এক আলোকিত জীবনের প্রতিচ্ছবি

মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে ঢের সময় লেগে যায়। প্রকৃত আদর্শবান মানুষের পরিচয় এই ঘূর্ণায়মান মানব সভ্যতার ইতিহাসে বেশ বিরল। এই প্র্রকৃত আদর্শবান মানুষেরা তাদের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন, হয়ে যান মানব সভ্যতার ইতিহাসের অমোচনীয় অংশ। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা প্রকৃতপক্ষে মানব সত্ত্বাবান অসংখ্য মানবিক গুণাবলির সমন্বয়ে গঠিত এই রকম একজন রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা, একটি নাম, একটি বিস্ময়কর প্রতিভা, একটি ইতিহাস, একজন কিংবদন্তী।

শহীদ মুজাহিদ : ইসলামী রাজনীতির এক কালজয়ী কবি

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ একজন কবি। অমর কবি। কালজয়ী কবি। লিখে গিয়েছেন তিনি সাবলীল ভঙ্গীতে রাজনীতির কবিতা, বিপ্লবের কবিতা। একটি আন্দোলন, একটি সংগঠন, একটি ইতিহাস, একটি আপোসহীন সংগ্রামের কবিতা। এই ভূখণ্ডে বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রাম, জাতির উত্থান-পতন, প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে জনাব মুজাহিদ একটি অকুতোভয় নাম।

ক্ষণজন্মা একটি প্রতিভা!

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান একটি নাম, একটি আন্দোলন ও একটি বিষ্ময়কর প্রতিভা। যুগ নয়, শতাব্দীর ক্ষণজন্মা ইসলামী আন্দোলনের এক অগ্রসেনানী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সেরা মেধাবী ছাত্র তিনি। যিনি একাধারে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। মেধাবীদের সাহসী ঠিকানা শহীদি কাফেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের মত একটি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হিসেবে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন।

মালেক চাচাকে দেখিনি কিন্তু যেভাবে চিনেছি

সেই ছোটবেলা থেকেই শুনেছি শহীদ আবদুল মালেক নামে আমাদের একজন চাচা ছিলেন। যিনি ছিলেন খুবই মেধাবী ছাত্র। গ্রামের শিক্ষিতজনেরা পড়ালেখার বিষয় এলেই বলতেন তোমাদেরকে ভালো করে পড়ালেখা করতে হবে, শহীদ মালেকের মতো ছাত্র হতে হবে। গ্রামের কেউ বলত শহীদ আবদুল মালেক, আবার কেউবা বলত শহীদ মালেক। আমরা শহীদ শব্দটা চাচার নামের অংশই মনে করতাম।

মায়ের দোয়া

স্বপ্নের মাঝে সেই হাসি মুখ দেখতে যেন পারি। ডিম ভাজি আর পান্তা ভাত দেখলে হত খুশি হয়নি বলা ‘জাদু’ তোকে কতো ভালোবাসি। তোর কারণে আজকে আমার অনেক ছেলে সম্মান ও ভালোবাসা দিচ্ছে ওরা ঢেলে। দু’চোখ আমার ছলছল অনেক দিন পরে দোয়া করি মুজাহিদরা আসুক ঘরে ঘরে।

২৮ অক্টোবর ও আমার প্রাণপ্রিয় আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল

২৮ অক্টোবরের সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা আমি মা হয়ে কোন দিন ভুলতে পারব না। সেই দৃশ্য মনে পড়লে কষ্টে আমার প্রাণ ফেটে যায়। তবে এ জন্য গর্ববোধ করি এ মৃত্যু সাধারণ কোন মৃত্যু নয়। এ মৃত্যু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের, এ মৃত্যু আল্লাহর জমিনে অন্যায়কে দূর করে ন্যায় ও হক প্রতিষ্ঠার জন্য। জীবনকে বিলিয়ে দেয়ার এ মৃত্যু সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, “তোমরা ওদেরকে মৃত বলো না বরং ওরা জীবিত কিন্তু তোমরা অনুধাবন করতে পার না।”

শিপন আমার গর্ব

পড়াশোনার প্রতি ছিল তার যথেষ্ট আগ্রহ। তার এই আগ্রহ দেখে আমি এবং তার বাবা সিদ্ধান্ত নিই তাকে হাফেজ বানাবো। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত গোড়ান নাজমুল হক সিনিয়র মাদরাসা থেকে পড়ার পর হেফজখানায় আমরা তাকে ভর্তি করিয়ে দিই। হেফজ শেষ করে তামিরুল মিল্লাত মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। এখান থেকে দাখিলে ১১তম স্থান অধিকার করে। মানুষের সাথে সে খুব সহজেই মিশে যেত। হাসি এবং গল্পের মাধ্যমে যে কোন আসরকে প্রাণবন্ত করতে শিপনের জুড়ি ছিল না। মানুষের যে কোন বিপদ কিংবা সমস্যা সমাধানে সে দ্রুত সাড়া দিত। যেমন এক ছেলে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা উঠলে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তির পর দেখা গেল তার ওষুধের টাকা নেই। সে তার নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ঐ ছেলের ওষুধ কিনে দেয় এবং সারারাত তার বিছানার পাশে থেকে সেবা-শুশ্রুষা প্রদান করে ভোরে পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরে। এলাকার এক বৃদ্ধ লোকের কাছ থেকে ছিনতাইকারীরা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিলে ঐ লোকটিকে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া প্রদান করে তার নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। এলাকায় সে এতই ভালো হিসেবে পরিচিত ছিল যে, চার বছর ধরে মসজিদে তারাবি পড়িয়েছে। সরকারি বিজ্ঞান কলেজে অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে তার আচরণে মুগ্ধ হয়ে হিন্দু ছেলেরা পর্যন্ত বায়তুলমালে অর্থ প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করত। শহীদ হওয়ার আগের বছর ২০০৫ সালে গোড়ানের এক বাড়িতে তারাবির ইমামতি করে।

আমি শহীদের গর্বিত মা

আমার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় মো: রফিকুল ইসলাম। আমার বড় বোনের কোনো সন্তান না থাকায় আমাদের পরিবারে তাকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকত। এমনকি রফিকুলের বয়স যখন ২ বছরের একটু বেশি, তখনও সে মায়ের দুধ ছাড়েনি, সে বয়সেই তার নানা ও তার খালা তাকে নিয়ে যান এবং আদর যত্নে নিজেদের কাছে রেখে দেন। এরপর আমার কোলজুড়ে আসে দ্বিতীয় ছেলে ওহাব। এভাবেই সময়ের ব্যবধানে খালার কোলেই বড় হতে থাকে রফিকুল। স্বামী ও সন্তানহীনা তার খালা তাকে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। আর রফিকুল তার নানা-নানী এবং খালার আদরে থাকতেই পছন্দ করত। কিন্তু এ আদর বেশি দিন তার কপালে টেকেনি। মাত্র ৫ বছর বয়সে তার নানী ও ৭ বছর বয়সে নানা ইন্তেকাল করেন। এরপর খালার বাসাতে থেকেই তার স্কুলজীবন শুরু হয়। তারপর সে মাঝে মাঝে আমাদের কাছে এসে থাকত আর চলে যেত। রফিকুল যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন থেকেই আমরা জানতে পারি সে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে জড়িত হয়েছে।

মাসুম আমার চক্ষুশীতলকারী সন্তান ছিলো

ইসলামের দুশমনরা মাসুম, শিপন, মুজাহিদদের হত্যা করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কাজকে বন্ধ করে রাখতে পারেনি। ওরা নেই, আরো মুজাহিদ এগিয়ে আসছে ওদের শূন্যস্থান দখল করার জন্য। আল্লাহর পথে বাধা দিতে গিয়ে তারাই ধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে ফেরাউন ও নমরুদের মতো।

জান্নাতের দু’টি পাখি

শহীদেরা মরে না, তারা অমর। তাদেরকে অন্য মৃতদের মধ্যে শামিল করা যায় না। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে একাধিকবার বলেছেন। সূরা বাকারায় ১৫৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদের মৃত বল না বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারো না।