শহীদ শেখ রহমত আলী

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ০২ অক্টোবর ১৯৯৩ | ৫৯

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

শহীদি কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে এক অকুতোভয় মুজাহিদের নাম শেখ রহমত আলী। তিনি সত্যের পথে সংগ্রাম করেই নিজের জীবনকে কোরবানি করেছেন। তাঁর শাহাদাত আমাদের জন্য এক বিরাট প্রেরণার বিষয়।

খুলনা মহানগরী কলেজ জোনের পরিচালক ও ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস আবদুর রহিম ও সাহিত্য সম্পাদক শেখ রহমত আলী আহত আবদুল মোমেন ও কামরুল ইসলামকে দেখে হাসপাতাল থেকে কলেজে ফিরছিলেন। হঠাৎ করে মিছিল আসছে ছাত্রদল, ছাত্র মৈত্রী ছাত্র ইউনিয়ন ও যুবদলের আর্মস ক্যাডারসহ ২০০/৩০০ বহিরাগত পেশাদার গুণ্ডা মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিএল কলেজ ঘিরে ফেলেছে। শিবির নেতা অবদুল হালিম খবর পেয়ে ফিরে আসেন তিতুমীর হলে। ৩০/৪০ জন শিবির কর্মীকে তিনি হল মসজিদে সমবেত করে জীবনের শেষবারের মত হিদায়াতি বক্তব্য প্রদান করেন।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সন্ত্রাসীরা চিরতরে কলেজ থেকে ইসলামের আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আমাদের জীবন দিয়ে হলেও বিএল কলেজে ইসলামী আন্দোলনকে অক্ষুণ্ণ রাখতে চাই। এজন্য যদি কাউকে শাহাদাত বরণ করতে হয় তবে জেনে রাখবেন সে হবে মুন্সী আব্দুল হালিম। সমাবেশ শেষে শিবির কর্মীরা নিচে নেমে আসেন। ইতোমধ্যে পেশাদার সন্ত্রাসীরা ১ম গেট ২য় গেট, প্রাইমারি স্কুল গেট, সুবোধচন্দ্র ছাত্রাবাস প্রভৃতি জায়গা থেকে এক যোগে বৃষ্টির মতো বোমা ও গুলিবর্ষণ করতে করতে তিতুমীর হলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

এ সময় শিবির কর্মীরা জীবন বাজি রেখে ইট, পাথর ও লাঠি সংগ্রহ করে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। গুলিকে উপেক্ষা করে এমনকি কেউ কেউ আহত হওয়া সত্ত্বেও খালি হাতে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলেন। এই জানবাজ কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে ২য় ও প্রাইমারি স্কুল গেটে সন্ত্রাসীরা পলায়নে বাধ্য হয়। ১ম গেটেও একই অবস্থা বিরাজ করছিল। এ সময় সন্ত্রসাসীরা আরো অধিক সংখ্যক অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে ১ম গেট দিয়ে হামলা চালায় তৎকালীন মহানগরীর ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক ও ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পায়ে তিনদফা গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাকে কলেজ মসজিদে নেয়া হয়। আহত ভাইকে একা ফেলে না গিয়ে হালিম ভাই এবং অপর কর্মী হাফিজুর রহমান মসজিদে প্রবেশ করেন। তাদের আশা ছিল আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদ সকলের জন্য নিরাপদ।

রক্ত পিপাসু খুনিরা অন্তত মসজিদে রক্ত ঝরাবে না। কিন্তু খুনিরা মসজিদের মধ্যে গুলি ও বোমা বর্ষণ করতে থাকে এবং রামদা দিয়ে জানালার গ্রিল কাটার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে তারা মসজিদের সামনের দিকে বারান্দায় উঠে আসে এবং বোমা মেরে আল্লাহর পবিত্র ঘরে দরজাকে উড়িয়ে দেয়। এ সময় ক্ষুধার্ত, শ্রান্ত-ক্লান্ত শিবিরের কর্মীরা খুনিদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মানুষরূপী বর্বর পশুরা প্রথমে শিবির কমী হাফিজুর রহমানকে পেটে গুলি করে মসজিদের মেঝেতে ফেলে দেয়। এ সময় নরপশুরা বন্দুক, রামদা দিয়ে মু. হালিমের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গুলিবিদ্ধ হালিম ভাই মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে তারা রামদা দিয়ে আঘাত করতে শুরু করে। পরে তারা হালিম ভাইকে মৃত ভেবে মসজিদের সামনে পুকুরে ফেলে রাখে। পানিতে তার শরীর নড়াচড়া করছে দেখে হিংস্র হায়েনারা তাকে পুকুর থেকে তুলে আনে। এ সময় তিনি পানি চান। কিন্তু তারা তাকে পানি না দিয়ে মসজিদের সামনে কসাইয়ের মত জবাই করে। তারা তাকে জবাই করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং নরকীটরা, ছাত্রদলের খুনিরা হালিম ভাইয়ের হাত পায়ের রগগুলোও কেটে দেয়। খুনের নেশায় উন্মত্ত বিএনপি ও ছাত্রদলের রক্তপিপাসু পিশাচরা রহমত আলী ভাইকে গুলি করে ফেলে দেয়। তারপর একই কায়দায় রামদা, চাইনিজ কুড়াল এবং গুলি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। 

এর কিছুদিন পর ২ অক্টোবর শাহাদাতবরণ করেন ছাত্রসংসদের নবনির্বাচিত সাহিত্য সম্পাদক রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাস্টার্স-এর মেধাবী ছাত্র, শিবিরের সদস্যপ্রার্থী শেখ রহমত আলী। শহীদের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার দোহার গ্রামে।

শিক্ষাজীবন
গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ১৯৮৪ সালে তিনি বিএল কলেজে ভর্তি হন। ৮৬ সালে এইচএসসি পাস করেন এবং একই বছর তিনি বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। কৃতিত্বের সাথে অনার্স পাশ করে বিএল কলেজেই এমএসএস পড়ছিলেন।

সাংগঠনিক জীবন
১৯৮৮ সালে সংগঠনের সাথী, ১৯৯৩ সালে সদস্য প্রার্থী হন। শাহাদাতের সময় তিনি বিএল কলেজ ক্যাম্পাস শাখার সেক্রেটারি ছিলেন। তখন তিনি বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন।

শহীদের মায়ের প্রতিক্রিয়া
শহীদের মা কবরের পাশে কাঁদছেন, তখন শহীদের সাথীরা সান্ত্বনা দিয়ে বললেন; আপনার কাঁদা ঠিক নয়, কারণ আপনি শহীদের মা। শহীদ জননী বললেন; তাতো বুঝি বাবা কিন্তু মন তো মানে না। আমার রহমত খুব ভালো ছেলে ছিল। তোমরা ওর মত কাজ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কর।

শহীদের সেজো ভাই রজব আলী বললেন; রহমত শহীদ হয়েছে এতে আফসোস নেই। আফসোস হল এলাকার ইসলামী আন্দোলনের একজন যোগ্য নেতা হারিয়ে গেল। তিনি বলেন; রহমত সারা জীবন কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। নিয়ত করেছিলাম সামনের মাস থেকে ওকে কিছু টাকা হাত খরচের জন্য পাঠাব। সে আশা অপূর্ণ রয়ে গেল। যদি এদেশে ইসলামী বিপ্লব হয় তাহলে বলতে পারবো এ বিপ্লবের পেছনে আমার সহোদর রহমতের রক্ত আছে। দোয়া করি এদেশে ইসলামী বিপ্লব সফল হোক।


এক নজরে শহীদ শেখ রহমত আলী
নাম : শেখ রহমত আলী
পিতার নাম : শেখ মোফাজ্জল হোসেন
কৃতিত্ব : বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাহিত্য সম্পাদক
আহত হওয়ার স্থান : বিএল কলেজ, খুলনা
যাদের হাতে শহীদ : ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন।
শহীদ হওয়ার তারিখ : ০২.১০.১৯৯৩ইং
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- দোহার, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ শেখ রহমত আলী

পিতা

শেখ মোফাজ্জল হোসেন

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রামঃ দোহার, থানা- তালা, জিলা- সাতক্ষীরা

সাংগঠনিক মান

সদস্য প্রার্থী

সর্বশেষ পড়ালেখা

মাস্টার্স, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, খুলনা বি এল কলেজ

শাহাদাতের স্থান

খুলনা বি এল কলেজ