ইসলামে নারী শিক্ষা প্রফেসর - ড. আবুল কালাম পাটওয়ারী
ইসলাম বিশ্বমানবতার চিরন্তন স্বভাবধর্ম; যা মানব সভ্যতার ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশের ধারায় পূর্ণতা লাভ করে মহানবী (সা) এর মাধ্যমে। সামগ্রিক জীবন পদ্ধতিরূপে ইহকালিন জীবনে দৈহিক, মানবিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের এবং পরকালিন জীবনে সার্বিক মুক্তির বিধি বিধান ও পথনির্দেশনা রয়েছে ইসলাম ধর্মে। ইসলামী জীবন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জন এবং তদানুযায়ী আদর্শ জীবনযাপন ও আদর্শ সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে রাসূল (সা:) স্বয়ং ইসলামী শিক্ষাপদ্ধতি প্রবর্তন করেন।
ইসলামের বিশ্বজনীন প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসলামী শিক্ষা পদ্ধতির প্রকৃতি ও পরিধি ও অতি ব্যাপক এবং কালের আবর্তন ও বির্তন এবং মানব সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সংগতি রক্ষা করে চলার গুণসম্পন্ন। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার গতিশীলতা ও ব্যাপকতার প্রমাণ রয়েছে মহা নবীর শিক্ষা সম্পর্কিত কর্মসূচি ও কর্মতৎপরতায়। রাসূল (সা) বলেছেন, “আমি একজন শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি'। কাজেই বলা যায়, রাসূল (সা) এর প্রবর্তিত শিক্ষা পদ্ধতি সর্বকালের এবং সর্বজাতির পুরুষ ও মহিলা এর জন্য অনুকরণীয় আদর্শস্বরূপ।
শিক্ষার প্রতি রাসূল (সা) এর গুরুত্ব
মানব জাতিকে মূর্খতার অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য রাসূল (সা) এর আবির্ভাব হয়েছিল। তাই তাঁর ওপর অবতীর্ণ প্রথম বাণী ছিল, ‘পড় তোমার সৃষ্টিকর্তা প্রভুর নামে, তিনি মানুষকে আলাক থেকে সৃষ্টি করেছেন। পড়, তোমার রব অতীব মহান। তিনি মানুষকে দিয়েছেন এক অজানা জ্ঞানের সন্ধান' (সূরা আলাক : ১-৫) আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, ‘জ্ঞানও মুখরা কি কখনও সমকক্ষ হতে পারে?' (সূরা যুমার : ৯) তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে অধিক ভয় করে । (সূরা ফাতের : ২৮)
জ্ঞান অর্জনের প্রতি রাসূল (সা) পুরুষ ও নারী সকলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন । প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন ফরয। (১) (ইবনে মাযা) এ ফরয অন্যান্য ফর ইবাদতের মতই।
‘আল্লাহ যখন কোন ব্যক্তির কল্যাণ করতে চান তখন তাকে দ্বীনের ইলম দান করেন।' (বুখারী ও মুসলিম)
যে ব্যক্তি জ্ঞান শিক্ষার জন্য পথে বের হয় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথের যাত্রী থাকে।' (তিরমিযি) (৩)
জ্ঞান অর্জন করা একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত । জ্ঞান না থাকলে ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করে না, তাই মহান নবী (সা) নফল ইবাদতের চেয়ে জ্ঞানচর্চাকে অধিক সোয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য করেছেন। ‘রাতে কিছুক্ষণ জ্ঞানচর্চা, এক হাজার রাকাত নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম'। (তিরিমিযি) (৪)
‘যে জ্ঞান অর্জনের সময় মৃত্যু বরণ করে সে শহীদ হিসেবে মৃত্যু বরণ করবে। (৫)
ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য
১. ইসলামী শিক্ষার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো: খেলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্য যোগ্য লোক তৈরি করা। মানুষ আল্লাহর খলিফা। খেলাফতের এ দায়িত্ব পালনের জন্যে যে ধরনের যোগ্যতা দক্ষতা ও বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন সে জ্ঞান অর্জনই হবে শিক্ষার মূল লক্ষ্য।
২. আল্লাহর খাঁটি বান্দা তৈরি করা: আল্লাহর মানুষদের তার বন্দেগি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর খাঁটি বান্দাহ তৈরি করা।
৩. আল্লাহর পরিচিতি লাভ: আল্লাহর সঠিক পরিচয় লাভ করাই হবে এর উদ্দেশ্য।
৪. রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যোগ্য লোক সৃষ্টি শিক্ষার মাধ্যমে এমন একদল লোক তৈরি করতে হবে যারা একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম এবং সে রাষ্ট্র পরিচালনায় খোদাভীরুতা, আমানতদারি ও সততা এবং যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারে।
৫. আখেরাতের জবাবদিহিতা: সর্বোপরি ইসলামী শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে এমন একদল যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা যারা মানবজাতিকে মানুষের গোলামি থেকে মুক্ত করে আল্লাহপাকের খাঁটি বান্দায় পরিণত করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখি, এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাসূল (সা)-এর মসজিদে নববীর শিক্ষালয় থেকে আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী (রা) এর মত শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র নায়ক বের হয়েছেন। খালিদ বিন ওয়লিদ, সায়াদ ইবনে আবি আককাস (রা), হামযা (রা), জাফর ইবনে আবি তালিবের (রা) এর মত শ্রেষ্ঠ সেনাপতিগণ বের হয়েছেন। ইবনে আব্বাসের মত প্রখ্যাত মুফাসসির, আবু হুরাইরাহ, আয়েশা ও উম্মে সালমা (রা) এর মত মুহাদ্দিস ও ফকীহ, মুয়ায ইবনে যাবাল আবু মুসা আশয়ারী (রা) এর মত স্টুডিয়াস, আসেম ইবনে সাবেত, মুহাম্মদ ইবনে সালমা, কয়েম ইবনে সায়াদের (রা) মত পুলিশ অফিসার, উবাদা ইবনে সামেত, আবদুল্লাহ ইবনে হায়াফা, সালিত ইবনে উমরের (রা) মত কূটনীতিবিদ বের হয়েছেন । ইসলাম গ্রহণের পূর্বে এ লোকগুলো মূর্খ ছিল না। তখনও তারা কমবেশি পড়ালেখা জানতেন । কিন্তু সে শিক্ষা দ্বারা তারা আদর্শ চরিত্রবান ও সভ্য মানুষ হতে পারেননি। বরং রাসূল (সা) প্রণীত তাওহিদ ও ঈমানভি- ত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে এ লোকগুলো শ্রেষ্ঠ মানবিক গুণে গুণান্বিত হয়ে ইতিহাসে সেরা মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন ৷
সুতরাং যেসব প্রত্যয় ও আদর্শের জন্য একটি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় শিক্ষা ব্যবস্থাই তা জাতির ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভেতরে অনুপ্রবিষ্ট করে। কাজেই একটি জাতির ধর্ম ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ হওয়া উচিত শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। অধ্যাপক Herman H Hors বলেন, শিক্ষা হচ্ছে শারীরিক মানসিক দিক দিয়ে বিকশিত মুক্ত সচেতন মানব সত্তাকে খোদার সঙ্গে উন্নতভাবে সমন্বিত করার একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া । আল্লামা ইকবাল বলেন : 'জ্ঞান বলতে আমি ইন্দ্রিয়ানুভূতি ভিত্তিক জ্ঞানকেই বুঝি। কারণ জ্ঞান শারীরিক শক্তি প্রদান করে এবং এ শক্তি দ্বীনের অধীনে হওয়া উচিত। এটা যদি দ্বীনের অধীনে না হয় তবে তা নির্ভেজালভাবে পৈশাচিক”। ইকবাল শিক্ষাকে আদর্শিক বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে চেয়েছেন ধর্মনিরপেক্ষ জ্ঞান ও শিক্ষাকে তিনি শয়তানি জ্ঞান ও শিক্ষা বলেই গণ্য করেছেন ।
কাজেই শিক্ষার প্রথম কাজই হওয়া উচিত ছাত্রদেরকে তাদের ধর্ম ও আদর্শে অনুপ্রাণিত করা। তাদেরকে শেখানো উচিত জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য। তাদেরকে আরো শেখাতে হবে এ বিশ্বে মানুষের পজিশন, তাওহিদ রিসালাত ও আখেরাতের ধারণা। ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনের সাথে তার সম্বন্ধ। ইসলামী নৈতিকতা, ইসলামী জীবন পদ্ধতি ইত্যাদি শিক্ষার মাধ্যমে এমন লোক তৈরি করা উচিত যাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনে ইসলামী আদর্শের কার্যকারিতা সম্বন্ধে গভীর বিশ্বাস থাকবে।
রাসূল (সা) এর যুগে নারী শিক্ষা
মহানবী (সা) ভাল করেই জানতেন একটি আদর্শ সমাজ গঠন করতে হলে নারী- সকলকে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে, তাই তিনি নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন, তালাবুল ইলমি ফারিদাতুন আলা কুল্লি মুসলিমিন বলে নর-নারী সবাইকে বুঝিয়েছেন ।
হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যাক্তি কন্যা সন্তানের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে, তাকে উত্তমভাবে লালন পালন করে ঐ কন্যা সে ব্যক্তির জাহান্নামের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে (বুখারী ও মুসলিম)। (১০)
যে ব্যক্তির অধীনে কোন দাসী থাকে, সে যদি তাকে উত্তমরূপে লেখাপড়া ও শিষ্টাচার শিখিয়ে স্বাধীন করে দেয়, এবং বিবাহ করে সে ব্যক্তি দু'টি প্রতিদান পাবে (বুখারী) (১১)
এ হাদীসে শুধু নিজ কন্যাসন্তান নয় বরং দাসীদেরকেও সচ্চরিত্র ও সুশিক্ষা প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
ইবনে হুরায়েজ (রা) বর্ণনা করেন, কোন এক ঈদুল ফিতেরের দিনে রাসূল (সা) সালাত আদায় শেষে খুতবা দিলেন। খুতবা শেষে তিনি মহিলাদের কাছে গেলেন এবং তাদেরকে কিছু প্রয়োজনীয় উপদেশ দিলেন। (১২) সমাবেশ খুব বড় ছিল বলে মহিলারা প্রথম ভাষণ শুনতে পায়নি যে কারণে তিনি তাদের কাছে পুনরায় গিয়ে উপদেশ দিলেন। আর এটা ছিল শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের বৈধ অধিকার।
শিক্ষায় অধিকতর সুযোগ লাভের জন্য রাসূল (সা) এর নিকট মেয়েদের দাবি
আবু সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহর (সা) খিদমতে হাজির হয়ে বলল হে আল্লাহ রাসূল: আপনার হাদীস পুরুষরা নিয়ে গেল । অন্য বর্ণনায় আপনার খিদমতে আমাদের তুলনায় পুরুষদের প্রাধান্য অধিক। সুতরাং আপনি আমাদেরকে আল্লাহর প্রদত্ত ইলম থেকে কিছু শিক্ষাদানের জন্য একটা দিন নির্ধারণ করে দিন। যে দিন আমরা সবাই আপনার খিদমতে হাজির হবো, জবাবে রাসূলল্লাহ (সা) বললেন, অমুক দিন অমুক স্থানে তোমরা সমবেত হবে। তারা সমবেত হলে রাসূলুল্লাহ (স) সেখানে উপস্থিত হয়ে আল্লাহপ্রদত্ত ইলম থেকে তাদেরকে কিছু শিক্ষাদান করলেন। এরপর বললেন, তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান হবে জাহান্নাম তার জন্য হারাম হবে। এক মহিলা বললেন হে আল্লাহ রাসূল (সা) যদি দুটি হয়? তখন রাসূল (সা) বললেন দুই (বুখারী। (১৩)
হাফেজ ইবনে হাজার (রা) বলেন, এ হাদীসে মহিলা সাহাবীদের দ্বীনি ইলম অর্জনের অধীর আগ্রহের প্রমাণ পাওয়া যায়।
নিঃসন্দেহে সত্য যে এটা ছিল নারী সমাজের অধীর আগ্রহ। মসজিদে নববীতে রাসূল (সা) মুখনিসৃত বাণী শ্রবণ করাই যথেষ্ট মনে করলেন না বরং এ জন্য বিশেষভাবে আবেদন পেশ করলেন এবং রাসূল (সা) তাদের এ দাবি পূরণ করলেন।
রাসূল (সা) ও সাহাবীদের যুগে নারীদের জ্ঞানচর্চা
অনেকে শিক্ষালাভ করা এবং ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশুনা করার উদ্দেশ্যে নারীদেরকে তাদের ঘরের বাইরে আসার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। বলা হয় পিতা বা স্বামীই তাদের শিক্ষাদানের জন্য যথেষ্ট । একথা বলে তাদেরকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে মূর্খতা ও অজ্ঞতার অন্ধকারে ঠেলে দেয়। তাদেরকে না তাদের পিতা শিক্ষা দান করেন, না স্বামী। যারা নিজেরাই অজ্ঞ তারা আবার কী করে অন্যকে শিক্ষা দেবে।
যেহেতু বিদ্যা শিক্ষা করা নারী-পুরুষের সবার জন্য ফরয, তাই আমরা দেখি ইসলামের প্রাথমিক যুগে উম্মাহাতুল মুমিনীন, মহিলা সাহাবী তাবেঈ ও তাবে তাবেঈ মহিলাগণ হাদীস ও ফিকহের মাসয়ালা মাসায়েল বর্ণনার ক্ষেত্রে অতীব উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। এমনকি আরবি সাহিত্য কবিতা চর্চা ও ভাষা জ্ঞানের তারা পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। হাদীস বর্ণনাকারী ইমামদের অনেকেই নির্বিঘ্নে মহিলা সাহাবী ও তাবেঈদের থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ নারীদের সূক্ষ্ম অনুভূতি দান করেছেন যা তাদেরকে শিক্ষা ও ধর্মের প্রতি আগ্রহী করে যদি তাদেরকে সঠিকভাবে জ্ঞানার্জনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। কাতারের প্রধান বিচারপতি শেখ যায়েদ বলেন -নারীরা দ্বীনি চরিত্র ও উত্তম শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে অগ্রগামী। যদি তারা এমন শিক্ষক শিক্ষিকা পায় যারা সৎপথের নির্দেশনা দিতে পারেন, তাহলে তারা শ্রবণ ও অনুসরণে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। (১৫)
জ্ঞান অর্জনে নারীদের ভূমিকা
১. কিরাত ও তাফসির বিষয়ে জ্ঞান: হযরত আয়েশা, হাফসা উম্মে সালমা, উম্মে ওয়ারাকা (রা) পুরা কুরআন শরীফ হিফজ করেছিলেন, হিন্দা বিনতে উসায়েদ, হারিসা, উম্মে সাদ (রা) কুরআনের অধিকাংশ অংশের হাফেজা ছিলেন। উম্মে সালমা পবিত্র কুরআনের দরস দিতেন। কুরআন পাকের তাফসির বর্ননায় হযরত আয়েশা (রা) এর বিশেষ দক্ষতা ছিল। সহীহ মুসলিম শরীফের শেষাংশে তাঁর তাফসীরের কিছু উল্লেখ করা হয়েছে। (১৬)
২. হাদীস বর্ণনা ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা: রাসূল (সা) এর সকল স্ত্রীগণ কমবেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন, তবে বিবি আয়েশা (রা) ছিলেন সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী নারী ও পুরুষদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে। আয়েশা (রা) মোট ২২১০ খানা হাদীস বর্ণনা করেন । বড় বড় সাহাবীগণ তার নিকট অনেক বিষয় জেনে নিতেন। কেহ কেহ বলেন, ইসলামী শরিয়তের বিধানের এক-চতুর্থাংশ তাঁর কাছে থেকে পাওয়া গিয়েছে। (১৭)
এছাড়াও উম্মে আতীয়া, আসমা বিনতে আবু বকর, উম্মে হানি ও ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা) বহু সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেন।
৩. ফিকহ: ফিকহ বিষয়ে হযরত আয়েশা (রা) এর এত অধিক ফতোয়া রয়েছে যে, তাতে কয়েক খানা গ্রন্থ হতে পারে। উম্মে সালমা (রা) এর ফতুয়াসমূহ একত্র করলে একটা রেসালা হতে পারে। হযরত সাফিয়া, হাফসা, হাবীবা, মায়মুনা, ফাতেমা, কয়েস খাওলা, উম্মে দারদা, উম্মে আয়মন (রা) আরো অনেকে ফতোয়া দিতেন। (১৮)
৪. ফারায়েয: এ বিষয়ে আয়েশার (রা) বিশেষ সুনাম ছিল। বিশিষ্ট সাহাবাগণ তার কাছ থেকে ফারায়েয জেনে নিতেন। উম্মে সালমা, উম্মে সুলাইম (রা) ফিকহ ও ফারায়ে জ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন। (১৯)
৫. কবিতা রচনা ও আবৃত্তি: খানসা, সফিয়া, আতিকা, যয়নব, উম্মে আয়মন, মায়মুনা, রুকাইয়া (রা) কবিতা রচনায় প্রসিদ্ধ ছিলেন। খানসা (রা) ইসলাম গ্রহণ করার জন্য মদীনা এলে রাসূল (সা) দীর্ঘক্ষণ তার কবিতা শুনেন। শোকগাথা বা মর্সিয়া রচনায় হযরত খানসার (রা) সমকক্ষ কেউ ছিল না। ভাষাবিদ ও কাব্য সমালোচকদের মতে খানসা (রা) এর মত কোন মহিলা কবি আর জন্মায়নি। ১৮৮৮ সালে বৈরুত থেকে তার কবিতার একটি বৃহৎ সংকলন প্রকাশিত হয়। (২০)
৬. যুক্তিবিদ্যায়: হযরত আয়েশা (রা) এতে পারদর্শী ছিলেন, তিনি আল্লাহর দর্শন গায়েবি ইলম, মিরাডা, খিলাফতের ক্রমবিকাশ ইত্যাদি বিষয়ে যে ধারণা দিয়েছেন তাতে তার গভীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে।
৭. ইতিহাস: ইসলামের ইতিহাসের কতিপয় বিশেষ ঘটনা আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত যেমন অহির ধরন, ইফকের ঘটনা, বদর, ওহুদ ও খন্দক যুদ্ধের ঘটনাসমূহ ও মক্কা বিজয়, মহিলাদের বায়াত ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক ইতিহাস তাঁর নিকট পাওয়া যায়।
৮. বক্তৃতা ও ভাষণ: আসমা বিনতে সাকান (রা) এতে পারদর্শী ছিলেন।
৯. চিকিৎসা বিজ্ঞান: চিকিৎসা অস্ত্রোপচারে রফিদা আসলামিয়া, উম্মে মুতা, উম্মে কারাশা, হামনা বিনতে হাজাশ, মায়ায, লায়লা, উম্মে জিয়াদ, রু বী উম্মে আতীয়া উম্মে সুলাম (রা) গণ অধিক দক্ষ ছিলেন। রাফিদা (রা) এর তাঁবু মসজিদে নববীর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ছিল এবং সেখানে অস্ত্রোপচারের কেন্দ্র ছিল। (২২)
হযরত আয়েশা (রা) বলেন, আমি রাসূলের (সা) সাথে সাতটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি, আমি এলে রাসূল (সা) এর কাছ থেকে সেবার সুবিধার্থে মসজিদের মধ্যে তার জন্য তাঁবু খাঁটিয়ে দিলেন। (বুখারী) উম্মে আতীয়া (রা) বলেন, আমি রাসূলের (সা) সাথে সাতটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি, আমি সৈনিকদের জন্য খাদ্য তৈরি করতাম আর আহতদের ও রোগীদের সেবায় থাকতাম (মুসলিম) (২৩)
১০. ইসলামী সংগীত ও গান: বিবাহ-শাদি ও ঈদের দিনে আনসার কিশোরী মেয়েরা গীত ও গান করতেন। এমনকি বিবাহ-শাদি ও খুশির অনুষ্ঠানে নবী করিম (সা) এর উপস্থিতিতেই কবিতা আবৃত্তি করা হতো। মদীনাতে আরনব নাম্নী এক কিশোরী ছিলেন। নবী করিম (সা) এর অনুমতিক্রমে আয়েশা (রা) তাকে আনসারদের বিবাহে গীত করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। (২৪)
কোন এক ঈদের দিনে আবু বকর (রা) আয়েশা (রা) এর ঘরে গেলেন এবং দুটি মেয়েকে গান করতে দেখলেন, ঘরে নবী করিম (স) চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলেন। আবু বকর (রা) উভয়কে গান বন্ধ করতে ধমক দিলেন। তখন রাসূল (সা) বললেন, আবু বকর, ছেড়ে দাও আজ ঈদের দিন (বুখারী ও মুসলিম) (২৫)
সমাজকল্যাণ ও শিক্ষায় অংশগ্রহণ
শিক্ষার সাথে সাথে তারা সমাজ জীবনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করতেন। পুরুষদের পাশাপাশি সমাজ ও জাতির কল্যাণে তারা নিয়মিত এগিয়ে আসতেন। বিশেষ ও সাধারণ কাজের সকল ক্ষেত্রে তাঁরা অংশ নিতেন জীবনের স্বাভাবিক প্রয়োজনের তাগিদে। তবে এ অংশগ্রহণ শরিয়তের নিয়মনীতি বহির্ভূত ছিল না। মেয়েরা সব সময় নির্ধারিত নিয়মনীতি মেনে চলতো এবং কখনো তা ভঙ্গ করতো না, শিক্ষার সাথে সাথে নারীরা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করতো। যেমন-সমাজকল্যাণ, সমাজসেবা, শিক্ষকতা, কায়িক পরিশ্রম, কারিগরি, পশু পালন, কৃষিকাজ, হস্তশিল্প, ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা, নার্সিং, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, হিসাব-নিকাশ, ব্যবসা ও সেলাই । তবে দুটো জিনিস তাদেরকে এ কাজ করতে বাধ্য করেছিল। এর মধ্যে একটি ছিল নিজেকে ও পরিবার পরিজনকে দারিদ্র্যমুক্ত রেখে মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করার দায়িত্ববোধ। দ্বিতীয়ত, উপার্জিত অর্থ সদকা করে অধিক পুরস্কার লাভ করা । রাসূল (সা) এর যুগে প্রায় সকল সাহাবীই (রা) কাপড় বুনতেন। (২৬)
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
হযরত সফিয়া (রা) ইলম চর্চার জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কুফা থেকে অনেক মহিলা লেখাপড়া শিক্ষা ও মাসয়ালা জানার জন্য সেখানে আসতেন। (মুসনাদ হযরত আসমা বিনতে উমাইল (রা) নিরক্ষরদের পড়াতেন (বুখারী)
শিক্ষকতা: শিক্ষা-দীক্ষায় হযরত হাফছা (রা) এর যথেষ্ট আগ্রহ ছিল, পুরুষদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, হামযা ইবনে আব্দুল্লাহ। আবদুর রহমান (রা) মহিলাদের মধ্যে ছফীয়া বিনতে আবু ওবায়দা (রা) এবং উম্মে মোবাশশের আনসারী ছিলেন তার ছাত্রদের পর্যায়ভুক্ত। (২৭) অন্য দিকে হযরত শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ ছিলেন হাফসা (রা) এর শিক্ষিকা।
চাকরি
হযরত উমর (রা) বিনতে আবদুল্লাহকে রাজধানী মদীনার বাজার পরিদর্শক হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন এবং কোন সিদ্ধান্ত দানের ব্যাপারে তার মতামতকে সর্বোপরি স্থান দিতেন। (ইসাবা) আনসারীদের অধিকাংশ মহিলা কৃষিকাজের সাথে জড়িত ছিলেন। আর মোহাজির মহিলাদের মধ্যে যারা মদীনার কর্ষণযোগ্য ভূমি এলাকায় বাস করতেন তারাও কৃষিকাজে জড়িত ছিলেন, হযরত আসমা (রা) তাদের মধ্যে অন্যতম। ২৭
হযরত জাবেরের (রা) খালা স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দতের মধ্যে খেজুর কাটতে চাইলে, এক ব্যক্তি তাকে নিষেধ করে, তিনি বিষয়টি রাসূল (সা:) কে জিজ্ঞেস করলে রাসূল (স) বললেন, হ্যাঁ তুমি খেজুর কাটতে পার, কারণ তুমি তো এগুলো অবশ্য দান করবে। (মুসলিম)
কাব ইবনে মালিকের দাসী মদীনার সালা পাহাড়ে ছাগল চরাত, একবার একটি বকরী অসুস্থ হলে সে ধারালো পাথর দিয়ে জবেহ করল, এ ব্যাপারে রাসূল (সা:) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি খাওয়ার অনুমতি দিলেন। (বুখারী) হযরত খাদীজা (রা) বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। খাওলা, মারিকা, সাকাফিয়া এবং বিনতে মাথাবাবা আতর ও খুশবুর ব্যবসা করতেন। ২৮
এক কৃষ্ণাংগ মহিলা মসজিদে নববী ঝাড়ু দিতো, সে মারা গেলে রাসূল (সা:) তার কবরের কাছে এসে সালাতে জানাযা আদায় করলেন। (বুখারী)
দ্বিতীয় হাকামের সময় মহিলা পন্ডিতদের অবদান
স্পেনের মুসলিম মহিলাগণ ছিলেন উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারী। উৎকৃষ্ট রচনার জন্য তাদের অনেকেই সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। লাবানা, ফাতিমা, আয়েশা, রাজিয়া ও খাদিজা ছিলেন স্পেনের মুসলিম পন্ডিতদের মধ্যে উলেখযোগ্য। শিক্ষা ও জ্ঞানের মহাত্মে লাবানা ও ফাতেমা দ্বিতীয় হাকামের দরবারে ও গ্রন্থাগারে উচ্চপদ অলংকৃত করেছিলেন। বৃদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও ফাতিমা সুন্দর হস্তাক্ষরে খলিফার জন্য অনুলিপি তৈরি করতেন। যৌবন কালে তিনি দুষ্প্রাপ্য পান্ডুলিপির খোঁজে কায়রো, দামেস্ক ও বাগদাদের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে যেতেন। আয়েশা (রা) তার সময়কালের একজন বিশিষ্ট কবি ছিলেন, তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে দুর্লভ ও মূল্যবান বইয়ের প্রচুর সংগ্রহ ছিল। খাদিজার একটি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল। হাকামের জনৈক ক্রীতদাসী ব্যাকরণ, গণিত এবং অন্যান্য বিজ্ঞানে সুশিক্ষিতা ছিলেন, তিনি সুন্দর পত্র লিখতে পারতেন। হাকাম অনেক সময় তাকে দিয়ে পত্র লিখাতেন।
ঐতিহাসিক ইবনে আল ফেয়াজ বলেন যে, একমাত্র কার্ডোভার পূর্ব শহরতলিতেই কুফী হরফে কুরআন শরীফ নকলের কাজে একশত মহিলা নিয়োজিত ছিল। আহমদের কন্যা আয়েশা সুন্দর হস্তাক্ষরে কুরআন নকল করতেন।
নারী শিক্ষার ক্ষেত্র ও সীমা
মূল শিক্ষা দীক্ষার দিক দিয়ে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অবশ্য শিক্ষার ক্ষেত্র ও প্রকারে পার্থক্য থাকা আবশ্যক। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো উহার দ্বারা তাকে উৎকৃষ্ট স্ত্রী, উৎকৃষ্ট মাতা, গৃহিণীরূপে গড়ে তোলা। যেহেতু তার প্রকৃত কর্ম ক্ষেত্র গৃহ, সেহেতু তাকে এমন শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন যা এ ক্ষেত্রে তাকে অধিকতর যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে। উপরন্তু তার জন্য ঐ সকল জ্ঞান- বিজ্ঞান শিক্ষা করা প্রয়োজন যা তাকে প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তুলতে সক্ষম । তার চরিত্র গঠন ও সামাজিক জীবন যাপনের যাবতীয় বিধি বিধান জানার সুযোগ পায় এ ধরনের শিক্ষা প্রত্যেক নারীর জন্য অপরিহার্য।
অতঃপর যদি কোন নারী অসাধারণ প্রজ্ঞা ও যোগ্যতার অধিকারিনী হয় এবং এ সকল শিক্ষা দীক্ষার পর ও অন্যান্য জ্ঞান বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে চায়, তা হলে ইসলাম তার পথে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না, কিন্তু শর্ত হলো সে যেন শরিয়তের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করে।
আসলে নারীর সৃষ্টি উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকে আদর্শ মা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এ প্রাকৃতিক সত্যের ওপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন। কারণ আল্লাহর সৃষ্টির একটা মহৎ উদ্দেশ্য থাকে; মানবজাতির কল্যাণই সে সৃষ্টির উদ্দেশ্য। এ জন্যে আমরা যদি নারীকে তার প্রকৃত দাবি মোতাবেক আসল শিক্ষা না দেই, তা হলে অন্য শিক্ষার মাধ্যমে সে একজন আদর্শ নারী, আদর্শ মা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। অথচ আদর্শ মা হওয়ার মধ্যেই নারীর মূল সার্থকতা নিহিত রয়েছে।
সহশিক্ষা
ইসলাম নারীর জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের কোন বিষয়কেই নিষিদ্ধ করেনি, কিন্তু কোন জ্ঞান নারীর স্বভাবসম্মত এবং নারীর জন্য প্রয়োজনীয় তাকে স্থির করে নিতে হবে। তবে এসব জ্ঞান অর্জন করার সময় তাকে শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকেই অর্জন করতে হবে।
ইসলাম সহশিক্ষাকে কখনও অনুমোদন করে না, এ কারণে নারীদের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে তারা শরিয়তের সীমার মধ্য থেকেই যাবতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান অর্জন করতে পারে।
নারীদের ঘর থেকে বের হওয়ার শর্তাবলি
শিক্ষা-দীক্ষা ও যে কোন প্রয়োজনে নারীর ঘর থেকে বের হতে পারবে। তবে ইসলাম সেখানে কিছু শর্ত আরোপ করেছে।
১. বের হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী আদব রক্ষা করে বের হতে হবে। আল্লাহ বলেন, “তোমরা গৃহভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না”। (সূরা আহযাব : ৩৩)
রাসূল (সা) বলেন, ‘তোমাদেরকে প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হলো'। (বুখারী)
২. স্বামী, অভিভাবক, পিতা ও মাতার অনুমতি নিয়ে বের হতে পারবে।
৩. হিজাব পরিহিতা অবস্থায় বের হতে হবে। “হে নবী আপন বিবি, কন্যা এবং মুমিন মহিলাদের বলে দিন তারা যেন তাদের শরীর চাদর দ্বারা আবৃত করে রাখে।” (সূরা আহযাব : ৫৯)
৪. সুগন্ধি লাগিয়ে বের হতে পারবে না। রাসুল (সা) বলেন, ‘যে নারী সুগন্ধি দ্রব্যাদি ব্যবহার করে লোকের মধ্যে গমন করে সে একজন ভ্রষ্টা নারী।' (তিরমিযি)
৫. রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলা যাবে না।
৬. ভদ্র ও নম্রভাবে হাঁটতে হবে, যাতে করে জুতার শব্দ মানুষ শ্রবণ করতে না পারে। আল্লাহ বলেন, “তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।' (সূরা নুর -৩১)
৭. অপরিচিত লোকদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে তা যেন স্বাভাবিক ভাবে বলে। আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সে ব্যক্তি কু-বাসনা করে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।' (সূরা আহযাব : ৩২)
৮. একান্তে কোন অপরিচিত লোকের ঘরে বা দোকানে যেন প্রবেশ না করে। ‘রাসূল (সা) বলেন, একজন নারী ও পুরুষ যেন একান্তে কোন ঘরে না বসে তাহলে তৃতীয় ব্যক্তি সেখানে হয় শয়তান। (তিরমিযি)
সহশিক্ষার কুফল
পাশ্চাত্য সভ্যতা নারী জাতিকে স্বাধীনতা, পর্দাহীনতা ও সহশিক্ষার নামে উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনার চরম সীমানায় পৌঁছে দিয়েছে। প্রবন্ধে তার সামান্য উদাহরণ তুলে ধরা হলো-
১. সাইয়েদ কুতুব বলেন, ‘এক রিপোর্টে দেখা যায়, বর্তমান আমেরিকার একটি শহরের মাধ্যমিক স্কুলে শতকরা ৪৮ জন ছাত্রী অবৈধ গর্ভবতী' ।
২. আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অশ্লীলতার বিবরণ লেবাননের একটি পত্রিকায় উদ্ধৃত করা হয়েছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ১ লক্ষ ২০ হাজার মেয়ে অবৈধভাবে গর্ভবতী হয়েছে। যাদের বয়স বিশ বৎসরের নিচে। উক্ত পত্রিকার হিসাবে দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে ৬০% শতাংশ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। বেশ্যাবৃত্তির কারণে এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যে সব ছাত্র-ছাত্রীরা ভ্রমণে যায় বিভিন্ন অপরাধের কারণে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। (৩১)
৩. কাজী ইবনে লানদস বলেন: ‘আমেরিকার বালিকারা প্রাথমিক স্কুলেই যৌন চর্চা শুরু করে, এগার ও বার বৎসরের ৩২১ জন ছাত্রীর ওপর এক জরিপ করা হয়। তন্মধ্যে ২৫৫ জন যৌন ক্রিয়ায় অভ্যস্ত।' (৩২)
৪. আমেরিকার Oklahoma বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের এক বিদায় অনুষ্ঠানে অতি আনন্দের এক পর্যায়ে সকলে উলঙ্গ হয় রাত ভর নাচের অনুষ্ঠান করে । (৩৩)
৫. সহশিক্ষার কারণে আমেরিকাতে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শতকরা ৪৫% মেয়ে অবৈধভাবে গর্ভবতী হয়ে থাকে, যে কারণে সেখানে মেয়েদের জন্য পৃথক ১০৭টি কলেজ এবং রাশিয়াতে ১২০টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। (৩৪)
৬. আমেরিকাতে ১৭ বছর ও তার কম বয়সের তরুণ তরুণীরা রাত্রিকালীন বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যে সব পিতামাতা রাত ১২ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত তাদের সন্তানদের বাড়িতে আটকে রাখবে না, তাদের জরিমানা ও কারাভোগ করতে হবে। (৩৫)
আজকের আধুনিক নারী কৃষি বিজ্ঞান, পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞান এবং কলা ও প্রকৌশল বিজ্ঞানে বিশেষত্ব অর্জন করেছে। এ ছাড়া সাহিত্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো এ সব জ্ঞান অর্জন করে নারী কি পেয়েছে? আসলে পুরুষের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে নারী তার নিজ কর্মক্ষেত্রের সীমা থেকেই বাদ পড়েছে। পরিণতিতে নারী তার আসল মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছে।
নারী কলকারখানায় লোহা লক্কর টানাটানি করে, দোকানে সেলস গার্ল হিসেবে সওদাপাতির মোড়ক বেচে, নোংরা ফ্যাশন বিলাসিতায় পড়ে, উত্তেজক পোশাক পরে পথে ঘাটে অঙ্গ প্রদর্শনী করে বেড়ালে, সিনেমা, থিয়েটারে, ক্লাবে অসৎ পুরুষদের ভোগের পাত্রী হয়ে থাকার মাধ্যমে কি নারী তার মর্যাদা অর্জন করতে পারে? উপরে পাশ্চাত্য সভ্যতার নারী শিক্ষার যে চিত্র পেশ করেছি তা থেকে একথা স্পষ্ট যে, ইসলামী শিক্ষা ব্যতীত নারীর প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় ।
আজ নারীদের শিক্ষার হার বেড়েছে সত্য কিন্তু তারপরও আজ তারা নির্যাতিত হচ্ছে। ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলন উপলক্ষে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল আইস এড জাস্টিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইউএসআই জিকে আর আই) প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়: ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮ সেকেন্ডে একজন নারী নির্যাতিত ও প্রতি ৬ মিনিটে একজন ধর্ষিতা হয়, ভারতে যৌতুক সম্পর্কিত বিরোধের কারণে প্রতিদিন ৫ জন মহিলাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
পাপুয়া নিউগিনিতে ৬৭ শতাংশ মহিলা সাংসারিক নির্যাতনের শিকার। বাংলাদেশে শুধু দিনাজপুরে ১৯৯৫ জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১৮৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। (৩৬) মার্কিন সমাজে এক সরকারি হিসাবে দেখা যায় শহরাঞ্চলের ২২ শতাংশ ছাত্রের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। ৪টি রাজ্যের ১০টি বিদ্যালয়ে ৭৫৮ জন ছাত্রের ওপর মার্কিন বিচার বিভাগ এ জরিপ পরিচালনা করে। (৩৭)
যুক্তরাষ্ট্র আজ অপরাধের স্বর্গরাজ্য। এ প্রসঙ্গে FBI এর রিপোর্ট নিম্নরূপ :
Official figures completed by the Federal Bureau of Investigation indicates that the crime rate is higher in the United State if than in most other countries and that the rate is continuing to rise. (৩৮) ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এর এক সরকারি তথ্যচিত্র হতে জানা যায় যে, অপরাধের হার অধিকাংশ দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেশি এবং এ হার ক্রমবর্ধমান।
১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ মিলিয়নের অধিক অপরাধ সংঘটিত হয়, এ সকল অপরাধ দমনের পেছনে ব্যয়িত হয় ৮৫ বিলিয়ন ডলার। ডলারের মূল্যমান ৪০ টাকা ধরলে ৮৫ বিলিয়ন ডলার ৩৪০০০০ কোটি টাকা হয় (তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার কোটি টাকা)। ১৯৯২ সালে, যুক্তরাষ্টে অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ মিলিয়নে দাঁড়ায়। এর পেছনে ব্যয় হয় ৪২৫ বিলিয়ন ডলার। (৩৯) ডলারের মূল্য ৪০ টাকা ধরলে ৪২৫ বিলিয়ন ডলার সমান ১৭,০০,০০০ (সতের লক্ষ কোটি টাকা) এ অপরাধের সিংহভাগই কিশোর অপরাধ বলা যাচ্ছে।
Almost half of all serious crimes are committed by persons under 18 years of age and about 75 percent by pesons under 25. (৪০)
১৯৯৫ ইং বেইজিং সম্মেলনের এক রিপোর্টে দেখা যায় পৃথিবীর প্রায় ৬০ বিলিয়ন নারী দারিদ্র্যসীমায় জীবন যাপন করে। শুধু আমেরিকায় ৩৩% জন দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবন যাপন করে এবং ৯.৫ অশিক্ষিত, ৪০% জন এইডস রোগে আক্রান্ত এবং প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একজন নারী মৃত্যুবরণ করে। তেমনিভাবে পৃথিবীর শতকরা ৮০% ভাগ নারী ঘরবাড়ি হারা । (৪১)
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সহশিক্ষার ফলে শিক্ষাঙ্গনে যে বিশ্রী পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে জাতির নৈতিক চরিত্র মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
সহশিক্ষার কারণে অবাধে মেলামেশার ফলে বহু ধরনের সংক্রামক ব্যাধি বিস্তার লাভ করছে। যে কারণে সমাজের অসংখ্য তরুণ তরুণীর মূল্যবান জীবন ধ্বংস হচ্ছে। সহশিক্ষার এ কুফল চিন্তা করে ইসলাম নারীদের জন্য ভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে।
আদর্শবিবর্জিত শিক্ষা
আদর্শ বিবর্জিত শিক্ষা আমাদের জাতীয় চরিত্রকে কলুষিত করেছে। এখানে বিদ্যাপীঠ তৈরি হচ্ছে কিন্তু প্রকৃত অর্থে আদর্শবান লোক তৈরি হয়নি। আজ আমাদের সমাজে সকল স্তরে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে তার একমাত্র কারণ আদর্শবিবর্জিত শিক্ষা। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইংরেজ কবি John Milton বলেন : Education is the hermonious development of body, mind and soul অর্থাৎ শিক্ষা হচ্ছে শরীর মন ও আত্মার সুষম উন্নয়ন- বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা এ তিনটি শর্ত পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে, ফলে তৈরি হচ্ছে দলে দলে চরিত্রহীন ডিগ্রিধারী বিদ্যান পণ্ডিত, আর এরাই দেশের শাসনভার গ্রহণ করে, যার ফলে কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই বেশি হচ্ছে, এর কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে ভিন্ন উৎস থেকে যাদের উদ্দেশ্য ছিল একটি জাতিকে গোলাম বানানো। দুইশত বৎসর এ গোলামি শিক্ষাব্যবস্থায় এ দেশে গড়ে উঠেছিল একটি জেনারেশন। এরা ওদের শিক্ষায় গড়ে উঠেছিল, আমাদের আদর্শ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিরোধী এবং আমাদের ইতিহাসের প্রতি বিদ্বেষী ছিল। এর সমালোচনা করতে গিয়ে আল্লামা ইকবাল বলেন-
‘তুমি অন্যের জ্ঞান অর্জন করছো
অন্যের কাজ থেকে ধার করা রুজি দিয়ে নিজের চেহারা রঙিন করছো।
আমি জানি না তুমি কি, তুমি না অন্য কেউ,
তোমার বুদ্ধিমত্তা অপরের চিন্তার শিকলে বন্দী।
তোমার কণ্ঠের নিশ্বাসটুকুও তো আসছে অন্যের তন্ত্র থেকে
ধার করা ভাষা তোমার কণ্ঠে
তুমি একটি সূর্য, একবার আপন সত্তার দিকে তাকাও
অপরের তারকার আলো তুমি চেয়ো না
সভার মোমবাতির চারিদিকে তুমি আর কতকাল নাচবে?
তোমার হৃদয় অনুভূতি যদি থাকে তাহলে অবিলম্বে আপন আলো জ্বালো'। (৪২)
কবি এখানে ধার করা শিক্ষার পরিবর্তে আমাদের নিজস্ব ইতিহাস ও আদর্শিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।
শেষ কথা
একটি শিক্ষাব্যবস্থাকে রাতারাতি বদলে দেয়া যায় না, আমরা চাই বাংলাদেশে শতকরা অর্ধেক সংখ্যক মুসলিম নারী তাদের চিন্তা চেতনা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থায় গড়ে উঠুক এবং পুরুষের পাশাপাশি মুসলিম নারীরা দেশ ও জাতি গঠনে এগিয়ে আসুক। বর্তমান সরকারের নিকট আমাদের এ প্রত্যাশা।
সুপারিশ
১. ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে উচ্চ শিক্ষার সর্বস্তরে সহশিক্ষা বিলুপ্ত করে বর্তমান দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলাদা শিফট চালু করা যেতে পারে।
২. ইসলামের মৌলিক আকিদাহ, ইসলামী তাহজিব ও তামাদ্দুন অনুযায়ী জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের নিমিত্তে বিশেষত : বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত, ইসলামের প্রয়োজনীয় আহকাম ও ইবাদতের বিধিবিধান সম্বলিত সিলেবাস প্রণয়ন।
৩. চিকিৎসা বিজ্ঞানে নারীদের জন্য ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা।
৪. নারীদের জন্য অধিক হারে স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ।
৫. মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা মেডিক্যাল কলেজ, মহিলা মাদ্রাসা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করা, আপাতত তা সম্ভব না হলে সরকারিভাবে সকল স্তরে ইসলামী পরিবেশ ও পর্দা প্রথা চালু করে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা ।
৬. নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য শিক্ষিত মেয়েদের দিয়ে এলাকাভিত্তিক অথবা বাড়িতে মেয়েদের শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা।
৭. যেহেতু নারীরা সংখ্যা অর্ধেক, সেহেতু তাদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে পুরুষদের সমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং জাতীয় বাজেটে তাদের জন্য সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা।
৮. গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত মহিলাদের জন্য প্রতিদিন অন্তত : দুই ঘণ্টা শিক্ষাদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মালিকদের বাধ্যকরণ।
৯. গৃহ পরিচারিকাদেরকে অক্ষর জ্ঞান দান এবং ধর্মীয় শিক্ষা দানের জন্য গৃহমালিকদেরকে জন্য সংশ্লিষ্ট বাধ্যকরণ।
গ্রন্থপঞ্জি
১। ইবনে মাযা হাদীস নম্বর ২২৪, হাফেজ মযনী বলেন এ হাদীসটি হাসান।
২। বুখারী ১ম খণ্ড পৃ: ১৫০।
৩। তিরমিযি হাদীস ২৬৪৯, রিয়াদুস সালেহীন, অনুচ্ছেদ কিতাবুল ইলম, পৃ: ৫২৬।
৪ । ইউসুফ কানদেহলী, হায়াতুস সাহাবা ৩য় খণ্ড পৃ: ১৪৭।
৫। পূর্বোক্ত ৩য় খণ্ড পৃ: ১৫১।
৬। ড. আবদুর রহমান উমাইরী, রেযাল আনযালাল্লাহ কুরআনা, ২য়, ৩য়, ও ৪র্থ খন্ড, ৫ম সংস্করণ দারুল লাওয়া রিয়াদ ১৯৮৪ ।
৭। অধ্যাপক খুরশীদ আলম, ইসলাম শিক্ষার মূলনীতি, অনুবাদ অধ্যাপক নজির আহমদ, আধুনিক প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা, পৃ: ৫' সন ১৯৯০।
৮। পূর্বোক্ত পৃ: ৮।
৯। পূর্বোক্ত পৃ: ১৫।
১০। সহীহ বুখারী শিষ্টাচার অধ্যায় : সন্তানের প্রতি স্নেহ মমতা চুম্বন ও আলিঙ্গন অনুচ্ছেদ ১৩ খণ্ড ৩৩ পৃ: সহী মুসলিম : আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক, অনুচ্ছেদ : ৮ খণ্ড ৩৮ পৃঃ।
১১। সহীহ বোখারী : বিবাহ অধ্যায় : বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে ক্রীতদাসীকে মুক্ত করে তাকে বিবাহ করা, অনুচ্ছেদ ১১ খণ্ড ২৮ পৃঃ ।
১২। সহীহ বুখারী : ইলম অধ্যায়, মহিলাদের প্রতি উপদেশ শিক্ষাদান সম্পর্কিত ইমামের ভাষণ, অনুচ্ছেদ ১ম খণ্ড ২০ পৃঃ ।
১৩। সহীহ বুখারী : কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা সংক্রান্ত অধ্যায়, নবী
(সা) নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তার সমগ্র উম্মতকে ইসলামের শিক্ষা আল্লাহ তাকে যেভাবে দিয়েছেন ঠিক সে ভাবেই কোন কাটছাঁট না করে বা অতিরঞ্জিত করা ছাড়াই শিক্ষা দিয়েছেন, ১৭ খণ্ড ৫৫ পৃ: মুসলিম ৮ খণ্ড ।
১৪ । ইবনে হাজার ফতুলবারী, ১ম খণ্ড ২০৭ পৃ:।
১৫। আব্দুল হালীম আবু শুফাজ, রাসুলের (সা) যুগের নারী স্বাধীনতা, Wams. ঢাকা ১ খণ্ড পৃ: ৪৩।
১৬। উসুদুল গাবা ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৮২।
১৭। তাবাকাতে ইবনে সাদ, ২য় খণ্ড, পৃ: ৭২১ ।
১৮। যারকানী, আল এলাম, ৩য় খণ্ড, পৃ: ৭২১।
১৯। উসুদুল গাবা, ৫ম খণ্ড, ৪৫১ পৃঃ।
২০। মাওলানা সাঈদ আনসারী : সিয়ারুস সাহাবিয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৮৬, পৃ: ১৩।
২১। ইসাবা, ৮ম খণ্ড, পৃ: ১২।
২২। ইবনে সাদ, ৮ম খণ্ড, পৃ: ২১৩।
২৩। আসাদুল গাবা, ৫ম খন্ড, পৃ: ৩৯৮ ।
২৪ । ইসাবা, ২য় খণ্ড, পৃ: ৬৫৬
২৫। মুসনাদ আহম্মদ, ৫ম খণ্ড, ১৬৬ পৃ:
২৬। যারকানী, ৩য় খণ্ড, ৭২১ পৃ:
২৭। উসাদুল গাবা, ৫ম খণ্ড, ৪৩২ পৃ:
২৮। উসাদুল গাবা, ৫ম খণ্ড, ৪৩২ পৃ:
২৯। Inamudin, S. M. Hispnolibrares Pakistan Hist Society 1961, P. 4
৩০। সাইয়েদ কুতুব, আল ইসলাম অ-সালামুল আলেমী পৃ: ২১; মুহাম্মদ আলী সামুনীর তারবীয়াতুল আওলাদ, ১ম খণ্ড, ২৫১ পৃঃ থেকে গৃহীত।
৩১। আহাদ পত্রিকা সংখ্যা ৬৫০।
৩২। মোহাম্মদ আলী সাবুনী। তারবিয়াতুল আওরাদ ১ম খণ্ড, ২৮০ পৃ:
৩৩। আদ দাওয়া পত্রিকা এপ্রিল সংখ্যা ১৯৭৯ ।
৩৪। পূর্বোক্ত
৩৫। দৈনিক সংগ্রাম, ঢাকা ১০-৭-৯৫ ইং
৩৬। New Later, Vol. 17 August 1995
৩৭। Abnormal physchology and Modern life coleman, P 396 5th edition Scott Foresman and Company, U.S.A
৩৮। সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ১৭ ই মার্চ ১৯৯৫
৩৯। Abnormal Phychology and Modern life Jans c. Coleman p-396
৪০। আল মুজতামে পত্রিকা, ২৯ আগস্ট ১৯৯৫, কুয়েত।
৪১। অধ্যাপক খুরশীদ আহমদ, ইসলামী শিক্ষার মূলনীতি ৬ পৃ: ১৯৯০।
লেখক: চেয়ারম্যান, আল-ফিকহ্ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।