শহীদ মোজাহের আলী

০১ জানুয়ারি ১৯৬৫ - ২২ জানুয়ারি ১৯৯০ | ৩৮

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

আল্লাহর দ্বীনের অকুতোভয় সৈনিকেরা কখনই খোদাদ্রোহী শক্তির কাছে মাথানত করেনি। তাঁরা আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ভয়ে কাজ করে যান। এ রকম একজন সাহসী সৈনিক ছিলেন শহীদ মোজাহের আলী। এই সহজ-সরল মানুষটির দ্বীনের প্রতি আকর্ষণ খোদাদ্রোহী শক্তির সহ্য হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে তারা মোজাহের আলীকে হত্যার পথ বেছে নেয়।

ব্যক্তিগত পরিচিতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৩৮তম শহীদ হলেন শহীদ মোজাহের আলী। তিনি কুষ্টিয়া জেলার মীরপুরের মিঠল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ মোজাহের আলীরা ৬ ভাই ও ১ বোন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। ছোটকাল থেকে তাঁর ইসলামের প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। যার কারণে তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছায়াতলে আশ্রয় নেন। এ কারণেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সাথী শপথ গ্রহণ করেন।

শিক্ষাজীবন
শহীদ মোজাহের আলীর শিক্ষাজীবন সম্পর্কে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। তবে যতটুকু জানা যায় তিনি কুষ্টিয়ার মীরপুর নাজমুল উলুম কামিল মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। এ মাদ্রাসার ছাত্র থাকাকালেই তাঁকে বর্বরোচিত পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়। সশস্ত্র ছাত্র দুর্বৃত্তরা তাঁকে আখক্ষেতে ধরে নিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ সংহার করে।

শাহাদাতের প্রেক্ষাপট
শহীদ মোজাহের আলী অত্যন্ত নম্র স্বভাবের দ্বীনদার শিবিরনেতা ছিলেন। তিনি ছোটকাল থেকেই মুখে দাড়ি রেখেছিলেন। প্রায় নিয়মিত মাথায় টুপি দিয়ে চলতেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরে আসার পর মানুষকে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিলের কাজে সদা ব্যস্ত থাকতেন। তিনি বন্ধুমহলের সকলকে কুরআনের দিকে আহ্বান করতেন। তাঁর দাওয়াতি চরিত্র খোদাদ্রোহী শক্তি সহ্য করতে পারেনি। তারা তাদের আল্লাহবিমুখ মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার পথে মোজাহের আলীকে প্রতিবন্ধক ভাবতো।

এ কারণেই দুর্বৃত্তরা মোজাহের আলীকে খুন করার জন্য পরিকল্পনা এঁটেছিল। খুনের উন্মাদনায় সুযোগের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকতো প্রায়ই। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান হলো ১৯৯০ সালের ২১ জানুয়ারি। এই দিনে খুনিরা মোজাহের আলীকে একা পেয়ে ধরে আখক্ষেতে নিয়ে যায় এবং নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করে তাঁর দেহ ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে ও পরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে পৈশাচিক কায়দায় তাঁকে হত্যা করে। হত্যার পর খুনিরা নির্বিঘ্নে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়। এই সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি, আকাশ, বাতাস সকলেই সাক্ষী হয়ে রইল। কিন্তু এই খুনিদের দুনিয়ার আর কোনো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল না।
শাহাদাতের পর প্রতিবাদসভা

১৯৯০ সালের ২২ জানুয়ারি আখক্ষেত থেকে লাশ উদ্ধারের পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ঢাকাসহ সারাদেশে। ২২ জানুয়ারি বিকেলে ইসলামী ছাত্রশিবির রাজধানীতে বিশাল প্রতিবাদসভা ও বিক্ষোভ মিছিল করে। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব আব্বাস আলী খান এক বিবৃতিতে মোজাহেরের নির্মম হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং খুনিদের খুঁজে বের করে শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।

জানাজা ও দাফন
১৯৯০ সালের ২২ জানুয়ারি সোমবার কুষ্টিয়া ঈদগাহ ময়দানে শহীদের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমীর ডা. আনিসুর রহমান বিশাল জানাজায় ইমামতি করেন। পরে আমলা হাইস্কুল মাঠে দ্বিতীয়বার ও সর্বশেষ শহীদের নিজ গ্রামে জানাজার পর লাশ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

অনুকরণীয় আদর্শ
ইসলামী আদর্শকে বিশ্বের জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অসংখ্য ভাইকে রক্ত ঝরাতে হয়েছে। এটাই ইসলামী আন্দোলনের ঐতিহ্য। এই ধারাবাহিকতায় এ পথেই হাঁটতে হয়েছে শহীদ মোজাহের আলীকেও। ইসলামের পথে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে তিনি ইসলামের সৈনিকদের নিকট এক অনুকরণীয় আদর্শে পরিণত হয়ে আছেন।

একনজরে শহীদ মোজাহের আলী
পূর্ণ নাম : মোহাম্মদ মোজাহের আলী
পিতার নাম : মোহাম্মদ ইমদাদ আলী মণ্ডল
মাতার নাম : মোছাম্মৎ রাজুমুন্নেসা
জন্ম : ১৯৬৫ সাল
পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ১০ জন
ভাই-বোন : ৮ জন
পড়াশোনা : মীরপুর নাজমুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, কুষ্টিয়া
স্থায়ী ঠিকানা : মিঠল, মীরপুর, কুষ্টিয়া
সাংগঠনিক মান : সাথী
শাহাদাতের তারিখ : ২২ জানুয়ারি, ১৯৯০

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মোজাহের আলী

পিতা

মোহাম্মদ ইমদাদ আলী মন্ডল

মাতা

মোছাম্মৎ রাজুমুন্নেসা

জন্ম তারিখ

জানুয়ারি ১, ১৯৬৫

ভাই বোন

৮ জন

স্থায়ী ঠিকানা

মিঠল, মীরপুর, কুষ্টিয়া

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

মীরপুর নাজমুল উলুম কামিল মাদরাসা

শাহাদাতের স্থান

মীরপুর