শহীদ মুনসুর আলী

০১ জানুয়ারি ১৯৬৮ - ২১ জুন ১৯৯২ | ৪৫

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

মৃত্যু এক অনিবার্য মহাসত্য। মৃত্যুর হাত থেকে কেউ রেহাই পায় না। মানুষের কীর্তিই মানুষকে চিরভাস্বর করে রাখে। মৃত্যুর পরেও হয়ে থাকে অমর। পৃথিবীর বুকে তাকে রাখে চিরস্মরণীয় বরণীয়। আর যদি হয় সেটা শুধু আল্লাহর জন্য তাহলে তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। তেমনি কীর্তিবান আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গকারী এক যুবক শহীদ মনসুর আলী।

প্রাথমিক জীবনী
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলাধীন সন্তোষপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ মনসুর আলী।

শিক্ষাজীবন
শহীদ মনসুর আলী রায়গঞ্জ এবতেদায়ী মাদ্রাসায় ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর সোনাইর খামার দাখিল মাদরাসায় ৫ম শ্রেণীতে পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে নাগেশ্বরী সিনিয়র মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেণী থেকে আলিম পর্যন্ত পড়াশুনা করেন । ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষে তিনি রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ১ম বর্ষ বিএস (সম্মান) ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। বিএ (সম্মান) অধ্যয়নের পাশাপাশি নাগেশ্বরী সিনিয়র মাদরাসা থেকে ফাজিল এবং বড় রংপুর কারামতিয়া আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন।

সাংগঠনিক জীবন
ছোটবেলা থেকেই ইসলামপ্রিয় শহীদ মনসুর আলী নাগেশ্বরী সিনিয়র মাদরাসায় অধ্যয়নের সময় ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পান এবং শামিল হন। তখন সক্রিয়ভাবে ইসলামী আন্দোলনের নিজেকে সম্পৃক্ত করতে না পারলেও কারমাইকেল কলেজে ভর্তির পর থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে ইসলামী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৯০ সালে সাথী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সদা হাস্যোজ্বল, সুঠাম দেহের অধিকারী, নম্র, ভদ্র, ইসলামপ্রিয় এই যুবকটির মনে সব সময় একটিই চিন্তা ছিল কীভাবে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা যায় তাই তিনি নিজের এলাকাতে কুরআন শিক্ষার জন্য মুরব্বিদের সাথে নিয়ে মক্তব্য প্রতিষ্ঠা করেন। বাড়ির আশপাশে মসজিদ না থাকায় তার উদ্যোগেই এ মক্তবেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সহিত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে ঐ মক্তব নামাজের ঘরকে জামে মসজিদে পরিণত করেন।

শাহাদাতের ঘটনা
এ প্রসঙ্গে তখনকার এক দায়িত্বশীল বলেন, সত্যি শাহাদাত তার ভাগ্যেই জোটে যে নিজেকে ইসলামী আন্দোলনে খালিসভাবে সম্পৃক্ত করে আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা দেখাতে পারে। যা আমি কয়েকটি ঘটনার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করেছি। শহীদ মনসুর ভাইয়ের জীবনে গ্রামের বাড়ি পাশাপাশি উপজেলা হলেও শহীদ মনসুর ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ছিল না। ১৯৯১ সাল জাতীয় সংসদ উপ-নির্বাচনে রংপুর-১ আসনে প্রার্থী আমাদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যক্ষ রুহুল ইসলাম পীরসাহেব চাচার নির্বাচনী কাজ করার জন্য রংপুর শহর শিবির এর পক্ষ থেকে আমাকে দায়িত্বশীল করে ২৫/৩০ জনের একট টিম গংগাচড়ায় পাঠানো হয়। সেই টিমে শহীদ মনসুর আলী ভাই ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন এলাকায় গ্রুপ করে ভোটারদের কাছে পাঠানো। সেই সাথে পোস্টার লিফলেট মাইকিংসহ নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন সামগ্রী বণ্টনের দায়িত্ব আমার ছিল।

নির্বাচনের ৫/৬ দিন আগের ঘটনা। বিভিন্ন এলাকায় গ্রুপ ও মাইক পাঠিয়ে আমি নির্বাচনী অফিসে বসে আছি। এমন সময় এক ব্যক্তি অফিসে আসলেন। আমার ধারণা ছিল তিনি কোন এলাকার ভোটার হবেন। কিন্তু পরিচয় জানার জন্য জিজ্ঞেস করায় তিনি নাম ও বাড়ির ঠিকানা বললেন নাগেশ্বরীতে। আমি বললাম এখানে কোথায় এসেছেন। বললেন আমি মনসুরে বড় ভাই। বাড়ির জরুরি প্রয়োজনে ডাকার জন্য রংপুরে তার লজিং বাড়িতে এসে জানতে পারলাম গংগাচড়ায় গিয়েছি। এজন্য তার খোঁজে এসেছি। আমি তাকে অফিসে বসতে দিলাম এবং বললাম জোহরের নামাজের সময় তারা খেতে আসবেন। জোহরের নামাজের পর পরই মনসুর আলী ভাই আসলেন। আমি তাকে বললাম বাড়ি থেকে আপনার ভাই এসেছে। তিনি বড় ভাইয়ের সাথে আলাপ করে তাকে বিদায় দিলেন। আমি মনসুর ভাইকে বললাম আপনাকে জরুরি ভিত্তিতে ডাকার জন্য এসেছেন কিন্তু আপনি গেলেন না? তিনি বললেন নির্বাচনের পরের দিন বাড়ি যাব ইনশাআল্লাহ।

১৯৯১ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে আমি তখন কারমাইকেল কলেজের পাশ্ববর্তী মেস এলাকা শহীদ আতাউর রহমান হামিদী জোনের সভাপতি। তৎকালীন শহর সভাপতি জনাব আ: রউফ মন্ডল ভাই শহীদ মনসুর ভাইকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন মেসে সিট নিয়ে দেয়ার জন্য। তখন অনেক মেসে আমাদের সংগঠন কায়েম হয়নি তাই আমি রহিম মেসে সিট দিলাম যাতে সংশ্লিষ্ট মেসসহ আশেপাশের মেসগুলিতে সাংগঠনিক ভিত কায়েম করা যায়। তিনি কোন ধরনের আপত্তি ছাড়াই সেই মেসে উঠলেন এবং যথারীতি সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন। শাহাদাতের কিছুদিন আগের ঘটনা বাড়ি থেকে তাকে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে খুব চাপ দিচ্ছে।

এমতাবস্থায় তিনি আমার কাছে পরামর্শ চাইলেন। আমি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আরো বিলেম্ব বিয়ে করা দরকার বলে পরামর্শ দিলাম। কয়েকদিন পর তিনি আমাকে জানালেন বিয়ের ব্যাপারে বাড়িতে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। শুধু এগুলো ঘটনাই নয়। তিনি সংগঠনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত হাসিমুখে মনে মেনে নিতেন এবং সময় মত যে কোন কাজে হাজির হতেন।

১৯৮৭ সালে কারমাইকেল কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে আমরা বিজয় লাভের পর থেকে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য আমাদের চরম বিরোধিতা শুরু করে। তারা কলেজ রোড লালবাগ ট্রাক স্ট্যান্ডে গ্রান্ড হোটেল মোড় পায়রা চত্বর কাচারি বাজারসহ শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে শিবিরকে প্রতিহত করার জন্য মারমুখী অবস্থা নেয়।

আমাদের ভূমিকা সব সময় ইতিবাচক ছিল শহরের যে কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আমরা দলবদ্ধ ভাবে আসার চেষ্টা করতাম। যেমন বিকেল ৪টায় প্রোগ্রাম হলে সাড়ে ৩টায় কারমাইকেল কলেজ শাখা ও শহীদ আতাউর রহমান হামিদী জোনের জনশক্তি লালবাগে গেলে সম্মিলিতভাবে যেতেন। আমি প্রতিদিন দেখেছি মনসুর ভাই যথা সময়ে উপস্থিত হতেন। ১৯৯২ সালে বিশ্বনন্দিত ইসলামী আন্দোলনের নেতা তৎকালীন আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযমকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ছাত্রছায়ায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আসলে তাদের মূল উদ্দেশ্য অধ্যাপক গোলাম আযম ছিল না তারা চেয়েছিল কীভাবে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে বাংলাদেশের জমিন থেকে সমূলে উৎখাত করে যায়। তাই তারা দেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে গণআদালত গঠন করে নিজের হাত তুলে নেয় আইন।

সারা দেশে হামলা হত্যা সন্ত্রাস চালিয়ে শাহাদত করে অর্ধ শতাধিক জামায়াত শিবির নেতা কর্মীকে। অনেক কর্মীকে হতে হয় পঙ্গু। রংপুরে এই অশুভ শক্তি বিভিন্ন সময়ে আমাদের মিছিল মিটিংসহ বিভিন্ন ব্যক্তির উপরও ঝাঁপিয়ে পড়ে হায়েনার মতে। ইসলামবিদ্বেষী এই চক্রের অপতৎপরতাকে সহ্য করতে পারেনি এদেশের ছাত্র ও যুবসমাজ। তাই তারা একত্রিত হয়ে জাতীয় যুব কমান্ড নামক সংগঠন করে ইসলামবিদ্বেষী আওয়ামী অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সরকারে কাছে দেশদ্রোহীদের বিচারে দাবি করে।

এরই অংশ হিসেবে ১৯৯২ সালের ২০ জুন জাতীয় যুব কমান্ডের ডাকে দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে রংপুরে ও ছাত্র ও যুব সমাজ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পিকেটিং করছিল। কিন্তু এই কর্মসূচি পালনেও বাধা প্রদান করেছিল তথাকথিত গণতান্ত্রিক চেতনার দাবীদার আওয়ামী অপশক্তি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সেদিন গুলি ও ককটেল দ্বারা আহত হয়েছিল তৎকালীন জেলা সভাপতি জনাব তাজুল ইসলাম, ছাত্রনেতা কাওছার আলীসহ আরও বেশ কয়েকজন। কলেজ হোস্টেল বন্ধ থাকায় আমরা বিউটি হাউজে অবস্থান করছিলাম। উত্তেজনার কারণে বিভিন্ন মেসের ভাইদেরকে আমরা একত্রিত করে বিউটি ও কল্লোল ছাত্রাবাসে নিয়েছিলাম। তাদের মেস এলাকায় হামলা করার পরিকল্পনা আমরা আগেই অবগত হয়েছিলাম। ২০ তারিখ রাত্রে কল্লোল ছাত্রাবাসে জনশক্তি কম থাকায় সিদ্ধান্ত হলো বিউটি হাউজ থেকে কয়েকজনকে কল্লোল পাঠাতে হবে।

জিজ্ঞেস করা হল স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কে কে কল্লোলে যেতে চান সর্ব প্রথমে মনসুর ভাই রাজি হলেন। আরও কয়েকজন সহ তাদেরকে কল্লোল ছাত্রাবাসে পাঠানো হল। আমরা দুই মেসেই সতর্ক অবস্থায় ছিলাম এবং তথ্যসংগ্রহ করছিলাম। পরের দিন ২১ জুন তথাকথিত ঘাদানি কমিটির ডাকে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়েছিল। আরা সকাল থেকে মেসে অবস্থান করছি। এক সময় সংবাদ আসলো শহর ও ঘামার এলাকা থেকে বেশ কিছু অছাত্র সন্ত্রাসী চকবাজারে ঘাটে ছেলেদের সাথে একত্রিত হয়ে এবং তারা বিউটি হাউসে হামলা করবে। সত্যি তাই হলো তারা দুই গ্রুপে চকবাজার থেকে পশ্চিম দিকে মেসের পাশ দিয়ে এবং আর কে রোড দিয়ে বিউটি হাউস আক্রমণ করার জন্য আসলো, আমরা তা প্রতিহত করলাম কোন রকমমে হতাহত ছাড়াই।

এভাবে দুই তিনবার তাদের সাথে আমাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ অবস্থা বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলছিল। কিন্তু তারা কখনো কল্লোল ছাত্রাবাসে হামলা করার জন্য অগ্রসর হয়নি। আমরাও প্রস্তুতি গ্রহণ করলাম এবং কল্লোল ছাত্রাবাসে জনশক্তি কম থাকায় তাদেরকেও আমাদের কাছে আসার জন্য সংবাদ পাঠালাম। এমন সময় তারা (সন্ত্রসীরা) অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিউটি হাউজের দিকে আসলো। আমরাও প্রতিরোধ করে চকবাজার পর্যন্ত তাদেরকে পিছু হটালাম। এমনকি তারা বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান নিল। আমরা আর কে রোড হয়ে বিউটি হাউসের দিকে মিছিল করতে করতে পূর্বের মোড় পর্যন্ত না আসতেই আবারো তারা শ্লোগান দিয়ে আমাদের দিকে আসতে থাকায় আমরা পুনরায় মিছিল ঘুরিয়ে নিয়ে চকবাজারে দিকে এগিয়ে গেলাম। এমন সময় কল্লোল ছাত্রাবাসের ভাইয়েরা আমাদের দিকে আসতে ছিল।

তখন হায়েনারা তাদের উপর চড়াও হয় এবং আমাদের অজ্ঞাতে মনসুর ভাইকে উপর্যুপরি আঘাতে করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান এবং আর কে রোডের দক্ষিণ পার্শ্বে তারা হাফিজুর ভাইকে আঘাত করতে থাকে। পরবর্তীতে আমরা তাকে উদ্ধার করি। এমতাবস্থায় ওদের বেশ কয়েজন আহত হওয়ায় আমরা চকবাজার থেকে বিউটি হাউসের দিকে ফিরছিলাম। ফেরার পথে আমরা দেখতে পাই একটি লাশের মত কে যেন পড়ে আছে। আমাদের একভাই খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন মনসুর ভাই। পরে আমরা তাকে কয়েকজনে তুলে নিয়ে এসে মেডিক্যালে পাঠালাম। মেডিক্যাল তাকে মৃত ঘোষণা করলো। তিনি চলে গেলেন আল্লাহর দরবারে শাহাদাতের অমিয় পেয়ালা পান করে।

জানাযা ও দাফন
আমার উপর দায়িত্ব অর্পিত হল বাড়িতে সংবাদ দেয়ার। পরদিন সকালে মোটরসাইকেলে শিবিরের এক সাথী ভাইসহ রওনা হলাম। আমার মনে তখন বারবার নাড়া দিচ্ছিল। কি জবাব দিব শহীদ মনসুর ভাইয়ের বৃদ্ধ পিতা-মাতা ও ভাইবোনদের কাছে। আমরা কুড়িগ্রামে গিয়ে বাজার মসজিদের খতিব রুকনে জামায়াত মাওলানা মোশাররফ সাহেবকে সাথে নিয়ে মনসুর ভাইদের বাড়িতে পৌঁছলাম। পৌঁছার সাথে সাথে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হলো। চতুর্দিক থেকে আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর আসতে শুরু করলো। সকলের চোখে পানি আর মুখে একটি কথা কী অপরাধ ছিল আমাদের প্রিয় মনসুরের যে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমরাও চোখের পানি সংবরণ করতে পারিনি।

অশ্রুসিক্ত নয়নে আমরা শুধু সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম তিনি আল্লাহর পথে শহীদ করেছেন। আপনারা দোয়া করেন আল্লাহ যেন তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। তারপর পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলো আমরা চেয়ে থাকলাম কখন শহীদের কফিন এসে পৌঁছে। সেদিন সারা দিন বৃষ্টি ছিল এবং বর্ষাকাল হওয়ার কারণে গাড়িসহ নদী পারাপারে বেশ সময় লাগছে রাত ১০ টার দিকে শহীদের কফিন বাড়িতে এসে পৌঁছল। কফিনের সাথে ছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি কফিনের সাথে ছিলেন। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য মো: আমিনুল রহমান ও কারমাইকেল কলেজের ইসলামের ইতিহাসে ও সংস্কৃতি বিভাগের শ্রদ্ধেয় স্যার রুহুল আমিন মুন্সীসহ শহীদের বন্ধু মহল ও দ্বীনি ভাইয়েরা। সেই সময় এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে সত্যি মনে হলো শহীদ মনসুর ভাই সকলের কাছে কত প্রিয় ছিল। এরপর আমাদের শ্রদ্ধেয় মুন্সী স্যার ও আমিনুল রহমান ভাইয়ের হৃদয়গ্রাহী সান্ত্বনামূলক বক্তব্যে পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলো। শহীদের শেষ জানাযা তার বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় এবং পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।

একনজরে শহীদ মনসুর আলী
নাম : মো. মনসুর আলী
পিতা : আলাহাজ্ব মো. আজগার আলী মন্ডল
মাতা : মোছা. লতিফা বেগম
ভাই-বোন : ভাই ৫ জন, বোন ৩ জন।
ঠিকানা : গ্রাম: সন্তোষপুর, পোস্ট-সন্তোষপুর, থানা: নাগেশ্বরী, জেলা: কুড়িগ্রাম।
জন্ম : ১৯৬৮ ইং।
শিক্ষাজীবন : ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত, রায়গঞ্জ এবতেদায়ী মাদ্রাসা
৫ম-৭ম শ্রেণী, সোনাইর খামার দাখিল মাদ্রাসা
৮ম-১০ম, দাখিল, আলিম ও ফাজিল, নাগেশ্বরী সিনিয়র মাদ্রাসা
কামিল- বড় রংপুর কারামতিয়া আলিয়া মাদ্রাসা
বি.এ (অনার্স) ৩য় বর্ষ - ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কারমাইকেল কলেজ।
সাংগঠনিক মান : সাথী

আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ: ২১ জুন, ১৯৯২ ইং আশরতপুর (চকবাজার), আর কে রোডের ধারে ঘাদানিক কর্তৃক আহত হন।

শাহাদাত
২১ জুন ১৯৯২ ইং রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে নেয়ার সময় শাহাদাত বরণ করেন।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুনসুর আলী

পিতা

মোঃ আজগর আলী মন্ডল

মাতা

মোছাম্মৎ লতিফা বেগম

জন্ম তারিখ

জানুয়ারি ১, ১৯৬৮

ভাই বোন

৫ ভাই ৩ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার বায়গঞ্জ ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে।

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

ইসলামের ইতিহাস, কারমাইকেল কলেজ

শাহাদাতের স্থান

চকবাজার, রংপুর