মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আপগ্রেড করতে হবে - শাহ আবদুল হান্নান
আমরা একটা জিনিস লক্ষ্য করছি বা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের সাথে যারা মাদরাসা শিক্ষায় তাদের সাথে চিন্তা চেতনায় মন-মননে কিছুটা অমিল রয়েছে। এর কারণ কী?
এখানে আমি দুটো কথা বলবো। ইংরেজি শিক্ষিতদের ভুল আছে, উনাদেরও ভুল আছে। ইংরেজি শিক্ষিতদের ভুলটা হলো তারা আরবি শিখে না। যেমন আমি। আলেমদের মত আরবি জানি না। যদিও দু'বছর কোর্স করেছি, তাতে আমার অনেক সুবিধা হয়ে গেছে। আমি অল্প বয়সে উর্দু শিখে নিয়েছি। ফলে সারা ভারতের আলেমদের চিন্তাধারা আমার জানতে সুবিধা হয়ে গেছে। ইংরেজি শিক্ষিতদের লোকদের উচিত আরবি শেখার ব্যাপারে আরো যত্নবান হওয়া। আর মাদরাসা শিক্ষা শিক্ষিতদের ভুলটা হলো তাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। বিশেষ করে কওমি মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান সময়, যুগ ও ইসলামের চাহিদা পূরণ করছে বলে আমার মনে হয় না। এ বিষয়ে আমি দুটি কথা বলে বিষয়টি ক্লিয়ার করে দিতে চাই। একটি কথা হচ্ছে আজকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্ররা দেয় কেন? এবং জামেয়া কামরাঙ্গীরচর কিংবা জামেয়া লালবাগ দেয় না কেন? তার একটা জবাব, দুনিয়া চালাতে যে জ্ঞানের দরকার তা জামেয়া লালবাগ কিংবা জামেয়া কামরাঙ্গীরচরের নেই। দুনিয়া চালাতে কম্পিউটার সাইন্স, অর্থনীতি, বিবিএ, এমবিএ, লোক প্রশাসন লাগবে।
অর্থাৎ দুনিয়া চালাতে যা প্রয়োজন একটা মাদরাসায় শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই দেশ চালাবার লিডারশিপ গড়ে উঠছে না। এই দোষ তো তাদেরই। তারা করে কী একটা দাওরা ডিগ্রি দেয়। তারা কিছু আরবি শিখায়, কিছুটা হাদীস শিখায়। তাদের উচিত ছিল আমি একটা প্রবন্ধে প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে, আপনারা যদি রোল প্লে করতে চান, তাহলে আপনাদের নতুন আরো দাওরা খুলতে হবে। জামেয়া বা ইউনিভার্সিটি মানে হচ্ছে এখানে একটা ডিগ্রি দেয়া হয় না। এখানে অনেকগুলো বিষয় পড়ানো হয়। আমেরিকার হার্ভার্ডে একশ' বিষয় পড়ানো হয়। সেখানে কওমি মাদরাসায় অন্তত আপনারা অর্থনীতিটা ঢুকিয়ে দিন। দুনিয়ার সাথে সংগতি রেখে যদি বিষয়গুলোকে পুনবিন্যাস করা না হয় তাহলে লিডারশিপ উঠে আসবে না। আমাদের একটা বিষয়ে চিন্তা করতে হবে যে, কোন বিষয়ে আপগ্রেড হচ্ছে। যেমন- অর্থনীতির বইটি যখন পড়ি তখন একশ' বছর আগের বইটা পড়ি না, কারেন্ট বইটা পড়ি? সুতরাং আল্লাহর কালাম ছাড়া, রাসুলের কথা ছাড়া যে কোন বিষয় এর বইগুলো পড়তে হবে। আমাদের শেষ বইগুলো আনতে হবে। আগের তফসিরগুলো কোর্সে আনা উচিত রেফারেন্স হিসাবে। কিন্তু পড়তে হবে কারেন্ট তফসির। তেমনি ফিকার ক্ষেত্রে আজকের যে কাজগুলো হয়েছে সেগুলো আনতে হবে মেইন হিসেবে। আর আগের গুলো নিয়ে যেতে হবে রেফারেন্স হিসাবে। কিন্তু এটা তারা করছে না। ইংরেজি শিক্ষার প্রতিও তাদের একটা অনীহা রয়েছে। এটা বাস্তব যে ইংরেজি হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ল্যাংগুয়েজ। তাই এ ভাষা শিখতে সব চাইতে লাভ বেশি আমাদের। ওরা তো চায় আমরা ইংরেজি না শিখি । আমরা ইংরেজি শিখবো এই জন্য যে, ইংরেজি শিখে আমরা তাদেরই পরাজিত করবো। কিন্তু তারা ইংরেজি শিখবেন না। শুধু ইংরেজি বলি কেন? বাংলাও ভাল করে শিখেন না। তারা ইন্টারনেট জানে না। কম্পিউটার সাইন্স বলতে তারা বুঝে টাইপ করা। সব চাইতে বড় কথা হচ্ছে, তাদের অনেকে মনে করেন সবাই তাদের কাছে যাবে। ঠিক তারা রাসূলুল্লাহর (সা) উল্টা পথ ধরেছেন। রাসূল (সা) সবার কাছে যেতেন। রাসূল (সা) মক্কাতে ঘুরতেনই, তায়েফেও গিয়েছেন, লোকদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন। অথচ আমাদের অনেক আলেম তা করেন না। যা বলছিলাম, আমাদের আলেমদের কোনদিন দেখিনি তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচারদের এ্যাপ্রোচ করছেন।
তাদের তো সেই সুযোগ থাকতে হবে।
তারা যাচ্ছে না কেন? তাদের তো সুযোগ আদায় করে আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি তাদের বন্ধু-বান্ধব নেই।
তারা তো বলেছে অন্য কথা। একটা সময় সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে এক রকম শিক্ষাব্যবস্থা ছিল। ব্রিটিশরা আসার পরই শিক্ষাব্যবস্থা দুটো হয়ে গেল। ব্রিটিশরা চাইলো ইসলাম শেষ হয়ে যাক। তখন অস্তিত্ব রক্ষার্থে কওমি মাদরাসার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এই প্রজন্ম মাদরাসা শিক্ষাকে ঠিক মেনে নিচ্ছে না।
এটা ঠিক এক সময় অবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থা ছিল, তবে এটা হতে হবে। আমি আবার বলছি এটাই হতে হবে কিন্তু যতদিন না হচ্ছে- আমি যেটা বললাম সেভাবে ঐ শিক্ষাকে আপগ্রেড করতে হবে। আমি একটা বাড়ি করলাম। এটাকে কি প্লাস্টার করবো না? চুম-কাম করবো না। যতক্ষণ না শিক্ষাব্যবস্থা এক হচ্ছে ততক্ষণ তো আমার ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা এক হওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। আমার মনে হয় অনেক কঠিন। এটা নির্ভর করে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ওপর। ততদিন সিস্টেমকে আপগ্রেড করছে না?
এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তো সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। কওমি মাদরাসাগুলোকে তো করছে না।
আমাদের জানতে হবে সরকারের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না।
এই যে আলেমিনদের অনগ্রসরতার কারণে কী বলে আপনি মনে করেন?
আমাদের মনে হয়, তারা আধুনিক সভ্যতার সমস্যাগুলো জানতে চেষ্টা করছে না। আপনি কী মনে করেন তারা অহঙ্কারী বলে এগিয়ে আসছে না?
এই রকম অহঙ্কার আছে কিনা আমি জানি না, হয়তো বা নেই। যদি থেকে থাকে তবে অন্যান্য। কারণ ইসলামে অহঙ্কারের কোন জায়গা নেই। আমরা হাদীসও জানি, যার দিলে একবিন্দু অহঙ্কার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আমার মনে হয় আধুনিক বিষয় নিয়ে তাঁদের লেখাপড়া একেবারেই কম। তারা যদি চিন্তা-ভাবনা করতেন তাহলে ভাবতেন যে আধুনিক দুনিয়া কী ভাবছে, সমস্যাগুলো কোথায় আজকে আমাকে কি মোকাবেলা করতে হবে। আজকে তো আমি মোতাজিলা আশারিয়া মোকাবেলা করছি না, আজকে আমি মোকাবেলা করছি মার্ক্স, হেগেল, কান্ট অথচ তাদের মাথায় এগুলো আসছে না। সুতরাং আমার মনে হয় এটা একট বড় কাজ হবে যদি আলেমেদিনরা এ দেশে মাদরাসা শিক্ষাকে আপগ্রেড করেন।
শিক্ষাব্যবস্থার কথাই যখন আসলো তখন একটা প্রশ্ন-একটা দেশে একসাথে অনেকগুলো শিক্ষাব্যবস্থা চললে দেশের কল্যাণ কতুটুক হয়?
এই বিষয়ে আমার পুরনো জ্ঞান নেই। কিন্তু আমার মনে হয় এটা একেবারে অসম্ভব নয়। দুই-তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা থাকতে পারে। যেম হোমিওপ্যাথি শিক্ষা ব্যবস্থা, এলোপ্যাথিক মেডিক্যাল সিস্টেম ইউরোপের কোন কোন দেশে আলাদা আলাদাভাবে পড়ানো হয় ৷
ওটা ঠিক আছে । আমি বলতে চাচ্ছি আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা দূরত্বটা কি বাড়িয়ে দিচ্ছে না? ইংরেজি শিক্ষিতরা মাদরাসার ছেলেদের বলছে কাটমোল্লা। আবার মাদরাসার ছেলেরা বলেছে জাহান্নামের লাঠি। এই যে একটা দূরত্ব। এটাকে কি পরিহার কর যায় না?
আপনারা কথা ঠিক । কিন্তু আমি বলছি শিক্ষাব্যবস্থা দু-তিন রকম হতে পারে না এমনটি নয় । যদি প্রত্যেকটি সঠিক হয় তাহলে অসুবিধা নেই এবং দূর করা কঠিন, যেটা আমরা আগেই আলোচনা করছি। এটা দূর করতে সময় লাগবে। আমি এক হওয়ার পক্ষে । শিক্ষাব্যবস্থাকে আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির আদলে তৈরি করবার জন্য অনেক বড় আলেম দরকার। সেই আলেম কোথায়? আমাদের দেশের আলেমরা কি গত ৫০ বছরে ৫টি অগ্রসর বই লিখেছেন? মাওলানা আকরম খাঁর ‘মোস্তফা চরিত'-এর মত কয়টা বই রচিত হয়েছে? যেমন ইউসুফ আল কারযাবীর ‘যাকাতের বিধান-এর মত কয়টা বই এদেশে রচিত হয়েছে? মোহাম্মদ আল-গাজ্জালীর ‘আকিদাতুল ইসলাম' এর মত কয়টা বই এদেশে রচিত হয়েছে? আমি তো মাওলানা আকরম খাঁর ‘মোফা রচিত’ ছাড়া কোন বই দেখছি না। আমার ওপর আলেম সমাজ রাগ করতে পারেন। কিন্তু কেন ? এই পর্যায়ের বই আল-আজহার থেকে, ইউসুফ আল কারযাবী, মোহাম্মদ আল গাজ্জালী, সাইয়েদ কুতুব, হাসানুল বান্না বের হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে বের হচ্ছে না কেন? আমাদের দেশে আলামা ইকবাল তৈরি হচ্ছে না কেন? মাওলানা মওদূদী তৈরি হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্ন তো তাদেরকে বুঝাতে হবে।
স্বীকার করতেই হবে সৌদি আরব শিক্ষার ক্ষেত্রে এডুকেশন সিস্টেমটাকে খুব নিকটবর্তী নিয়ে এসেছে। এটা খুব বড় এ্যাচিবমেন্ট। যে শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামকে খুব নিকটবর্তী নিয়ে আসা হয়েছে এটা হলো সৌদি আরব। অবাক হবেন পাকিস্তানের স্কুল কারিকুলামে ইসলামের স্থান খুব ভাল। যদিও সেখানে নানা ধরনের সমস্যা আছে। কিন্তু স্কুল কারিকুলাম অনেকাংশে ইসলামাইজ হয়ে গেছে। মিসরের ইসলামি কারিকুলাম অনেকাংশে ইসলামি, মালয়েশিয়া একই অবস্থা। আমরা হতভাগ্য দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে একটি যেখানে আমরা সেটা করতে পারিনি, বাংলাদেশের সরকারগুলো ইসলামী ছিল না, এখনও নেই। অতএব দাবি করে আর লাভ কী? ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি বেশি করছে, এসব দিকের কোন গভীর কাজ তারা করতে পারেনি।
কোন একটা পার্টিও কি করেনি?
আমার মনে হয় না যে খুব গভীর কাজ করছে। কাজ করেছে যেমন— আমি একাট পার্টির কথা জানি, যারা নাকি ৭-৮শ স্কুল চালায়। কিন্তু তারা সরকারি কারিকুলাম ফলো করে। এতে তাদের স্বাতন্ত্র্য কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠেনি। এখানে তারা আল- আজহার এর স্কুল সিস্টেমকে অনুসরণ করতে পারতো। আল-আজহার এর ১ হাজার স্কুল রয়েছে।
এছাড়া তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষার অগ্রগতির জন্য নিম্নলিখিত প্রস্তাব পেশ করেন
এ প্রবন্ধে আমি যে সব মাদরাসা কওমি মাদরাসা বলে পরিচিত তাদের মান উন্নয়নের জন্য কিছু প্রস্তাব রাখার চেষ্টা করব। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পদ্ধতির মাদরাসা বিশেষ করে এ উপমহাদেশে ছড়িয়ে যায়। তারপর থেকে এ পদ্ধতির মাদরাসাসমূহের ব্যাপক কোন সংস্কার এখন পর্যন্ত হয়নি। এ পদ্ধতির মাদরাসা থেকে যারা পাস করেন তারা সাধারণত অন্যান্য মাদরাসায় কাজ করেন বা মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশের শিল্প-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, প্রশাসন-এ তাদের সাধারণত কোন স্থান হয় না, হলেও তা খুবই কম ।
কওমি মাদরাসাসমূহের পরিচালকগণ তাদের মাদরাসা কোর্সের কী ধরনের সংশোধনের চিন্তা করছেন, তা আমার জানা নাই। এ ধরনের কোন রিপোর্টও আছে কিনা তাও আমি অবগত নই। যদি থেকে থাকে তাহলে তার ওপর পদক্ষেপ গ্রহণ কর সংগত ।
এ নিবন্ধে আমি কওমি মাদরাসার ব্যবস্থাকে ইসলামের জন্য আরো কল্যাণকর করার লক্ষ্যে কিছু পরামর্শ দিচ্ছি। ইসলামের স্বার্থেই এটা প্রয়োজন যে, মাদরাসা শিক্ষিত ছাত্ররা যেন সমাজের সর্বস্তরের প্রয়োজন মিটাতে পারেন। তারা যেন ইমাম, মাদরাসা শিক্ষক ছাড়াও ব্যাংকার, প্রশাসক ও অর্থনীতিবিদ হতে পারেন। অধিকাংশ বড় মাদরাসাকে জামেয়া বলা হয়। জামেয়া অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় বা University জামেয়া বা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাৎপর্য হচ্ছে যে, এখানে সব প্রয়োজনীয় বিষয় বা Subject শিক্ষা দেয়া হবে। সব ছাত্র সব কিছু শিখবে তা নয়, প্রতিটি Subject বা বিষয় কিছু ছাত্র শিখবে। এ প্রেক্ষিতে বর্তমানে যে দাওরাহ ডিগ্রিসমূহ আছে তার সঙ্গে যদি আমরা আর মাত্র দু'টি দাওরাহ কোর্স সব জামেয়ায় খুলতে পারি তাহলে মাদরাসার ছাত্ররা যে কোন স্থানে প্রশাসক হতে পারবে এবং সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হতে পারবে। বিষয় দু'টি হচ্ছে অর্থনীতি (ইকতিসাদ) এবং গণপ্রশাসন বা Public Administration মাদরাসায় বর্তমানে ৪টি বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। তাফসির, হাদিস, ফিকাহ এবং আদাব। যদিও সব বিষয়ে দাওয়াহ খোলা সম্ভব নয়, কিন্তু দু'টি নতুন বিষয়ে দাওরাহ খোলা খুবই সম্ভব। এর ফলে সারাদেশে প্রশাসনে এ সব ছাত্ররা যেতে পারবে। এবং গোটা জাতির ইসলামীকরণে তারা ভূমিকা রাখতে পারবে। ইত্যোমধ্যে Islamic Economics বা ইসলামি অর্থনীতি একটি নতুন বিজ্ঞান-এ পরিণত হয়েছে। Public Administration -এ অনেক কাজ হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে আমি কওমি মাদরাসাসমূহে দু'টি নতুন দাওরাহ খোলার প্রস্তাব করছি। এর ফলে নিচের ক্লাসমূহে কোর্স পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন করতে হবে। কওমি মাদরাসায় একাদশ/দ্বাদশ ক্লাসে অর্থনীতি ও Public Administration, এর দুটি পত্র (Paper) যোগ করতে হবে। যে কেউ যে কোন একটি গ্রহণ করতে পারবে। মাদরাসা সিস্টেমের বিএ পর্যায়ে অর্থনীতি/পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন এর দুটি করে পত্র থাকবে, যা ঐচ্ছিক হবে। দুটি বিষয় একত্রে নেয়া যাবে না। যারা এ পর্যায়ে অর্থনীতি বা পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন নেবেন কেবল তারাই দাওরাহ পর্যায়ে এ সব বিষয়ে পড়তে পারবেন।
আর যে কয়টি পরিবর্তন করা প্রয়োজন তা হচ্ছে আরবি ভাষা শিক্ষা আরো শক্তিশালী করা দরকার।
বাংলা ভাষা শিক্ষাকে পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। যাতে মাদরাসার ছাত্ররা এ দেশে প্রখ্যাত লেখক হতে পারে। ইংরেজি ভাষাতেও উপযুক্তভাবে সব পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তাহলে তারা কেবল জাতীয় পর্যায়ে নয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ও ইসলামের খেদমত করতে পারবেন বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। এছাড়া খুব ভাল হবে যদি তাদের তাফসিরে, হাদিস এবং ফিকাহর দাওরাহ কোর্সে আধুনিককালে যে সকল তফসির, হাদিস ও ফিকাহর ওপর যে সকল মহৎ কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তাদের সকল কোর্স রিভিউ বা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। পুরনো কিছু বই বাদ দিয়ে নতুন কিছু বই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে তাদের কোর্সসমূহ এ যুগে ইসলাম ও সমাজের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
আমাদের মাদরাসাসমূহে যে আরবি শিখানো হয় তাতে তারা আরবিতে দক্ষ হন না, তারা আরবিতে বলতে লিখতে পুরাপুরি সক্ষম হন না। আরবি শিখার আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে: গালিব হাসান
সূত্র: মাদরাসা শিক্ষা স্মারক
লেখক: সাবেক সচিব এবং চেয়ারম্যান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ