প্রেরণার এক সুউচ্চ মিনার

আমি ভাই হয়ে জাতির কাছে ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি রাখতে চাই- আর যেনো কাউকে আমার মতো ভাই হারাতে না হয়। আর কোনো পিতা-মাতাকে সন্তান হারাতে না হয়। বৃদ্ধ পিতার ছোট ছেলের কফিন কাঁধে নিতে না হয়। জাতির বিবেকবান যুবসমাজের কাছে প্রশ্ন একটাই- কেন হাফেজ রমজান আলীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো? শহীদ হাফেজ রমজান আলীকে হত্যা করার মাধ্যমে ইসলামের আলোকে নিভিয়ে দিতে চেয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর নূরকে প্রজ্বলিত করবেন যতই কাফেররা অপছন্দ করুক না কেন।

অক্ষয়-অবিনাশী আত্মার পাখি

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। বাতিল শক্তি কখনো সত্যের অস্তিত্ব মেনে নিতে পারেনি। যেখানেই উত্থিত হয়েছে সত্যের নিশান, সেখানেই তারা ছুড়ে মেরেছে বিষাক্ত বাণ। কিন্তু ইসলামের অকুতোভয় মুজাহিদরা এতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি, ভীত-সন্ত্রস্ত হয়নি। আল্লাহর ওপর অবিচল বিশ্বাস ও ভরসা রেখে তারা ছুটে চলেছে দুর্গম পথ দিয়ে। তাদের মুখে বারবার ধ্বনিত হয়েছে- আমাদের প্রত্যয় একটাই, আল্লাহর পথে মোরা চলবোই। তারা কুরআনুল কারিমের অমিয় বাণীর সত্যায়ন করেছে, ‘‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন-মরণ সব কিছু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।’’

যে জীবন প্রেরণা জোগায়

৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২। ইসলামী ছাত্রশিবিরের ফুটন্ত গোলাপের বাগান থেকে প্রস্ফুটিত দু’টি গোলাপ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাছাই করলেন। আওয়ামী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বর্বর নির্যাতনে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইল্লাইহি রাজিউন) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও সোহরাওয়ার্দী হল শিবিরের সেক্রেটারি প্রিয়মুখ মাসুদ বিন হাবিব এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রচার সম্পাদক সদাচঞ্চল মেধাবীমুখ মুজাহিদুল ইসলাম।

একজন সবুজ পাখি

অনেক স্বপ্নের রঙ জেগে থাকে যে চোখে তার আলো নিভে গেলে মনটা ছেয়ে যায় বিষন্নতার জ্বরে যে বেদনার ঝড় তাণ্ডব তোলে বুকের ভেতর মনে হয় কষ্টের আগুন পোড়ায় হৃদয়ের সমস্তটুকু। দুঃখের দহন জেগে থাকে অহরাত্রি

জান্নাতের দোলনায় শহীদ এনামুল হক

হত্যা করে শেষ করতে চায় ছাত্রশিবিরের বিশাল কাফেলাকে। কিন্তু শাহাদাত যাদের প্রিয় ঠিকানা তাদেরকে কেউ কখনো পরাস্ত করতে পেরেছে? পারেনি বদরে, পারেনি ওহুদে, পারেনি তাবুকে, পারেনি সিন্ধুতে, তেমনি পারেনি ওরা বাংলার সবুজ জমিতে।

মোছেনি আজও রক্তের দাগ

জোহরের নামাজ শেষ করে সকলে সামান্য কিছু খাওয়া দাওয়া শেষ করে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আমরা ধরমপুর মতিহার থানার আমজাদের মোড়ে এসে জড় হই। বেলা ৩টায় গোটা মোড় জনশক্তিতে ভরে যায়। চারিদিকে শুধু নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার, একদফা একদাবি: শেখ হাসিনা কবে যাবি, এই মুহূর্তে দরকার কেয়ারটেকার সরকার ইত্যাদি শ্লোগানে মুখরিত। চারদিক থেকে মিছিল আসছে। শুনলাম, ছাত্রশিবির ডাঁশমারী অঞ্চল থেকে একটা বিশাল মিছিলের বহর আসছে। অপেক্ষা করতে থাকলাম, মিছিলকে অভিনন্দন জানানোর জন্য।

শহীদ আমিনুর রহমান : সেতো জান্নাতের সবুজ পাখি

শাহাদাত এর উপর যখনই লিখতে গিয়েছি তখনই কলম অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, আবেগ আমার জ্ঞান বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে অবশ করেছে। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বের কারণে বারবার আমাকে শাহাদাতের মিছিলে যেতে হয়েছে। হায়নাদের গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত,শহিদের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি বারবার। শহিদের পরিবারের মাতা- পিতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠিদের বিলাপ ও রোনাজারিতে সান্তনা দিতে গিয়ে বেসামাল হয়েছি, বহুবার তাদের অশ্র“ মুছতে গিয়ে নিজেই অশ্র“সিক্ত হয়ে পড়েছি।

যে স্মৃতি আজো কাঁদায়

বাংলাদেশের দক্ষিণের জনপদ সাতক্ষীরা। তৌহিদী জনতার আবেগ-অনুভূতির সাথে গভীরভাবে মিশে আছে এ জেলা। এখানকার অধিকাংশ মানুষ ইসলামকে ভালোবাসে বলেই আশা-আকাক্সক্ষা আর স্বপ্নের যেন শেষ নেই। তার প্রমাণ মেলে ২০১৪ সালে দায়িত্বশীল সমাবেশে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার ভাই তার বক্তব্যে বলেছিলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আর ইসলামী আন্দোলনের রাজধানী সাতক্ষীরা।

হাজারো হৃদয়ের গহীনে লুকায়িত নাম শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী

শহীদেরা কখনও মরে না। আমরা জানি সকল মানুষই মরণশীল। শহীদেরা অন্যের চাইতে আরও নির্মমভাবে হাত-পা কর্তিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তারাও মৃত্যুর পর আর ফিরে আসে না। তারা মরে না, তাদেরকে মৃতদের মধ্যে শামিল করবে না। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে একাধিকবার বলেছেন- وَلا تَ قُولُوا لِمَنْ ي قُْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لا تَشْعُرُونَ “আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারাই জীবিত কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না।” (সূরা বাকারা:১৫৪)

রক্তে রঞ্জিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার চত্বর

১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সা. প্রদর্শিত বিধানকে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে কাজ শুরু করে। তরুণ ছাত্রসমাজের কাছে তারা ইসলামের সুমহান আদর্শের কথা পৌঁছে দেবার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে অহর্নিশ কর্তব্যরত রাখে নিজেদেরকে। তাদের প্রতিটি কাজ তরুণ ছাত্রদের হৃদয়ে ভালোবাসার স্থান করে নেয়। দিন দিন প্রিয় কাফেলায় ভিড়তে থাকে সচেতন ছাত্রসমাজ। প্রতিটি হৃদয়ে জেগে ওঠে সাহসের তুফান। উত্তাল তরঙ্গ ভেঙে ভেঙে নির্মাণ করতে থাকে ঠিকানা। আর সেই ঠিকানায় এখন লক্ষ লক্ষ নাবিক। নাবিক বন্দরে পৌছানোর তীব্র আকাক্সক্ষায় দুচোখের স্বপ্ন সমান এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই এই অগ্রযাত্রাকে নিস্তব্ধ করে দেয়ার জন্য শুরু থেকেই নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে থাকে। সকল বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে ছাত্রশিবির এগিয়ে যেতে থাকলে বিরোধীরা নবীন সংগঠনটিকে কুঁড়িতেই নিঃশেষ করার জন্য বৃহৎ হত্যাকান্ড সংঘটিত করার পরিকল্পনা করে ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।