুবেদা খাতুন

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৫ ভাই ২ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

আলোনিয়া, ফরিদ্গঞ্জ, চাঁদপুর

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

কামিল ২য় বর্ষ, ঢাকা আলিয়া মাদরাসা

শাহাদাতের স্থান

ঢাকা আলিয়া মাদরাসা, হল প্রাঙ্গণ