মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪

গুম করে পঙ্গু করে দেওয়া ছাত্রশিবিরের ৪ জনশক্তির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে অভিযোগ

ছাত্রশিবিরের জনশক্তিদের মধ্যে যাদেরকে বিভিন্ন সময়ে গুম করার কয়েকদিন পর গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছিল তাদের মধ্যে ৪ জনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছে ছাত্রশিবির।

পতিত স্বৈরচার সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে গুমকৃত অবস্থায় গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার চেয়ে আজ ৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। নির্যাতনের শিকার মো. আবুজর গিফারী, ওমর আলী, মো. রুহুল আমিন এবং ইস্রাফিল হোসেন এ অভিযোগ দায়ের করেন। এসময় ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান ও সহকারী আইন সম্পাদক আমানুল্লাহ আল জিহাদী (আদীব) উপস্থিত ছিলেন।

আবুজর গিফারী ও ওমর আলীর ঘটনা

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, "২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন জয়পুরহাট জেলা সভাপতি আবুজর গিফারী ও সেক্রটারি ওমর আলী সংগঠনের কাজে ঢাকায় আসলে তাদেরকে আব্দুল্লাহপুর থেকে সাদা পোশাকে র‍যাব পরিচয়ে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে উত্তরা র‍যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রায় ১ সপ্তাহ তাদের ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। এরপরে সেখান থেকে তাদেরকে রাজশাহী এবং পরবর্তীতে লালমনিরহাটের পাঁচবিবি থানায় নিয়ে চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। ১৭ ডিসেম্বর তাদের সঙ্গে বোমা ও অস্ত্র দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জয়পুরহাট র‍যাবের তৎকালীন মিডিয়া উয়িং। একইদিন দুপুরে পাঁচবিবি থানার নিকট তাদেরকে অস্ত্র মামলা দিয়ে হস্তান্তর করা হয়। অতঃপর সেখানে রাত ২.০০টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশ নির্যাতন চালানোর পর রাত আনুমানিক ৩.০০টার দিকে তাদেরকে হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় আওলায় ইউনিয়নের একটি পরিত্যাক্ত জায়গায়। সেখানে পুলিশ দুজনের হাঁটুতে গুলি করে তাদের পা ঝাঁঝরা করে দেয়। তাদেরকে স্থানীয় হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে রেফার করে দেয়। সেখানেও তাদের চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকার পঙ্গু হসপিটালে রেফার করে দেয়। এরপরে অপারেশন করে হ্রদরোগ ইন্সটিটিউটে রেফার করা হয়। ২ জনেরই প্রচুর রক্তক্ষরণে মাংস ৭৫ শতাংশ পচে যাওয়ায় ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ তে দুজনের অনুমতি সাপেক্ষে ২টি পা কেটে ফেলা হয়। হসপিটাল থেকে রিলিজ হলে ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়পুরহাট কারাগারে পাঠানো হয়।

রুহুল আমিন এবং ইস্রাফিলের ঘটনা

অন্যদিকে, ২০১৬ সালের ৩ আগষ্ট তৎকালীন যশোর জেলা পশ্চিমের চৌগাছা উপজেলার সাহিত্য সম্পাদক রুহুল আমিন এবং থানা সেক্রেটারি ইস্রাফিলকে সাংগঠনিক কাজ শেষ করে বাড়ি যাওয়ার পথে চৌগাছা থানা আটক করে। ৪ আগষ্ট তাদেরকে ডিবিতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গভীর রাতে কন্দলিতলার নির্জন মাঠে নিয়ে দু'জনের হাঁটুতে পুলিশ গুলি করে পা ঝাঁঝরা করে দেয়। সেখান থেকে তাদেরকে উপজেলা সরকারি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তাদের রেফার করা হয় যশোর সদর হসপিটালে। সেখানে ২ দিন চিকিৎসার পর কোন উন্নতি না হওয়ায় তাদেরকে ঢাকার পঙ্গু হসপিটালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভর্তি হওয়ার ৭ দিন পর পায়ে পচন ধরলে সকলের সিদ্ধান্তক্রমে পা কেটে ফেলা হয়। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে অপপ্রচার করে যে বন্দুক যুদ্ধে ২ শিবির নেতা আহত। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দিয়ে ২ মাস চিকিৎসার পর পাঠিয়ে দেওয়া হয় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে।

ট্রাইবুনালে অভিযোগ দায়ের শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রেস ব্রিফিং করেন ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান।