ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। এডিস মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে কেউ তখনই আক্রান্ত হন, যখন মশা সংক্রমিত কোনো ব্যক্তিকে কামড় দেয় তারপর ভাইরাস বহন করার সময় একজন অ-সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয়। সাধারণ জ্বর দিয়ে শুরু হয়ে ঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে ধীরে ধীরে দেখা যায় হেমোকনসেনট্রেশনের মত মারাত্মক শারীরিক জটিলতা যা মানুষকে ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে। ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী মিলিমিটার স্কেলের একটি মশকীই সময়ে সময়ে হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী দানব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ডেঙ্গুর ভয়াবহতার বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে। চলতি মাসের এই অল্প কিছুদিনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছুই ছুই আর প্রিয়জনকে কাদিয়ে বিদায় নিয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি। এর পাশাপাশি প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। প্লাটিলেট কমে যাওয়ার ফলে রোগি এবং তাদের স্বজনেরা বেশ আতঙ্কে সময় পার করছেন, রোগীর পরিমান এত বেশিযে রক্ত দাতাদের পরিমান কমে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু প্রতিকারে আগে শনাক্তকরণ প্রয়োজন। সেজন্য রয়েছে বেশকিছু ডাক্তারি পরীক্ষা। লক্ষণ বুঝে সময়মত নেয়া পদক্ষেপই প্রাণহানির সম্ভাবনা কমাতে পারে। চলুন ডেঙ্গুর কিছু প্রচলিত লক্ষণ জেনে নেয়া যাক-
-তীব্র জ্বর
-ঘাড়,পিঠ ও মাংসপেশিতে ব্যথা
-শরীরে রযাশ ওঠা
-অস্থিসন্ধি এবং হাড়ে ব্যথা
-খাবারে অরুচি
-কোষ্ঠকাঠিন্য
-চোখের আশেপাশে ব্যথা
এসব লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুতই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন ও সংক্রমণ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। এসময় রোগীকে প্রচুর পরিমান পানি,ফলের রস ও তরল খাবার দিতে হবে। জ্বর কমাতে মাথায় পানি ঢালা,ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেয়া যেতে পারে। শিশু,বয়োবৃদ্ধ ও গর্ভবতী মায়েদের প্রতি দিতে হবে বিশেষ নজর। সর্বোপরি রোগীর শারীরিক অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা দিতে হবে।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবসময়ই উত্তম। ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধান হাতিয়ারই হচ্ছে গণসচেতনতা। তাই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যেতে হবে ব্যক্তি পর্যায় থেকে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানসহ সকলকেই। এডিস মশা নিধন ও এদের বংশ বিস্তার রোধে সরকারি বেসরকারিভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একটি মজার তথ্য হল এডিস মশা কামড়ায় দিনের বেলায়। এক্ষেত্রে মশারি টানিয়ে ঘুমানো ও মশার কয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। অতীতে এডিস মশা ময়লা পানিতে না জন্মালেও বর্তমানে পরিষ্কার এবং ময়লা উভয় পানিতেই এই মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। যা এডিস মশা নিধনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নীতিনির্ধারকদের কপালে নতুন করে ভাজ ফেলেছে। তাই আমাদের আশেপাশে জমে থাকা সকল পানির উৎস ধ্বংস করতে হবে। বসতি এলাকায় একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পতঙ্গনাশক স্প্রে ব্যবহার হতে পারে একটি উত্তম প্রতিরোধ।
সর্বোপরি, মহান আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সাহায্য করেন। আতংকিত না হয়ে ধৈর্যের সাথে সচেতনভাবে ডেঙ্গুর মোকাবিলা করতে হবে। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন "আর আমি কুরআন নাজিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত,কিন্তু জালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়"।(সূরা বনী ইসরাইল আয়াত ৮২)। তাই প্রতিকূল এই সময়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সাহায্য চাইতে হবে। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে।