শহীদ শেখ ফিরোজ মাহমুদ

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১১ মার্চ ১৯৯১ | ৪০

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ। এ দেশ সবুজ-শ্যামল অনাবিল সৌন্দর্যমণ্ডিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ইসলামী আন্দোলনের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের অসংখ্য ভাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের মূল্যবান সম্পদ প্রাণকে বিসর্জন দিয়েছেন। সেই শহীদি কাফেলার অন্যতম সদস্য ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফিরোজ মাহমুদ।

ব্যক্তিগত পরিচিতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪০তম শহীদের নাম শেখ মুহাম্মদ ফিরোজ মাহমুদ। শহীদ শেখ ফিরোজ মাহমুদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। তাঁর পিতার নাম মাওলানা শেখ আহমদ। ফিরোজ মাহমুদ পরিবারের সদস্যদের একান্ত প্রিয় ছিলেন। তিনি অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। অতি অল্প বয়সে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।

শিক্ষাজীবন
শহীদ ফিরোজ মাহমুদ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। তিনি মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন এবং ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। মাদ্রাসার ছাত্র হয়েও মেধাবী ছাত্র ফিরোজ মাহমুদ পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যা কৃতিত্বের সাথে সম্মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। শহীদ হওয়ার পূর্বে শেখ ফিরোজ মাহমুদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

সাংগঠনিক মান
শহীদ ফিরোজ মাহমুদ একজন সফল সংগঠক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে আসার পর নিজেকে একজন ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিতকর্মী হিসেবে বিবেচনা করেন। ইসলামী আন্দোলনের উদীয়মান সংগঠক ফিরোজ মাহমুদ ওয়াজেদিয়া কামিল মাদ্রাসার সভাপতি, পাঁচলাইশ থানা সেক্রেটারিসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ ফিরোজ মাহমুদ সর্বশেষ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্যপ্রার্থী ছিলেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র-সংসদের নির্বাচিত ম্যাগাজিন সম্পাদক ছিলেন।

শাহাদাতের প্রেক্ষাপট
ভয়ঙ্কর দিনটি ১৯৯১ সালের ১১ মার্চ। রাত তখন সাড়ে দশটা। শিবিরনেতা শেখ ফিরোজ মাহমুদ লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় অন্য একজন সঙ্গীসহ বাদুরতলা বাসা থেকে দোকানে গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার পথে ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তরা একটি মাইক্রোবাসে এসে তাঁদের গতিরোধ করে ধরে নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা ফিরোজের বুকে উপর্যুপরি ছুরি চালিয়ে সমস্ত দেহ ক্ষত-বিক্ষত করে ওয়াজিউল্লাহ ইনস্টিটিউটের পেছনে কদমতলী রেললাইনের পাশে রেখে চলে যায়। এলাকার লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় মুমূর্ষু ফিরোজকে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফিরোজকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ডাক্তাররা আপ্রাণ চেষ্টা করে ফিরোজকে বাঁচিয়ে তোলার। কিন্তু ঘাতকের নৃশংসতার কাছে সবকিছু ব্যর্থ হয়ে যায়। সকালে তিনি মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান।

১২ মার্চ বিকেলে লালদীঘি ময়দানে শহীদের জানাজার নামাজ আদায়ের পর লাশ ট্রাকে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৩ তারিখ রাতে হাতিয়ার কমরউদ্দিন মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে পুনরায় জানাজার নামাজ শেষে তাঁকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

শাহাদাতের পর পিতার প্রতিক্রিয়া
শহীদ ফিরোজ মাহমুদের পিতা মাওলানা শেখ আহমদ অত্যন্ত ধৈর্যশীল মানুষ ছিলেন। সন্তানের শাহাদাতের খবর শুনে তিনি বলেন, “শহীদের পিতা হতে পেরে আমি গর্বিত।”

সুপরিকল্পিত ঘটনা
ফিরোজ হত্যার মাত্র একদিন পূর্বে ১০ মার্চ চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন ও জিএস আজীম উদ্দিনের নেতৃত্বে দুষ্কতকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ৭ জন ভর্তিচ্ছু শিবিরকর্মীকে আহত করে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধকালীন অবস্থায় ছাত্ররা ভর্তি ফরম সংগ্রহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। আহত ভর্তিচ্ছু শিবিরকর্মীরা হচ্ছেন কাউসার, ফারুক, মিজান, জাহাঙ্গীর, মঞ্জুর, হাশেম ও জামাল। এই ঘটনার পরদিনই ফিরোজ মাহমুদকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

তাঁকে হত্যার পেছনে কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাঁকে হত্যা করার কোনো স্বাভাবিক কারণও ছিল না। সকলের প্রিয়পাত্র ছিলেন শহীদ ফিরোজ মাহমুদ। তাঁকে শহীদ করার একমাত্র কারণ কুরআনের ভাষায়, “তাঁদের অপরাধ একটাই তাঁরা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে।” ইসলামের পথে অগণিত ছাত্রকে দাওয়াত দিয়েছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম কলেজের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সুপরিচিতিই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে ফিরোজ মাহমুদকে খুন করে।

একনজরে শহীদ ফিরোজ মাহমুদ
নাম : শেখ মুহাম্মদ ফিরোজ মাহমুদ
পিতার নাম : মাওলানা শেখ আহমদ
স্থায়ী ঠিকানা : তমর উদ্দিন, হাতিয়া, নোয়াখালী
সাংগঠনিক মান : সদস্যপ্রার্থী
সর্বশেষ পড়াশোনা : উদ্ভিদবিদ্যা (শেষ বর্ষ), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
দায়িত্ব : চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র-সংসদের নির্বাচিত ম্যাগাজিন সম্পাদক
শাহাদাতের তারিখ : ১১ মার্চ, ১৯৯১
শাহাদাতের স্থান : চট্টগ্রামের বাদুরতলা
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগ
আঘাতের ধরন : ছুরিকাঘাত

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ শেখ ফিরোজ মাহমুদ

পিতা

মাওলানা শেখ আহমদ

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

স্থায়ী ঠিকানা

তমর উদ্দিন, হাতিয়া, নোয়াখালী

সাংগঠনিক মান

সদস্যপ্রার্থী

সর্বশেষ পড়ালেখা

উদ্ভিদবিদ্যা, শেষ বর্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শাহাদাতের স্থান

বাদুরতলা, চট্টগ্রাম