শহীদ আব্দুস সালাম আজাদ

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ০৭ নভেম্বর ১৯৮৮ | ২৩

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

মানুষের ইতিহাস; সত্য আর মিথ্যার লড়াইয়ের ইতিহাস। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই লড়াই অনিবার্য। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই সত্য আর মিথ্যার ফারাক হয়ে থাকে। মিথ্যার ধারক-বাহকরা এর মধ্য দিয়েই পরাজয় বরণ করে। আর ঈমানদার মানুষ এর মধ্যে হয় বিজয়ের নাগাল পায় নয় নিজেদের দুনিয়াবী জীবন বিলিয়ে দিয়ে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেন, মহান প্রভুর দরবারে হাজির হন। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশের ময়দানের এক সাহসী মুজাহিদ, শাহাদাতের মর্যাদা প্রাপ্তদের একজন শহীদ আব্দুস সালাম আজাদ।

জন্ম-পরিচয়
১৯৭০ সালের ১ আগস্ট। সুবহে সাদিকের মধ্য দিয়ে দিগদিগন্তে আজানের সুমধুর ধ্বনি ছড়িয়ে পড়তে লাগল। ঠিক সেই সময়ে জগৎকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ আব্দুস সালাম আজাদ। সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সড়কের পাড় গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম আমেনা খাতুন, বাবা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম।

শিক্ষাজীবন
পলাশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন শহীদ। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে পলাশ উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯৮৬ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করে গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৮৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন । শাহাদাতকালে তিনি এইচএসসি ফলপ্রার্থী ছিলেন।

সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন
স্কুলজীবনেই সংগঠনে যোগ দেন শহীদ। সংগঠনে যোগদানের পর থেকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাঁর মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত হতে থাকে। ১৯৮৭ সালে কলেজ ছাত্র-সংসদ নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলে সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। শাহাদাতের পূর্ব পর্যন্ত তিনি সংগঠনের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিলেন।

শাহাদাত
উদীয়মান নেতা আব্দুস সালাম আজাদের উত্থানকে ভিন্ন মতাদর্শের সন্ত্রাসী ছাত্রসংগঠনগুলো মেনে নিতে পারেনি। তাঁকে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে তারা। দিনটি ছিল ১৯৮৮ সালের ৭ নভেম্বর। গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজের পাশে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতৃত্বে গঠিত ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ নামধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে তাঁকে। মৃত ভেবে তারা তাঁকে একটি খাদে ফেলে চলে যায়। এক ট্রাক চালক আজাদকে উদ্ধার করে পৌঁছে দেন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হায়েনাদের আঘাতে নির্মমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত আজাদকে বেশিক্ষণ হাসপাতালে থাকতে হয়নি। সেখানে বিকেল সাড়ে তিনটায় তিনি শাহাদাতবরণ করেন।

শহীদের ব্যক্তিজীবন
ব্যক্তিজীবনে তিনি অত্যন্ত সৎ, সাহসী, মজবুত ঈমানের অধিকারী, ব্যবহারে অমায়িক, ধৈর্যশীল, মেধাবী ও সদা হাস্যোজ্জ্বল এবং একজন সম্ভাবনাময় তরুণ ছিলেন। তিনি শহীদ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন, চলে গেছেন চির সুখের ঠিকানা জান্নাতে। আব্দুস সালাম আজাদকে হারিয়ে আমরা হারালাম এক সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে। হারালাম একজন দায়ীকে, যিনি মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে চলার জন্য সর্বদা আহ্বান জানাতেন। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তরুণসমাজ এগিয়ে এলেই তাঁর জীবনদান সার্থক হবে।

একনজরে শহীদ আব্দুস সালাম আজাদ
নাম : মুহাম্মদ আব্দুস সালাম আজাদ
মায়ের নাম : মোসাম্মৎ আমেনা খাতুন
বাবার নাম : মুহাম্মদ আব্দুর রহমান
সাংগঠনিক মান : কর্মী
পড়াশোনা : এইচএসসি
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি মহাবিদ্যালয়
আহত হওয়ার স্থান : মহাবিদ্যালয়ের পাশে
শহীদ হওয়ার স্থান : সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
আঘাতের ধরন : পুরো শরীরে জখম
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল
শাহাদাতের তারিখ : ৭ নভেম্বর, ১৯৮৮
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- সড়কের পাড়, ডাক- মেরুয়াখলা, থানা- বিশ্বম্ভরপুর
জেলা- সুনামগঞ্জ

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আব্দুস সালাম আজাদ

পিতা

মুহাম্মদ আব্দুর রহমান

মাতা

মোসাম্মৎ আমেনা খাতুন

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম: সড়কের পাড়, ডাক: মেরুয়াখলা, থানা: বিশ্বম্ভরপুর, জেলা: জামালপুর

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজ

শাহাদাতের স্থান

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল