শহীদ বোরহান উদ্দিন

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৮ অক্টোবর ১৯৯৩ | ৬১

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

দক্ষিণ চট্টগ্রামের পরিচিত একটি থানা সাতকানিয়া। ব্যবসা বাণিজ্যে চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং বিদেশের মাঝেও রয়েছে সাতকানিয়ার সুনাম। শহীদ বোরহান উদ্দিন ভাইয়ের শাহাদাতের প্রেরণা নিয়ে আজ সাতকানিয়া ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসযাত্রায় এগিয়ে চলেছে ক্রমাগত।

প্রাথমিক পরিচিতি
সাতকানিয়া থানা ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট্ট একটি নদী। নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে উত্তর রামপুরা গ্রামের মরহুম মোজাম্মেল হক ও মিসেস সুফিয়া বেগমের ৬ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে ৪র্থ ছেলেটি একটু ব্যতিক্রম ধরণের। চালচলনে, আচার ব্যবহারে অন্যদের তুলনায় কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করেন সবাই। তার আচরণে ও স্বভাব অনেক সন্তানের মাঝেও মা বাবা ভাইয়ের কাছে আলাদাভাবে পরিচিতি। লেখাপড়াতেও সুনাম অর্জন করেছিলেন।

শিক্ষাজীবন
শহীদ বোরহান উদ্দিন ১৯৮৩ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১ম বিভাগ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১ম বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। এবং পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন।

শাহাদাতের ঘটনা
১৯৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর তেমনি একটি দিন যেদিন একজন আরেক জনকে দেখতে গিয়েছিলেন। শহীদ বোরহান সেদিন মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চট্টগ্রামে শহরে এসেছিলেন তার ভাইয়ের পাসপোর্ট নবায়ণ করার জন্যে। পাসপোর্ট অফিস মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেশি দূরে নয়। তার ছোট বেলার প্রিয় বন্ধু ডা. মিজান কে না দেখলে কি হয়! তাই এক নজর দেখার জন্য ছুটে যান ডা. মিজান ভাইয়ের কাছে। ডা. মিজান বোরহানকে পেয়ে খুব খুশি তাই তাকে নিয়ে একটু চাপান একটু আড্ডা বা পত্রিকা পড়ার জন্য বসলেন ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়ায় আর একটু পরেই যে রচিত হবে ইতিহাসের কালো অধ্যায় তা কি তারা জানত?

তারা তখনও জানত না যে আর মায়ের হাসিমাখা মুখখানি দেখতে পারবে না। বোরহান ফিরতে পারবে না তার ভাইয়ের পাসপোর্ট নিয়ে। হঠাৎ বাইরে প্রচন্ড শব্দে হকচকিত হয়ে গেটের দিকে এগুলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘাতকের বুলেট তাদের দিকে তাক করে আছে। অনেক অনুরোধ করলেন, নিজেদের নিরপরাধ বলে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? নির্বিচারে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে তারা। অনুরোধ করায় তাদের লক্ষ্য করেই আরো বেশি করে গুলি চালালো। মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে লুটিয়ে পড়ল ৩টি তাজা প্রাণ শহীদ বোরহান, মিজান, ও ফরিদ। আহত হয় অনেকেই। রক্তে রঞ্জিত হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ক্যাফেটেরিয়া। দুনিয়ার অনেক মায়াাজাল ছিন্ন করে সকলকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলে জান্নাতুল ফেরদৌসে।

প্রকৃত বন্ধুর এক অনন্য দৃষ্টান্ত
ছোটবেলা থেকে বোরহান তার পিতামাতার সাথে বন্ধুর সরকারি কলোনিীতে থাকতেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় পরিচয় হয় কালজয়ী এক মানবপ্রেমিক শহীদ ডা. মিজানের সাথে। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত কতদিন কতরাত কেটেছে একজন আর একজনের সুখ দুঃখের সাথী হয়ে। একই সাথে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে দুই জনেই। এইচএসসি পাস করার পর মিজান ভর্তি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে আর বোরহান ভর্তি হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পরিবারে অনেকেই ধারণা করেছিল এবার তাদের সম্পর্কে ভাটা পড়বে। কিন্তু আগের মতই অটুট ছিল তাদের বন্ধুত্ব যার প্রমাণ ১৯৯৩ সালের ১৮ই অক্টোবর বোরহান তার ভাই মামুন এর পাসপোর্ট নবায়ন করতে এসে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে তার বন্ধু মিজান এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। একসাথেই গুণ্ডাদের গুলিতে শহীদ হন বোরহান ডা. মিজান ও বোরহান। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন জান্নাতে।

জানাযা ও দাফন
কয়েকবার জানাযার নামাজ পড়া হয় তারপর তাকে সাতকানিয়া থানা উত্তর বামপুরায় নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

শহীদ বোরহান উদ্দিন আজ আমাদের প্রেরণার মিনার হয়ে আছেন। তার জীবনের সর্বোচ্চ মূলবান জীবন বিলিয়ে দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য প্রেরণার ভিত্তি রচনা করেছেন। তার বাবা আজও সন্তান হত্যাকারীদের বিচার চান কিন্তু বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। তাই তিনি বিচারের ভার মহান রবের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। প্রতীক্ষায় আছেন মহান রব একদিন তাদের প্রিয় সন্তান হত্যার বিচার করবেনই।

একনজরে শহীদ মু. বোরহান উদ্দিন
নাম : মু. বোরহান উদ্দিন
পিতার নাম : মরহুম মোজাম্মেল হোসেন
মাতার নাম : মোসাম্মাৎ সুফিয়া বেগম
সাংগঠনিক মান : কর্মী
শিক্ষাজীবন : এসএসসি (১৯৮৩) বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চবিদ্যালয় ১ম বিভাগ, এইচএসসি (১৯৮৫) চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ১ম বিভাগ, সর্বশেষ- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আহত হওয়ার স্থান : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়া।
শহীদ হওয়ার স্থান : ঐ
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৮.১০.১৯৯৩ ইং
যে শাখার শহীদ : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- উত্তর রামপুরা, থানা- সাতকানিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম
ভাইবোন : ৯ জনের মধ্যে তিনি ৪র্থ।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ বোরহান উদ্দিন

পিতা

মোজাম্মেল হোসেন

মাতা

মোসাম্মৎ সুফিয়া বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৯ জন

স্থায়ী ঠিকানা

উত্তর রামপুরা, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শাহাদাতের স্থান

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ